উদ্বোধন-এ থাকার সময় একটি চিঠি এল। লিখেছেন এক প্রবাসী। আদি বাড়ি তাঁদের কলকাতায়। মধ্যবয়সি মানুষ। তাঁর বাবার সদ্য মৃত্যু হয়েছে। শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়াকর্মের তাগিদে দিন কয়েকের জন্য আসা। বাবা ছিলেন উদ্বোধন পত্রিকার পোকা। বাবার ধর্মীয় বইপত্র বিশেষত উদ্বোধন পড়ার তীব্র অনুরাগকে আধুনিক উচ্চশিক্ষিত ছেলে চিরদিন ‘বাতিক’ বলে মনে করতেন। বাবার ঘর গোছাতে গোছাতে উদ্বোধন-এর বহু সংখ্যা একত্রিত করছেন পুরানো কাগজপত্রের সঙ্গে বেচে দেবেন বলে।
স্বামী বিবেকানন্দ ভারতবর্ষের জনসাধারণকে ‘একটা sleeping leviathan – এর সঙ্গে তুলনা করে তাঁর ‘মিশন’কে প্রকাশ করে বলেছিলেন: “আমার এখন একমাত্র ইচ্ছা, দেশটাকে জাগিয়ে তুলি—মহাবীর যেন নিজের শক্তিমত্তায় অনাস্থাপর হয়ে ঘুমুচ্ছে—সাড়া নেই—শব্দ নেই। সনাতন ধর্মভাবে একে কোনরূপে জাগাতে পারলে বুঝব ঠাকুরের ও আমাদের আসা সার্থক হলো৷”১ এই উদ্দেশ্যে তাঁর ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ প্রতিষ্ঠা ও সেবাকাজের পত্তন।ত
ভারতের প্রাচীন ইতিবৃত্ত—এক দেবপ্রতিম জাতির অলৌকিক উদ্যম, বিচিত্র চেষ্টা, অসীম উৎসাহ, অপ্রতিহত শক্তিসংঘাত ও সর্ব্বাপেক্ষা অতি গভীর চিন্তাশীলতায় পরিপূর্ণ।
স্বামীজীর সঙ্গে দেখা হওয়ার স্মরণীয় দিনটির প্রতিটি মুহূর্ত আমার এখনো মনে আছে। গত আটচল্লিশ বছর ধরে এটি আমার জীবনের ভিত্তি।
দক্ষিণেশ্বর ও বেলুড় মঠের মহিমা প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীমা একবার বলেছিলেন : “যাঁর জন্য কাশী যাওয়া, তিনি দক্ষিণেশ্বরে ও বেলুড়ে (মঠে) আছেন।”১০৭ বেলুড় মঠ এযুগের ‘মহাতীর্থ’—মন্তব্য করেছিলেন স্বামী শিবানন্দজী।
শ্রীশ্রীমায়ের কথা গ্রন্থে পাওয়া যায়, স্বামী অরূপানন্দকে মা বলছেন : “জ্ঞান হলে মানুষ দেখে ঠাকুর-ঠুকুর সবই মায়া—কালে আসছে, যাচ্ছে।” মা কত সাধারণভাবে কথাটি বলেছেন, অথচ সমস্ত অদ্বৈত-বেদান্তই এর মধ্যে লুকিয়ে আছে! আলোচনার সুবিধার জন্য আমরা কয়েকটি ধাপে মায়ের কথাটি বিশ্লেষণ করব।
মা তাঁহার অতি কর্মব্যস্ত জীবনের মাঝেও নিরাশ্রয় রোগীর আশ্রয় হইয়া উঠিয়াছিলেন। জয়রামবাটীতে মায়ের বাড়িতে গোরু-বাছুরের দেখভাল করিবার জন্য গোবিন্দ নামে দশ-এগারো বৎসরের একটি বালক ছিল। একসময় তাহার সারা গায়ে খোস দেখা দিল। যন্ত্রণায় ঘুমাইতে না পারিয়া সারা রাত্রি কাঁদিল। মা পরদিন সকালে নিজহাতে নিম-হলুদ বাটিলেন। শরীরের কোথায় কীভাবে লাগাইতে হইবে তাহা গোবিন্দকে দেখাইয়া দিলেন।
আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে প্রধান বাধাগুলোর অন্যতম হলো আমাদের দেহ-মনের চেতনাকে রামকৃষ্ণ-চেতনাতে রূপান্তরিত করার বাধা। যাঁদের পরিবার নেই, কোনো সাংসারিক কর্তব্যকর্মও করতে হয় না—সেই সন্ন্যাসীদেরও দেহচেতনা আত্মচেতনার পথে প্রবল বাধা হতে পারে।
ইতিহাস অনুসারে বাংলা সংবাদ-সাময়িকপত্রের সূচনা হয়েছে উনিশ শতকের একেবারে গোড়ার দিকে।
এখন আমাদের জানতে হবে—শ্রীরামকৃষ্ণের স্বরূপ অনুধাবনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুশীলনের উপায়গুলি কী? প্রথম উপায় অনন্যশরণতা।
স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ কয়েকজন ভক্ত দৈনন্দিন জীবনের কলকোলাহল থেকে দূরে নিভৃতে নিয়মিত কিছু সময় জপধ্যান, প্রার্থনা ও শাস্ত্রালোচনার উদ্দেশ্যে একটি উপযুক্ত স্থানের সন্ধান করতে করতে আলসুর শহর থেকে কয়েক ফার্লং দূরে এক আদর্শ পরিবেশে একটি বাড়ির সন্ধান লাভ করেন এবং ১৯০৬ সালের ১৩ এপ্রিল লিজ চুক্তিতে তাঁরা সেটি অধিগ্রহণ করেন।
শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে আগত ভক্তিমতী মহিলাদের অন্যতমা হলেন কালীপদ ঘোষ ওরফে দানাকালীর কনিষ্ঠা ভগিনী মহামায়া মিত্র। বিশ্বচেতনায় শ্রীরামকৃষ্ণ গ্রন্থে
ধ্যান, মনঃসংযম, একাগ্রতা প্রভৃতি শব্দ ও প্রসঙ্গগুলি স্বামীজীর বক্তৃতা, চিঠিপত্র ও রচনাবলিতে বারবার এসেছে৷ বিদেশে একটি বক্তৃতায় তিনি মনের মধ্যে নিহিত অশেষ শক্তির কথা বলতে গিয়ে বলেছেন,
স্বামী বিবেকানন্দ ধর্মমহাসম্মেলনের অল্প কিছুকাল পরেই তাঁর শিকাগোর আতিথ্যদাত্রী Mrs. Lyon-কে বলেছিলেন : “The greatest temptation of his life in America… is organisation.
সুখ ও দুঃখ—পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংলগ্ন এই দুটি অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি নেই৷ বেদনার বার্তাবহ হয়ে যাকিছু আমাদের কাছে আসে, তাদের সঙ্গে আনন্দের স্পর্শও কিন্তু সংযুক্ত হয়ে থাকে৷
আমরা মহিমময় শ্রীরামকৃষ্ণ–চরিত্রের অন্তরঙ্গ দিকগুলি সম্বন্ধে যত অবহিত হই ততই