১৮৯৩ সালে আমেরিকা যাইবার কিছুদিন পূর্বে বোম্বাইতে স্বামীজীর সহিত স্বামী তুরীয়ানন্দজীর সাক্ষাৎ হইয়াছিল। তাঁহাকে স্বামীজী বলিয়াছিলেন : “হরি ভাই, এত তপস্যাদি করলুম, তবু ধর্ম-টর্ম তো কিছুই বুঝতে পারলুম না।

১৮৯৩ সালে আমেরিকা যাইবার কিছুদিন পূর্বে বোম্বাইতে স্বামীজীর সহিত স্বামী তুরীয়ানন্দজীর সাক্ষাৎ হইয়াছিল। তাঁহাকে স্বামীজী বলিয়াছিলেন : “হরি ভাই, এত তপস্যাদি করলুম, তবু ধর্ম-টর্ম তো কিছুই বুঝতে পারলুম না। তবে দেখছি, ভারতভ্রমণ করে আমার heart (হৃদয়টা) খুব বেড়ে গেছে। দেশের দীন-দুঃখীদের জন্য প্রাণটা কাঁদছে। সকলের জন্য খুব feel (সমবেদনা অনুভব) করছি।” বলিতে বলিতে তিনি চুপ করিয়া গেলেন—চোখ দিয়া অশ্রু গড়াইয়া পড়িল। এই ঘটনাটির উল্লেখ করিয়া পরে তুরীয়ানন্দজী মন্তব্য করিয়াছিলেন : “আমি যেন ঠিক দেখছিলাম যে, জগতের দুঃখে স্বামীজীর হৃদয় তোলপাড় হচ্ছে—তাঁর হৃদয়টা যেন তখন একটা প্রকাণ্ড কড়াই, যাতে জগতের সমস্ত দুঃখকে রেঁধে একটা প্রতিষেধক মলম তৈরি করা হচ্ছিল।”স্বামীজীর দেহত্যাগের ছয় মাস পূর্বে তাঁহার মধ্যে এই ব্যথাকেই দেখিয়াছিলেন বাল্যবন্ধু ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়। তিনি পরবর্তিকালে বলিয়াছেন : “দেশের জন্য ব্যথা কখনও শরীরিণী হয়? যদি হয় তো বিবেকানন্দকে বুঝা যাইতে পারে।” কিন্তু বিবেকানন্দের শুধু ব্যথা-অনুভবই ছিল না—ছিল প্রতিকারের চেষ্টাও। স্বামীজী যেন নিজের বুকের সেই বেদনাকে সঞ্চারিত করিয়া দিতে পারিয়াছিলেন তাঁহার গুরুভ্রাতা এবং অনুগামীদের মধ্যে—যাহাদের লইয়া তিনি রামকৃষ্ণ মিশন গড়িলেন। যেমন স্বামী অখণ্ডানন্দজী, যিনি সমস্ত মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করিয়া হিমালয়ে-তিব্বতে ঘুরিয়া বেড়াইলেন, তিনি স্বামীজীর এই বুকের ব্যথা অনুভব করিয়া নামিয়া আসিলেন আর্ত-দরিদ্রের সেবায়। প্রায় চল্লিশ বৎসর এক গণ্ডগ্রামে থাকিয়া গেলেন অনাথ বালকদের সেবায়। তাঁহার এই সেবাবোধ এত তীব্র হইয়াছিল যে, যখন শুনিয়াছিলেন সেই অঞ্চলের মানুষ দুর্ভিক্ষে খাইতে পারিতেছে না, বহু চেষ্টাতেও তখন তাঁহার গলা দিয়া অন্ন নামেনি বেশ কিছুদিন। স্বামীজীর বেদনা সঞ্চারিত হইয়াছিল স্বামী সদানন্দের মধ্যেও। একবার তিনি এক সংক্রামক রোগীর সেবা করিতেছিলেন। কোনো কারণে সেই রোগী অগ্নিদগ্ধ হইলে রোগীর দেহকে শীতল করিবার জন্য তিনি তৎ‌ক্ষণাৎ তাহাকে আলিঙ্গন করিয়াছিলেন। কোনো এক সময় দক্ষিণভারতে দুর্ভিক্ষত্রাণে গিয়াছেন কয়েকজন সন্ন্যাসী—তাঁহাদের মধ্যে রহিয়াছেন স্বামী আত্মপ্রকাশানন্দও। রাত্রে ত্রাণের জন্য নৌকা করিয়া বস্তায় চাল লইয়া যাওয়া হইতেছে, এমন সময় নৌকা হইতে হঠাৎ একটি বস্তা জলে পড়িয়া যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ঝাঁপাইয়া পড়িলেন আত্মপ্রকাশানন্দজী। নিশ্ছিদ্র...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in