ঐ যে বেনিয়াটোলার ট্রাম-লাইনের ধারে
বট আর অশ্বত্থের ঝুরি নেমে আসা বাড়িটাকে দেখছ,
ওখানেই বিপিন থাকত, ওর বাপ-কাকা, ঠাকুরদা,
দুই বোন, আইবুড়ো পিসি, ওর মামাতো ভাই নরেশ

ঐ যে বেনিয়াটোলার ট্রাম-লাইনের ধারেবট আর অশ্বত্থের ঝুরি নেমে আসা বাড়িটাকে দেখছ,ওখানেই বিপিন থাকত, ওর বাপ-কাকা, ঠাকুরদা,দুই বোন, আইবুড়ো পিসি, ওর মামাতো ভাই নরেশ,বছর কয়েক সেও ছিল, বোধহয় নরেশ তখন ডাক্তারি পড়ছেএকে একে সকলেই বাড়িটাকে ছেড়ে গেল ।বোনেদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার বছর কয়েক পরেসামনের ঐ দোতলার ঘরে ওর পিসি গলায় দড়ি দিলবিপিন সেবার সবেমাত্র চাকরি পেয়েছে,ধর্মতলায় ছোটখাটো কোনও এক ওষুধের দোকানে,মাথায় অনেক দেনা!ঐ বাড়ি ভাগ নিয়ে সেও কি কম অশান্তি,বিপিনের বাবা কিছুতেই সই দেবে না।কাকাও তো উঠে গেল সে বছরভবানীপুরে তার কেনা নতুন ফ্ল্যাটে, বিত্ত আছে যার,আগে থাকতে সৌভাগ্যের দু-পয়সা হাতে পেয়েছে যে,তার মতো স্বাধীনতা আজকাল কার কাছে আছে বলো?নয় নয় করে বছর তিরিশ হবে, বিপিনের বাবা গেল মরেবোনেরা নেয় না খোঁজ, নরেশও শুনেছি নাকি বিলেতেরনাম করা ডাক্তার, বাড়িখানা ওভাবেই থেকে গেলনিজস্ব আঁধার নিয়ে, আলো আর বাতাসের দোলাচলে!বিপিন পারেনি যেতে বাপের এই ভিটেখানি ছেড়েসন্ধেতে বাড়ি ফিরে লেখা নিয়ে বসে, ভোরে উঠে ছাদে যায়পায়রা ঘুঘুর তো অভাবে নেই দেশে, দানা দেয়, রাত হলেবই পড়ে, বিয়ে থা করার মতো রোজগার নেই, সুপাত্র ছিল বটেশুনেছি ওর ঠাকুরদা নাকি বৃটিশের গুলিতেই মারা যায়সে অবশ্য আমরা চোখে দেখিনি, বিপিনের বেঁচে থাকা ছাড়াএ বাড়িতে আর কিছু নেই, নেই কোনও ফুলগাছ,নেই কোনও তেল-সিঁদুরের দাগ, শঙ্খ বাজে না, সন্ধেতে আজ আরজ্বলে না প্রদীপ, তবু শ্বাসবায়ু যায় আসে ভাঙা ঐ জানালার ফাঁক দিয়েঐ যে সামান্য রোদ নেমে আসে বারান্দার কোণে, এই যে বৃষ্টি হলেজলে ভরে শ্যাওলার দুপুর-উঠোন, বিপিনের কাছেএই হল বাঁচা, দেওয়ালের গায়ে তার লিখে রাখা স্বাধীনতার মানে!

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in