পূজনীয় কালীকৃষ্ণ মহারাজকে [স্বামী বিরজানন্দকে] গুরুবৎ মনে হইত। যখন তাঁহাকে প্রণাম করিতাম, মনে হইত আমি আমার গুরুদেবকেই প্রণাম করিতেছি।

পূজনীয় কালীকৃষ্ণ মহারাজকে [স্বামী বিরজানন্দকে] গুরুবৎ মনে হইত। যখন তাঁহাকে প্রণাম করিতাম, মনে হইত আমি আমার গুরুদেবকেই প্রণাম করিতেছি। উভয়ের মধ্যে সৌসাদৃশ্য ছিল। এইজন্যই কি তাঁহাকে গুরু মনে হইত? গাম্ভীর্য, শান্তভাব, সুমিষ্টভাষণ ও সেবা—এই কয়েকটি উভয়েরই সাধারণ ভূমি, উভয়েরই অতিমাত্র এই সম্পদগুলি ছিল। কালীকৃষ্ণ মহারাজ তাঁহার যৌবনে, সাধু হইবার অব্যবহিত পূর্বে আমাদের গুরুদেবকে অনেক দিন সেবা করিয়াছিলেন। তাঁহার সেবায় মুগ্ধ হইয়া গুরুদেব বলিয়াছিলেন : “এই ছেলেটা কে রে? এ যে মায়ের মতো সেবা করে!” কালীকৃষ্ণ মহারাজ দীর্ঘকাল একাই স্বামীজী ও হরি মহারাজের রোগ-সেবা করিয়াছিলেন। সারাদিনে রাত্রির মধ্যে অত্যল্প সময় ইজিচেয়ারে ঘুমাইয়া লইতেন। দুইজন মহাপুরুষকে সেবা করা একসঙ্গে—বিশেষত কঠিন রোগের সেবা—এক অসামান্য ‌ক্ষমতা ও হৃদয়বত্তার পরিচায়ক। প্রায় ছয়মাস তিনি আদৌ ঘুমান নাই জানিয়া হরি মহারাজ স্বামীজীকে বলিয়া দেন। স্বামীজী রাগ করিয়া বলেন : “যা তোকে আর সেবা করিতে হইবে না।” কালীকৃষ্ণ মহারাজ মহাদুঃখিত। কাতর হইয়া পুনঃপুন আর্তি প্রকাশ—“আমার কোনো কষ্ট হইতেছে না। অনিদ্রার জন্য শরীর সামান্যও ক্লান্ত নহে—আমাকে এ সৌভাগ্য হইতে বঞ্চিত করিবেন না।” ইত্যাদি। ইঁহার শরীর-মন সাধারণের শরীর মন হইতে যেন পৃথক ধাতুতে গঠিত। নতুবা কিছুতেই হেলিত না কেন? গোপালের মার উক্তি—‘বেজার নাই’ (বেজার নাই, অর্থাৎ কিছুতেই ইহার শান্তিভঙ্গ হয় না, বিরক্তি নাই)—স্বামী বিরজানন্দের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। কালীকৃষ্ণ মহারাজ বলিতেছেন: “আমার তিনটি মা ছিলেন—মা ঠাকুরানী, মিসেস সেভিয়ার (ইংরেজ কাপ্তান সেভিয়ারের পত্নী) এবং গর্ভধারিণী। হায়, একে একে ইঁহারা সকলেই চলিয়া গেলেন!” যতদিন গর্ভধারিণী জীবিত ছিলেন, প্রতি বৎসর তাঁহাকে দর্শন করিতে তিনি বৃন্দাবন যাইতেন। মা (সারদাদেবী) কোনো সময়ে মহারাজকে কয়েকটি (কেহ বলেন ছয়টি) বীজমন্ত্র শিখাইয়া বলেন : “ইহা তোমার কাজে লাগিবে।” প্রেসিডেন্ট হইয়া মহারাজ কিছুকাল দী‌ক্ষাদি দেন নাই। হয়তো মায়ের ইঙ্গিতের অপে‌ক্ষা করিয়াছিলেন। বাল্যকাল হইতেই লোকচ‌ক্ষুর অন্তরালে থাকিতে তৎপর মহারাজকে কোনোদিন দী‌ক্ষাদি দিতে হইতে পারে—ইহা তিনি কল্পনা করিতে পারিতেন না। বিরজানন্দজী স্বামীজীর খুব স্নেহ ও বিশ্বাসের পাত্র ছিলেন। স্বামীজীকে তিনি খুব ভয়ও করিতেন। বিরজানন্দজী বলিয়াছিলেন :...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in