প্রায় জনশূন্য শান্তিপুর গঙ্গাঘাটে অপরাহ্ণ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যাগর্ভে।

প্রায় জনশূন্য শান্তিপুর গঙ্গাঘাটে অপরাহ্ণ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যাগর্ভে। কার্তিক মাসের ক্ষীণকায় বেলা তার মলিন উত্তরীয়খানি যেন দূরে জল ও স্থলের মাঝে নিঃসঙ্গ দিকচক্রবাল রেখার ওপর বিছিয়ে দিয়েছে, এই অনিত্য রূপ-জগতে সেই অলীক উত্তরীয়র নামই কুয়াশা। কুয়াশাচ্ছন্ন আলোয় একখানি ক্ষুদ্র ডিঙা সুরধুনীর স্রোতে ভেসে দূরের কোনো জনপদের দিকে আনমনে বয়ে চলেছে—সেদিকে তাকিয়ে বৃদ্ধ মানুষটি তার পাশে বসা কিশোরকে অস্ফুটে বললেন : “দেখছ বাবা, ঐ ডিঙাটি কেমন জল কেটে আগায় চলছে, স্রোতে উঠছে নাবছে; তবু কোনো হেলদোল নেই, কোনো ভয় নেই!” ছেলেটির বয়স পনেরো-ষোলো হবে, একমাথা চুল প্রদীপের মতোন মুখটিকে আগলে রেখেছে। দুখানি চোখে কৈশোরের মায়াকাজল, ভারি নরম গলায় বলল : “ও তো জানে, মাঝি ঠিক ওরে পারে নে যাবে!” ছেলেটির কথা শুনে সামান্য হাসলেন বৃদ্ধ : “ঠিক, ঠিক বলছ দাদু। ও জানে মাঝি আছে, সেই ওরে ডুব যেতে দেবে না। ওমন আমাদেরও জানতে হবে, কে আমাদের জীবনের মাঝি! তবেই না ওমন নির্ভয়ে সংসার-জলে ভেসে থাকতে পারব!” “আমাদের মাঝি কে দাদু?” কিশোরের সহজ প্রশ্নে বলিরেখা আর রসকলি সাজানো বৃদ্ধের মুখ প্রসন্ন হাসিতে ভরে উঠল, পাতলা তুষের চাদরখানি ভাল করে শরীরে জড়িয়ে স্নেহার্দ্র কণ্ঠে বললেন : “ঐ যার নাম তোমারে আমি শিখিয়েছি! সন্ধ্যারতির সময় খঞ্জনি বাজিয়ে যে-নাম তুমি কর, তিনিই তো আমাদের মাঝি!” “হরি হরায় নমঃ কৃষ্ণ যাদবায় নমঃ?” “হ্যাঁ, বাবা। হরি বল, কৃষ্ণ বল, মাধব বল—তাঁর যে কত রূপ, কত নাম!” দিনের আলো আর নেই বললেই চলে, দুধ থেকে প্রথম তোলা ননীর মতোন অাঁধারজালে আচ্ছন্ন মায়াচরাচর। গঙ্গাতীরের কোনো বাড়িতে আকাশে সন্ধ্যাপ্রদীপ দেওয়া হয়েছে, ভালবাসার ক্ষীণ ইশারার মতো প্রদীপটি হেমন্তের সুদূর নক্ষত্রলোকের দিকে অপলক চেয়ে রয়েছে। সন্ধ্যাপ্রদীপ থেকে চোখ সরিয়ে কিশোর বৃদ্ধকে সরল গলায় শুধাল : “কীভাবে তাঁকে মাঝি করব? আমি বললেই কি তিনি শুনবেন?” প্রায় জীবন-সায়াহ্নে পৌঁছানো বৃদ্ধের হাতখানি ছেলেটির মাথা স্পর্শ করে দু-এক মুহূর্ত স্থির হয়ে রইল, সেই অবসরে বৃদ্ধ চিনিমাখা স্বরে বললেন : “শুনবেন বাবা,...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in