(১)
৺শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণো জয়তি


RAMKRISHNA MATH
BELUR P.O., HOWRAH DIST.
Dated the ২৫শে আষাঢ়, ১৯২৫
বৃহস্পতিবার
[10.07.1925]


কল্যাণীয়া শ্রীমতী প্রতিভাসুন্দরী রায়।


মায়ী, অনেক দিন পরে তোমার পত্র পাইলাম, সকলে শারীরিক ভাল আছ জানিয়া খুব সন্তুষ্ট হইলাম। কালীতারা কিছু লেখে নাই কেন।

গত সোমবার শ্রীযুত যামিনীবাবু এখান হইতে ঢাকায় রওনা হইয়াছেন, শীঘ্রই তিনি বালিয়াটী যাবেন। হাঁসপাতাল ডাক্তারখানা প্রতিষ্ঠা হইবে শুনিয়াছি।

তুলসী মহারাজ এখন বাঙ্গালোর মঠে আছেন, মাইসোর দেশে। শীঘ্রই তিনি আরো দ‌ক্ষিণ দেশে যাবেন, সে জায়গার নাম ট্রাভাঙ্কোর। সেখানেও আশ্রম আছে, কন্যাকুমারীর নিকট। কন্যাকুমারী কোথায় জান, একেবারে ভারতবর্ষর শেষ সীমা। সে দেশে মেয়ে রাজা, মেয়েরাই বাপের বিষয় পায়, ছেলেরা খেতে পোরতে পায়, বিষয় পায় না, সেখানে দেশাচাল।

নীরদ মহারাজ ভাল আছেন, তোমাদের সকলকে ভালবাসা শুভেচ্ছা জানাইয়াছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন যোগেনবাবু, মায়ী এরা সব শারীরিক ভাল আছেন তো? কালীতারা সেখানে লেখাপড়া করে তো?

মায়ী, এখানে সব সাধুরা ও আমি ভাল আছি, তোমরা সকলে সব সাধুদের শুভাশীর্ব্বাদ জানিবে। গতকল্য বৈকাল থেকে এখানে খানিক রাত্র পর্য্যন্ত বৃষ্টি হইয়াছিল। আবার মাঝে২ বৃষ্টি বন্ধ হয়।

মায়ী, তুমি শ্রীশ্রীঠাকুরের পূজা ও সেবাদি করিবে, মনে২ জানিবে আপন পিতামাতার সেবা পূজা করিতেছি। আসল কথা এই, ঠাকুরকে আপন করে নিতে হবে। তাঁকে যদি আপন করে নিতে পার, তাঁর যাহা কিছু সকলি তোমার হাতে।

যখন সুবিধা হবে ধর্ম্ম সম্বন্ধে পুস্তক তুমি পড়িবে। কালীকেও একটু২ পড়িতে দেবে, যাহাতে মনে শান্তি থাকে এইরকম বই পড়িবে।

আমি শারীরিক ভাল আছি, তুমি আমার আন্তরিক ভালবাসা শুভেচ্ছা জানিবে। শ্রীযুত যোগেনবাবুকে, কালীতারাকে জানাবে। কালীকে লিখতে বলিবে।


মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী
শ্রীসুবোধানন্দ

(২)

৺শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণো জয়তি


৺কাশীধাম
২৪-৮-[১৯]২৭


শ্রীমান অবনী—

তোমার পত্র পাইয়া সমস্ত অবগত হইলাম ও সকলে শারীরিক ভাল আছ জানিয়া সুখী হইলাম। সারদানন্দ স্বামীর যেদিন শরীর যায়, তার পরদিন মহাপুরুষ মহারাজ সকালে টেলিগ্রাম দ্বারা আমাকে জানাইয়াছিলেন। বেলা ১১টার সময় সারদানন্দ স্বামীকে প্রসেসন করিয়া বরাহনগর হইতে পার করিয়া মঠে লইয়া যাওয়া হয়, বেলুড় মঠে সেদিন মেয়ে পুরুষ প্রায় হাজারখানেক গিয়াছিল। মঠের দ‌ক্ষিণদিকে যেদিকে অন্যান্য মহারাজদিগের সৎকার হইয়াছিল, সারদানন্দ স্বামীকেও সেই স্থানে সৎকার করা হইয়াছিল। বেলা ৪টার সময় সব শেষ হইয়া গেল। শ্রীশ্রীঠাকুর বলিতেন—যাহার হেথায় আছে তার সেথায় আছে, যার হেথায় নাই তার সেথায় নাই। তার মানে ইহলোক ও পরলোক—এখানে যেমন সঙ্গ সেখানেও সেইরূপ সঙ্গ। আজকাল এখানে মধ্যে২ বৃষ্টি হয়। আমার শরীর পূর্ব্বাপে‌ক্ষা এখন ভাল, তবে সামান্য দুর্ব্বলতা আছে এই পর্য্যন্ত। দুইবেলা রুটী খাই এবং সাবধান মত থাকি। এখানকার সকল সাধুরা ভাল আছে। আন্তরিক ভালবাসা ও শুভেচ্ছা জানিবে এবং চেনাশুনা সকলকে জানাইবে। ইতি—


মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী
তোমাদের শ্রীসুবোধানন্দ


পত্রপ্রাপক : Sreeman Aboni Mohan Gupta
ঠিকানা : A. G.’s Office
Hinoo P.O.
Ranchi
B. N. Ry

(৩)
৺শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণো জয়তি


এ/১৮ ডুরেণ্ডা, হিনু পোঃ
রাঁচি, বি. এন. আর.
৬/১১/[১৯]২৮


কল্যাণীয়া স্নেহের পারুল—
তোমার পত্র পাইয়া আমি খুব আনন্দিত ও সুখী হইয়াছি, তুমি দেশে কতদিন থাকিবে? তোমাদের ইস্কুল যখন খুলিবে আবার সেখানে যাইবে? শ্রীমতী সাধনা এখন কলমাতে আছে ও শারীরিক ভাল আছে। তার পত্র পাইয়াছি, শীঘ্রই তাকে পত্র লিখিব।

অনেকদিন পূর্ব্বে আমার ডায়াবিটিস (বহুমূত্র) অসুখ হইয়াছিল, এখন অনেক সারিয়াছে। আহারাদি বিষয় খুব সাবধানে থাকিতে হয়, আলু খাওয়া হয় না ও মিষ্ট কোন জিনিস খাওয়া হয় না। ডাক্তার ও কবিরাজেরা সমস্ত বারণ করিয়াছেন, আমিও সবকিছু খাই না। শীতকালটা রাঁচিতে থাকিব মনে করিয়াছি। এখানকার জলবাতাস খুব ভাল।

তুমি আমার ৺বিজয়ার আন্তরিক ভালবাসা শুভেচ্ছা জানিবে, তোমার ভাইদের জানাবে ও সকলকে জানাবে। ঢাকা মিশনে আনন্দের সহিত ও সমারোহের সহিত শ্রীশ্রীমাদুর্গার প্রতিমা পূজা হইয়া গেল।

রাঁচিতে আমাদের এক আশ্রম মঠ আছে। আমি যেখানে থাকি, সেখান হইতে সাত মাইল। সময়২ গাড়ি ভাড়া করিয়া আশ্রম বেড়াইয়া আসি। আমি এক গৃহস্থর বাড়ীতে থাকি। এরা শ্রীশ্রীমার কাছে দী‌ক্ষিত ও খুব ভক্ত। এখানে আমার সময়ে আহারাদি ও ঔষধপত্রের কোন অসুবিধা হয় না।

শ্রীশ্রীঠাকুর বলিতেন, “যেমন, ছোট২ ছেলেমেয়েরা একটা বাঁশ কিম্বা খুঁটি ধোরে ঘোরে ঠিক জানে পড়িয়া যাব না, ধরিয়া আছি, সেইরকম যে ঠাকুরের নাম ধরিয়া আছে তার কখনো কোন রকম কষ্ট বিপদ হয় না।” ঠিক২ আন্তরিক নাম লওয়া চাই, কেঁদেকেটে তাঁর কাছে আন্তরিক ও ভক্তির সহিত প্রার্থনা করিতে হবে, ঠাকুর ভক্তি দাও, বিশ্বাস দাও, দেখা দাও। মঙ্গলময় তার প্রার্থনা শোনেন ও মঙ্গল করেন। মনের মধ্যে এক বাসনা থাকিবে কিসে তাঁকে পাইব।

ধর্ম্মসম্বন্ধে বই পড়া উচিত যাহাতে মন সর্ব্বদা তাঁর দিকে থাকে। এমন বই পড়িতে হবে যাহা পড়িয়া মনে শান্তি হয়। সদাসর্ব্বদা মনে২ তাঁকে চিন্তা ও তাঁর নাম করা ভাল। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ উপদেশ পুস্তক যদি পাও পড়িবে, সুন্দর কথাবার্ত্তা। আজ এই অবধি।

তুমি আমার আন্তরিক ভালবাসা শুভেচ্ছা জানিবে ও সকলকে জানাবে। মধ্যে২ কুশল সংবাদ পাইলে সুখী হইব। শ্রীশ্রীঠাকুরের নিকট প্রার্থনা তিনি সকলকে শারীরিক ও মানসিক কুশলে ও শান্তিতে রাখুন।

মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী
তোমাদের শ্রীসুবোধানন্দ

(৪)
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণো জয়তি


১নং মুখার্জি লেন
বাগবাজার পোঃ
উদ্বোধন অফিস
কলিকাতা
[নভেম্বর/ডিসেম্বর]


কল্যাণীয়া মায়ী—
তোমার পত্র পাইয়া সমস্ত অবগত ও সুখী হইলাম। আজ কয়মাস পরে পত্র লিখিতে বসিলাম। তোমাকে এই প্রথম পত্র। আমার এখন পত্র লিখিতে কষ্ট বোধহয়, শরীর খুব দুর্ব্বল। অনেক‌ক্ষণ বসিতে কষ্ট।

তুমি যে পূর্ব্বাপে‌ক্ষা শারীরিক ভাল আছ এই জানিয়া আমি খুব সন্তুষ্ট হইলাম। একমনে শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে কেঁদেকেটে প্রার্থনা করিবে। ঠাকুর মন ভাল করিয়া দাও, যাহাতে বিশ্বাস, ভক্তি হয় তাহা চাহিবে। হাবিজাবি বাজে বিষয় চিন্তা করিলে কি মনে শান্তি থাকে? নানাভাবে ঠাকুরের মূর্ত্তি, যাঁর উপর তোমার বিশ্বাস, তাকেই চিন্তা কর। মঙ্গলময় মঙ্গল করিবেন এই বিষয় নিশ্চয় জানিবে।

শ্রীশ্রীঠাকুর বলিতেন “জান্তে, অজান্তে বা ভ্রান্তে যেকোন ভাবে তাঁর নাম করিলেই তার ফল হইবে।” নামের এক মাহাত্ম্য আছে তাহাতে সব ঠিক হয়, নামেতে কালপাশ কাটে। তুমি যদি কলিকাতায় আসিতে কথাবার্ত্তা হইত। আন্তরিক ভালবাসা শুভেচ্ছা সকলে জানিবে।

মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী
তোমাদের শ্রীসুবোধানন্দ