গাঁয়ের নাম ‘লক্ষ্মীপুর’। সুফসলি ধানি মাঠের নাম ‘লক্ষ্মীজোল’। ধানের অপর নাম ‘লক্ষ্মী’। কথায় আছে—‘হাতের লক্ষ্মী পেয়ে ঠেলো না’। ছেলে কিংবা মেয়ে—অনেকের নাম লক্ষ্মী। আদর করে মা সন্তানকে ডাকেন—‘লক্ষ্মীসোনা আমার’। পৌষ মাস লক্ষ্মীমাস, বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবার। আবার ভর্ৎসনাবাক্যেও লক্ষ্মীর বিপরীতে ‘অলক্ষ্মী’ বা ‘লক্ষ্মীছাড়া’। বাংলার লোকজীবনের বারোমাস্যায়, লোকসংস্কৃতিতে দেবী লক্ষ্মী একটা বিরাট স্থান জুড়ে রয়েছেন।

গাঁয়ের নাম ‘লক্ষ্মীপুর’। সুফসলি ধানি মাঠের নাম ‘লক্ষ্মীজোল’। ধানের অপর নাম ‘লক্ষ্মী’। কথায় আছে—‘হাতের লক্ষ্মী পেয়ে ঠেলো না’। ছেলে কিংবা মেয়ে—অনেকের নাম লক্ষ্মী। আদর করে মা সন্তানকে ডাকেন—‘লক্ষ্মীসোনা আমার’। পৌষ মাস লক্ষ্মীমাস, বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবার। আবার ভর্ৎসনাবাক্যেও লক্ষ্মীর বিপরীতে ‘অলক্ষ্মী’ বা ‘লক্ষ্মীছাড়া’। বাংলার লোকজীবনের বারোমাস্যায়, লোকসংস্কৃতিতে দেবী লক্ষ্মী একটা বিরাট স্থান জুড়ে রয়েছেন। ‘লক্ষ্মী’ শব্দটির প্রথম প্রয়োগ লক্ষ্য করি ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ৭১ সূক্তের দ্বিতীয় ঋকে। বলা হয়েছে : “তাঁহাদিগের বচনরচনাতে অতি চমৎকার লক্ষ্মী সংস্থাপিত আছে।” (ঋগ্বেদ-সংহিতা, শ্রীরমেশচন্দ্র দত্তের অনুবাদ, ২য় সং, সূক্ত ৭১, ২য় ঋক, “যেমন চালনীর দ্বারা শক্তুকে পরিষ্কার করে…সংস্থাপিত আছে”, পৃঃ ১২৩১)। এখানে লক্ষ্মী শব্দের অর্থ সৌন্দর্য, সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি—যা পরবর্তিকালে দেবী লক্ষ্মীর মধ্যে সংক্রামিত হয়েছে। পরবর্তী বৈদিক সাহিত্য আরেক দেবীর কথা পাই—‘শ্রী’। তবে তিনি লক্ষ্মীই। শ্রীসূক্তে বলা হয়েছে— “হিরণ্যবর্ণাং হরিণীং সুবর্ণরজতস্রজাম।চন্দ্রাং হিরন্ময়ীং লক্ষ্মীং জাতবেদো মমাবহ।।” অপরূপা সুন্দরী লক্ষ্মী বা শ্রীদেবী। শান্ত-স্নিগ্ধ সৌন্দর্য বোঝাতে বলে—লক্ষ্মীশ্রী। সোনার মতো গায়ের রং। স্বর্ণ ও রজত অলংকারে শোভিতা। আবার তিনি সোনার হরিণও বটেন। মৃগলাঞ্ছিত লক্ষ্মীমূর্তি মেলেনি সত্য, কিন্তু একধরনের প্রাচীন মুদ্রায় হরিণের ছাপ আছে। রামায়ণের অন্যতম ‘ক্লাইম্যাক্স’—সীতার সোনার হরিণ ধরে আনার আবেদন। হিন্দু বিশ্বাসে সীতা লক্ষ্মীর অবতার। সীতার সোনার হরিণ চাওয়ার মধ্যে কি লুকিয়ে আছে তাঁর পূর্বজ প্রতিকৃতি দর্শনের সুতীব্র ব্যাকুলতা? বৈদিক স্তরের পর মহাকাব্য, পুরাণাদিতে লক্ষ্মী অপ্সরা, জলদেবী। সুরাসুরের সম্মিলিত সাধনে সমুদ্রমন্থন কর্মে লক্ষ্মী উঠে এসেছেন, ক্রমে বিষ্ণু বা নারায়ণের পত্নীর মর্যাদা লাভ করেছেন। পাল-সেন পর্বের পাথুরে ভোগ-বিষ্ণু মূর্তিতে সমপাদস্থানিক ভঙ্গিমায় দণ্ডায়মান ধ্যাননিমগ্ন বিষ্ণুর বামদিকে পদ্মহস্তা শ্রী বা লক্ষ্মীর অবস্থান, ডাইনে পুষ্টি বা বীণাধারী সরস্বতী। বাংলার বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের মূর্তি পাওয়া গেছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। এছাড়া বিষ্ণুর শয়ন-ভাস্কর্যে সলজ্জ লক্ষ্মীকে বিষ্ণুর পদসেবা করতে দেখা যায়। আদি ও মধ্য যুগে একাধিক লক্ষ্মী-নারায়ণ মূর্তির ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে। লক্ষ্মী শুধু হিন্দু বা ব্রাহ্মণ্য ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত নন, বৌদ্ধ ও জৈনমণ্ডলেও তিনি স্থান পেয়েছেন। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয়...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in