গুণাতীতা আদ্যাশক্তি গুণময়ী হয়ে সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের লীলায় বিশ্ব-চরাচরকে নিয়মিত করেন।

গুণাতীতা আদ্যাশক্তি গুণময়ী হয়ে সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের লীলায় বিশ্ব-চরাচরকে নিয়মিত করেন। যে কল্যাণী জগতের পরিপালনে ও স্থিতিকার্যে সদা নিরতা, তিনি হলেন দেবী লক্ষ্মী। তিনি ব্রহ্মস্বরূপিণী। মহালক্ষ্ম্যষ্টকমে পাওয়া যায়, তিনি সাধককে প্রার্থনা অনুসারে ভুক্তি ও মুক্তি প্রদান করে থাকেন। পুরাণ বলে, অমৃতকুম্ভধারিণী এই মাতৃমূর্তি সমুদ্রমন্থনের শেষে দেবাসুরের সামনে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন।      দীপান্বিতা অমাবস্যার আলোকবীথি লক্ষ্মীর আরাধনায় উজ্জ্বল হয়ে আসমুদ্রহিমাচলকে শ্রী ও সৌন্দর্যের ধারায় আপ্লুত করে। তবে বাংলার লক্ষ্মী-বন্দনা স্বতন্ত্র। সেখানে খেতে খেতে শস্যের সমারোহ, অঙ্গনে অঙ্গনে স্বর্ণাভ ধান-গোলার পূর্ণতা আর গৃহের কোণে কোণে প্রশান্তির স্পর্শ লক্ষ্মীর নিত্যপূজায় উপকরণ হয়ে সুষমা ছড়ায়। প্রতি বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীপুজোয় উঠানের আলিম্পন-মাধুরী পাঁচালি-পয়ারের আকুতিতে মিশে বঙ্গজননীদের ধারাবাহিক মাতৃত্বের সুরে কথা যোগ করে যায়। কৃষিপ্রধান বঙ্গভূমির শোভন প্রকৃতিপটে বারে বারে ফুটে ওঠে তাঁকে পূজা নিবেদনের ঋতুময় বিভঙ্গ। ভাদ্র, পৌষ ও চৈত্র মাসে শুক্লপক্ষের কোনো এক বৃহস্পতিবারে তাঁর আরাধনা হয়। আবার রাঢ় বাংলায় পয়লা মাঘ বিকেলবেলায় প্রাঙ্গণে ধান সাজিয়ে দেবীর পূজা করে সূর্যাস্তের পর প্যাঁচা ডাকলে তাঁকে ঘরে তোলা হয়। এছাড়া দেশাচার ও কুলাচার-ভেদে বিভিন্নভাবে তাঁর পূজা হয়ে থাকে। তবে কোজাগরী পূর্ণিমায় তাঁর বন্দনা বহুজনীন।  শ্রীশ্রীচণ্ডীতে আছে, সুকৃতীর ভবনে আদ্যা দেবী শ্রীরূপে অবস্থান করেন। লক্ষ্মী তাই সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির আশ্রয়। তাঁর স্নেহনয়নের ছায়ায় সকল অশুভ স্নিগ্ধতায় শুভায়িত হয়। তাঁর হাতে ধানের শিষ, ভুক্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। আবার শ্বেতকমলের অনুষঙ্গে তাঁর মুক্তিদায়িনী শান্তিবর্ষিণী প্রকৃতির প্রকাশ। তাঁর দুই করতল বরাভয়ব্যগ্র। তিনি প্রাণীর সুপ্তিতে চেতনা সঞ্চার করেন। তাঁর বরাভয়ে জীবকুল জেগে যায়, জাতির ভাগ্যোদয় হয়। কবি অতুলপ্রসাদের লেখনী তাই প্রার্থনা জানিয়েছে—“উঠ গো ভারতলক্ষ্মী, উঠ আদি জগত-জন-পূজ্যা,/ দুঃখ দৈন্য সব নাশি করো দূরিত ভারত-লজ্জা।” মায়ের অমৃতকুম্ভের সুধাসিঞ্চন জীবকে মরজগতের পারে অমৃতের সন্ধান দেয়। মনোপটে দেবীর উদ্বোধন হয়। শারদীয়া পূর্ণিমার সচন্দ্রিম রাতে আলোর অদ্ভুত আবেশ তখন জন্ম দেয় জ্যোৎস্নাবিধৌত পবিত্র প্রসন্নতার। সেই হৃদয়তটে বরদা কমলার পদচিহ্ন চালগুঁড়ির আলপনার মতো সুস্মিত হয়ে ফুটে ওঠে।  

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in