বেশিদিন আগেকার কথা নহে। বেলুড় মঠ হইতে ফিরিব বলিয়া ট্যাক্সিতে উঠিয়াছি। ট্যাক্সি ড্রাইভার বড় সজ্জন মানুষের মতো আলাপ জুড়িয়া দিলেন। তিনি মথুরার বাসিন্দা, পেটের দায়ে কলকাতায় বহু বৎসর রহিয়াছেন। কিন্তু সুযোগ পাইলে, একটু পয়সা জমিলেই মথুরা চলিয়া যান, বৃন্দাবন দর্শন করিয়া ফিরিয়া আসেন।
সূর্য পশ্চিমে ঢলিয়া পড়িয়াছিল অনেকক্ষণ আগেই। বালিতে গাড়ি দাঁড়াইয়া পড়িল অনেকগুলি গাড়ির সারিতে। আজ উলটোরথ, এক পার্শ্ব দিয়া রথ চলিয়াছে ‘জয় জগন্নাথ’ ধ্বনি তুলিয়া। প্রসাদ বিতরণ চলিতেছে। যাঁহারা গাড়ির ভিতরে বসিয়া আছেন, তাঁহাদের কাছে আসিয়া দিয়া যাইতেছে। সারথি এই সুযোগে মোবাইল হইতে মথুরা-বৃন্দাবনের বেশ কিছু ছবি আমাকে দেখাইলেন।
গাড়ি আবার চলিতে থাকিল। ভাঙা হিন্দি-বাংলায় দেশের-দশের প্রসঙ্গ আসিল। দুজনেই দু-চার কথা বলিলাম। সায়েন্স সিটির নিকটে থাকেন, একটি সন্তান তাঁহার, ক্লাস নাইনে পড়ে। অনেক কষ্টে, হিসাব করিয়া তাঁহাকে চলিতে হয়। ডানলপের ব্রিজ হইতে গাড়ি নামিতেছে। ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-দুঃখের কথা বলিতে বলিতে বলিলেন : “মেরা বিশ্বাস, দেনেওয়ালা ভি ভগবান হ্যায়, লেনেওয়ালা ভি ভগবান হী হ্যায়। ইসলিয়ে যব দুখ আতা হ্যায়, ম্যায় শোচতা হুঁ কি ভগবান সে আয়া হ্যায়। জীবন মে সুখ-দুখ দোনো হী হ্যায়। লোগ চাহতে হ্যায় কি সির্ফ সুখ হী হোগা, পর অ্যায়সা হোতা তো নেহি।” বলিলাম : “ঠিক কথা।” তিনি কতদূর পড়িয়াছেন জানি না, কোনো শাস্ত্র শুনিয়াছেন কি না তাহাও জিজ্ঞাসা করিবার ইচ্ছা হইল না। দৃঢ় প্রত্যয়ের সহিত যে-অনুভবের কথা তিনি শুনাইলেন, তাহার ভিতর দিয়া ‘ভারতবর্ষ’ ক্ষণিকের জন্য উঁকি মারিয়া গেল।
জম্মুতে বৈষ্ণোদেবী তীর্থে যাওয়া তাঁহার প্রতি বৎসরের অভ্যাস। বলিলেন, তাঁহার মতো অনেকেই বৎসরে একবার অন্তত আসেন, হাজার কষ্ট সত্ত্বেও। শুনাইলেন তাঁহার একটি চমকপ্রদ অভিজ্ঞতার কথা। একবার বৈষ্ণোদেবীতে প্রচণ্ড দরিদ্র এক পরিবারকে দেখিয়া তিনি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন : “আপনাদের এই অবস্থা, প্রতিবৎসর আসেন কী করিয়া?” উত্তরে শুনিয়াছিলেন—“এই তো ফিরিয়া গিয়া পরের দিনই একটি মাটির পাত্র কিনিব। রোজ তাহাতে অল্প করিয়া পয়সা রাখিব। বৎসর শেষ হইলে যাহা জমিবে, তাহা লইয়া চলিয়া আসিব।” এইভাবেই তাঁহারা বৎসরের পর বৎসর তীর্থে আসিতেছেন—তীর্থদেবতার টানে। এদিনের সন্ধ্যার এই আখ্যানের গভীরে কান পাতিলে বুঝা যাইবে, বহুগুণসম্পন্ন এইপ্রকার অসংখ্য প্রাণ ভারতবর্ষের বুকে নীরব দীপশিখার ন্যায় জ্বলিতেছে। বিবেকানন্দ এই ভারতবর্ষকেই আবিষ্কার করিয়াছিলেন।
ইহাই ভারতবর্ষের বাস্তব। এই বাস্তবতাটিকে অস্বীকার করিয়া ভারতবর্ষকে চিনিতে যাওয়া মূঢ়তা ও খণ্ডসাধনা। বিবেকানন্দ এই ভারতবর্ষকে চিনিয়াছেন। পাশ্চাত্য হইতে ভারতবর্ষে ফিরিলে তাঁহার এক ইংরেজ বন্ধু প্রশ্ন করিলেন : “স্বামীজী! চার বৎসর বিলাসের লীলাভূমি, গৌরবের মুকুটধারী মহাশক্তিশালী পাশ্চাত্যদেশ ভ্রমণের পর মাতৃভূমি আপনার কেমন লাগিবে?” স্বামীজী উত্তরে বলিলেন : “পাশ্চাত্যভূমিতে আসিবার পূর্বে ভারতকে আমি ভালবাসিতাম, এখন ভারতের ধূলিকণা পর্যন্ত আমার নিকট পবিত্র, ভারতের বায়ু আমার নিকট এখন পবিত্রতা-মাখা, ভারত আমার নিকট এখন তীর্থস্বরূপ।”
স্বামীজীর নিকট ভারত ছিল এক অতি জীবন্ত, স্পন্দিত সত্তা—যাহা শত শত বৎসর ধরিয়া কোটি কোটি মানুষের সাধনা ও ইচ্ছায় তৈরি হইয়াছে। ভারতের মৃত্তিকা তাঁহার নিকট স্বর্গ। ভারতের আদর্শ যেন একটি রহস্যময় সজীব শক্তি। প্রতিটি ভারতবাসীর অন্তরে বহমান আধ্যাত্মিকতাই হইল ভারতের মূল সুর। মোক্ষই ভারতের শেষ আদর্শ, ভারতের সাধনা। এই ভারতবর্ষই আবার বিবেকানন্দের নিকট শ্রেষ্ঠতম মানবতীর্থ বলিয়া প্রতীয়মান হইয়াছিল। স্বামীজীর কথায়—“তোমরা ধর্মে বিশ্বাস কর বা নাই কর, যদি জাতীয় জীবন অব্যাহত রাখিতে চাও, তবে তোমাদিগকে এই ধর্মরক্ষায় সচেষ্ট হইতে হইবে। এক হস্তে দৃঢ়ভাবে ধর্মকে ধরিয়া অপর হস্ত প্রসারিত করিয়া অন্যান্য জাতির নিকট যাহা শিখিবার, তাহা শিখিয়া লও; কিন্তু মনে রাখিও যে, সেইগুলিকে হিন্দুজীবনের সেই মূল আদর্শের অনুগত রাখিতে হইবে, তবেই ভবিষ্যৎ ভারত অপূর্বমহিমামণ্ডিত হইয়া আবির্ভূত হইবে। আমার দৃঢ় ধারণা—শীঘ্রই সে শুভদিন আসিতেছে; আমার বিশ্বাস—ভারত শীঘ্রই অভূতপূর্ব শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হইবে।” আজ ভারতবর্ষের রাজনৈতিক স্বাধীনতার পঁচাত্তর বৎসরে দাঁড়াইয়া স্বামীজীর বলা ভারতবর্ষের মূল সুরটির কথা বিশেষভাবে মনে পড়িতেছে। বারংবার ভারতবর্ষের উপর বৈদেশিক শক্তির আক্রমণ হইয়াছে, কিন্তু তাহার পরেও আর্যাবর্ত তাহার আধ্যাত্মিক মহিমায় অটল রহিয়াছে।
স্বামীজীর মতে, এই আধ্যাত্মিকতা কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নহে, এই আধ্যাত্মিকতা হইল মানুষের মধ্যে দেবত্বের, অনন্ত শুভশক্তির বহিঃপ্রকাশ। যাহার পাঠ কোনো পাঠশালায় দেওয়া হয় না—বহমান ভারতীয় জীবনধারায় অতি নীরবে নমনীয়তা, শ্রদ্ধা, ভক্তি, সেবা, বিশ্বাসের ন্যায় গুণগুলির বিকাশ ও চর্চা চলিয়াছে। স্বামীজী বৎসরের পর বৎসর সারা ভারতবর্ষ হাঁটিয়া ইহাই উপলব্ধি করিয়াছিলেন। ইহা প্রত্যক্ষ করিবার সহিত ভারতের শোচনীয় দুর্গতির মধ্যেও এক চিরনবীন মূর্তির সন্ধান পাইয়াছিলেন। তাই ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর বলিয়াছিলেন : “যেখানে মনুষ্যজাতির ভিতর সর্বাপেক্ষা অধিক ক্ষমা, দয়া, পবিত্রতা, শান্তভাব প্রভৃতি সদ্গুণের বিকাশ হইয়াছে—যদি এমন কোন দেশ থাকে, যেখানে সর্বাপেক্ষা অধিক আধ্যাত্মিকতা ও অন্তর্দৃষ্টির বিকাশ হইয়াছে, তবে নিশ্চয়ই বলিতে পারি, তাহা আমাদের মাতৃভূমি—এই ভারতবর্ষ।”
একবার কর্নাটকের গভীর অরণ্যের ভিতর সহ্যাদ্রি পাহাড়ে জনজাতির বাচ্চাদের একটি স্কুলে পৌঁছাইয়াছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী সুধা মূর্তি। উদ্দেশ্য—স্কুলটির উন্নতির জন্য অর্থসাহায্য করা। অনেক কষ্টে স্কুলে পৌঁছাইয়া তিনি প্রায় নব্বই বৎসর বয়স্ক এক বৃদ্ধের দেখা পাইলেন। তাঁহাকেই সবাই সেখানকার প্রধান মানে। তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, স্কুল চালাইতে কী অসুবিধা হয়? জানিলেন, সেইখানে বর্ষাকালে স্কুল বসানোই খুব কঠিন হইয়া পড়ে। কারণ, বর্ষাকালে স্কুলের জামা-কাপড়ই শুকাইতে চাহে না! বেঙ্গালুরুতে ফিরিয়া সুধা মূর্তি পরের বার কিছু ছাতা ও বাচ্চাদের জন্য পোশাক লইয়া আবার ফিরিয়া যাইলেন সেই স্কুলে। বৃদ্ধের হাতে দিলে তিনি লইতে কিছুটা ইতস্তত করিলেন। সারাদিন স্কুলে কাটাইয়া এইবার ফিরিবার পালা। ফিরিবার কালে সেই বৃদ্ধ তাঁহার হাতে একটি বোতল দিয়া বলিলেন : “গ্রীষ্মে আমাদের পাহাড়ে একটা লাল রঙের ফল হয়। আমরা তাহা হইতে রস বাহির করিয়া জমাইয়া রাখি। ইহাতে অন্য কিছুই মিশানো হয় না। স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী এই রস। এক কাপ জলে একটু মিশাইয়া খাইয়া নিও।” এইবার শ্রীমতী মূর্তি ইতস্তত করিতে লাগিলেন। তিনি যে দিতে আসিয়াছেন—লইতে আসেন নাই, তাহাও আবার এইসকল দরিদ্র সাধারণের নিকট হইতে। তাঁহার আপত্তি শুনিয়া বৃদ্ধ কহিলেন : “তাহা হইলে আমরাও আপনার দান গ্রহণ করিতে অপারগ। এই অরণ্যে আমাদের পূর্বপুরুষ বাস করিয়া গিয়াছেন। তাঁহারা আমাদের কিছু রীতি-নীতিও শিক্ষা দিয়াছেন। অন্যে আমাদের কিছু দিতে চাহিলে আমরা তাহা গ্রহণ করি—কিন্তু তখনি, যখন সেও আমাদের নিকট হইতে কিছু লইতে রাজি থাকে। আপনি প্রত্যাখ্যান করিলে আমরাও আপনার উপহার গ্রহণ করিতে পারি না।” নব্বই বৎসরের এক বৃদ্ধ আদিবাসী, যিনি কোনোদিন স্কুলে যান নাই, জীবনের এক উচ্চ আদর্শ যাপন করিয়া চলিয়াছেন—গ্রহণ করিবে, কিন্তু কিছু না দিয়া গ্রহণ করিও না। দারিদ্র আর কঠোর জীবনসংগ্রাম ইঁহাদের পথকে কখনো পুষ্পবিস্তৃত হইতে দেয় নাই, কিন্তু ইঁহারা সত্যকারের মানুষ হইয়া উঠিয়াছেন। ইঁহাদের মধ্যেই ভারতের প্রাণস্পন্দন। ইঁহাদের মাঝে সংস্কৃতির উচ্চতম প্রতিফলন দেখা যাইতেছে, ইঁহারা অধ্যাত্মসম্পদের অধিকারী।
ইঁহাদের মধ্যেই প্রকৃত ভারতবর্ষকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে, ইঁহারাই শাশ্বত ভারতবর্ষের চেতনার ধারক ও বাহক। এই ভারতবর্ষের সম্মুখে দাঁড়াইলে মনে হইবে—ইহা কোনো ভূখণ্ড নহে, ভারতবর্ষ এক সু-উচ্চ বোধের আগার; আধুনিকতার সংজ্ঞা দিয়া ইহার বিচার চলে না। আমরা বৃথাই ইহাকে আধুনিকতার মোড়কে পুরিয়া ফেলিতে চাহিতেছি। তাহাতে ক্ষতিই বেশি। ভারতবর্ষের মধ্যে রহিয়াছে এক পূর্ণতার বোধ, সযত্নে লালিত অতি গভীর এক অধ্যাত্ম-ফল্গুধারা। ইহাই ভারতের সাধনা, ইহাই ‘আধুনিকতা’—চিরবহমান। ইহাকে না চিনিতে পারিলে, ইহার বোধ না জন্মাইলে ভারত-আবিষ্কারের প্রয়াস ব্যর্থ হইবে। ভারত-নির্মাণের কথা যদি বলি, তাহা হইলে বলিতে হয়—ভারতবোধই তাহার ভিত্তি; তাই তাহার বিকাশ আজ বড় প্রয়োজন, আমাদের ‘ভারতবর্ষ’কে আবিষ্কারের নিরিখেই তা জরুরি। ভারতবর্ষের সামনে সুযোগ রহিয়াছে এই ‘চির-আধুনিক’ আধ্যাত্মিকতাকে আত্মস্থ করিবার, তাহাই নিশ্চিতভাবে ভারতবর্ষের জন্য নবদিগন্ত খুলিয়া দিবে।
স্বাধীনতার পঁচাত্তরে দাঁড়াইয়া বিবেকানন্দ-অনুধ্যান সবিশেষ জরুরি। ভারতবর্ষকে ভারতের সাধনায় মাতাইবার জন্যই বিবেকানন্দের আবির্ভাব। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরিয়া মানুষকে দেবত্বে উন্নীত করিবার যে-চেষ্টা ভারতবর্ষে সংগঠিত হইয়াছে; ভারতের প্রতিটি কোণে থাকা মানুষকে আধ্যাত্মিকতার পাঠ দিয়াছে—তাহার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও বিনম্রতা প্রদর্শন করা দরকার। কেননা প্রতিটি ভারতীয়র মনে চিরন্তন বিশ্বাস ও তাহাদের অনুশীলনের ভিতর আজও বিপুল সম্ভাবনার সুর অনুরণিত হইয়া চলিয়াছে।
যে-ঘটনার উল্লেখ করিলাম, সেইপ্রকার অজস্র উদাহরণ রহিয়াছে। এইগুলির মাধ্যমে ভারতবর্ষের প্রতিটি ভারতীয়র মধ্যে বহিয়া চলা চিরন্তন মূল্যবোধের প্রকাশই আমরা দেখিতে পাই—যেইখানে মানবহৃদয় ক্রমপ্রসারিত হইতে হইতে মানবাত্মার সেই উচ্চতাকে স্পর্শ করিবে। আর এইটি তখনি সম্ভব, যখন আমরা স্বামীজীর অভিজ্ঞানকে বিশেষরূপে অনুভব করিব। ভারতের মধ্যে বহমান আধ্যাত্মিকতাকে অনুভবের মধ্য দিয়াই আমরা ভারতীয়ত্বের সঠিক জায়গাটিকে ধরিতে পারিব। আমাদের নিজস্বতা এই আত্মজিজ্ঞাসাতেই রহিয়াছে। আমাদের পরিচয় এই আত্মনির্ভরতাতেই রহিয়াছে। আমাদের ভারতপ্রেম এই গর্বেই রহিয়াছে, যেখানে দাঁড়াইয়া আমরা সদর্পে বলিতে পারিব—“আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই। ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ।”
ভারতবর্ষ আজ যুগসন্ধিক্ষণে উপস্থিত। ভারতবর্ষ আজ যেখানে দাঁড়াইয়া এবং আগামিদিনে যেখানে পৌঁছাইবে, তাহার সবটাই বিবেকানন্দের নিকট স্পষ্ট ছিল। প্রত্যাদিষ্ট পুরুষ বিবেকানন্দ, যিনি একযুগে ইতিহাসের প্রয়োজন পূরণ করিয়াছেন এবং ভবিষ্যতের আলোকস্তম্ভরূপে বর্তমান রহিয়াছেন। ভবিষ্যৎ ভারতের যে সার্থক স্বপ্ন বিবেকানন্দ দেখাইয়াছেন, তাহা বিবেকানন্দ- সৈনিকদের কাছে প্রেরণাপ্রদ। অসামান্য ভাষায় বিবেকানন্দ বলিতেছেন : “সুদীর্ঘ রজনী প্রভাতপ্রায়া বোধ হইতেছে। মহাদুঃখ অবসানপ্রায় প্রতীত হইতেছে । মহানিদ্রায় নিদ্রিত শব যেন জাগ্রত হইতেছে।… আমাদের এই মাতৃভূমি গভীর নিদ্রা পরিত্যাগ করিয়া জাগ্রত হইতেছেন। আর কেহই এখন ইঁহার গতিরোধে সমর্থ নহে, ইনি আর নিদ্রিত হইবেন না—কোন বহিঃশক্তিই এখন আর ইঁহাকে দমন করিয়া রাখিতে পারিবে না, যেন কুম্ভকর্ণের দীর্ঘনিদ্রা ভাঙিতেছে।”
বিবেকানন্দের এই স্বপ্ন ভারতবর্ষের মানুষের ‘স্বপ্ন’, এই বিরাট বিশাল ভূখণ্ডে দাঁড়াইয়া আমাদের স্বপ্ন দেখাই স্বাভাবিক। আর ইহা এমন এক সত্যদ্রষ্টা ঋষির স্বপ্ন, যাহা ব্যর্থ হইবার নহে। তাঁহার স্বপ্নকে সার্থক করিতে হইলে ভারতের সাধনাকে আমাদের সাধনায় পরিণত করিতে হইবে। স্মরণ করি বিবেকানন্দের আহ্বান—“হে ভ্রাতৃবৃন্দ, আমাদের সকলকেই এখন কঠোর পরিশ্রম করিতে হইবে, এখন ঘুমাইবার সময় নহে। আমাদের কার্যকলাপের উপরই ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করিতেছে।” ভারতের হৃতগৌরব স্বামীজীর স্বপ্নের মানুষেরাই ফিরাইয়া দিতে পারিবে, যাহারা ভারতবোধে বোধিত। তাই আজকের ভারতের প্রতিটি নাগরিকের প্রার্থনা হউক—“মা আমার দুর্বলতা, কাপুরুষতা দূর কর। আমায় মানুষ কর।”