‘তথেন্দ্রো দেবরাট্‌ সকৃদ্‌দ্বিস্ত্রিরুক্তং চ অপ্রতিপদ্যমানঃ’—

।।১৫।। ‘তথেন্দ্রো দেবরাট্‌ সকৃদ্‌দ্বিস্ত্রিরুক্তং চ অপ্রতিপদ্যমানঃ’—দেবরাজ ইন্দ্রকে একবার, দুইবার, তিনবার উপদেশ করা হলো—তাতেও বুঝল না। একবার বলল বুঝল না, দুইবার বলল বুঝল না, তিনবার বলল বুঝল না। তারপর ‘স্বভাবদোষক্ষয়মপেক্ষ্য’—স্বভাবের যে মলিনতা সেই দোষ ক্ষয় হওয়ার পরে ‘চতুর্থে পর্যায়ে প্রথমোক্তমেব ব্রহ্ম প্রতিপন্নবান্‌’—চতুর্থবারে বুঝতে পারল। কী বুঝল? প্রথমেই যা উপদেশ করা হয়েছে ‘য এষোঽক্ষিণি পুরুষো দৃশ্যত’ ইত্যাদি মন্ত্রে, সেই ব্রহ্মতত্ত্বকে বুঝল। অর্থাৎ যেটি প্রথমেই উপদেশ করা হয়েছিল সেটিই চারবারের পর বুঝল। প্রথম তিনবার সে বুঝল না। ‘লোকেঽপি একস্মাদ্‌গুরোঃ শৃণ্বতাং কশ্চিদ্‌যথাবৎ প্রতিপদ্যতে, কশ্চিদযথাবৎ, কশ্চিদ্‌ বিপরীতং, কশ্চিৎ ন প্রতিপদ্যতে’—লোকেও [লৌকিক বিষয়ের ক্ষেত্রে] দেখা যায়—একই গুরুর কাছ থেকে উপদেশ শুনেছে যেসব শিষ্য, তাদের ভিতর থেকে ‘কশ্চিদ্‌যথাবৎ প্রতিপদ্যতে’—কেউ যেমন গুরু বলেছেন ঠিক [তেমনটি] বুঝল। ‘কশ্চিদ্‌ অযথাবৎ’—কেউ আবার ঠিক সেরকম বুঝল না। ‘কশ্চিদ্‌ বিপরীতম্‌’—কেউ আবার একেবারে বিপরীত বুঝল আর ‘কশ্চিৎ ন প্রতিপদ্যতে’—কেউ আবার কিছুই বুঝল না। এরকম ভিন্ন ভিন্ন রকমের শিষ্য থাকলে একই উপদেশে তাদের ভিন্ন ভিন্ন ফল হয়। সাধারণ লৌকিক বিদ্যার বিষয়েই যখন এইরকম বিভিন্নতা দেখা যায়, ‘কিমু বক্ত-ব্যমতীন্দ্রিয়মাত্মতত্ত্বম্‌’—তখন অতীন্দ্রিয় আত্মতত্ত্ব সম্বন্ধে কী আর বক্তব্য থাকতে পারে! এখানে উপদেশের যে-বিষয়টি সেটি ইন্দ্রিয়াতীত আত্মতত্ত্ব; সুতরাং তার সম্বন্ধে যে-উপদেশ—তা যে সকলে ঠিকঠিক বুঝবে না সেটাই স্বাভাবিক, এটাই ধরে নেওয়া যায়। এই আত্মতত্ত্বকে এক কথায় উপদেশ দিলেই যে বুঝে যাবে—এ কী করে হয়! অন্যথাগ্রহণে হেতু—বাদিপ্রতিপত্তি শাঙ্করভাষ্য—অত্র হি বিপ্রতিপন্নাঃ সদসদ্বাদিন-স্তার্কিকাঃ সর্বে। তস্মাদ্‌বিদিতং ব্রহ্মেতি সুনিশ্চিতোক্তমপি বিষমপ্রতিপত্তিত্বাদ্‌  যদি মন্যসে ইত্যাদি সাশঙ্কং বচনং যুক্তমেবআচার্যস্য। ব্যাখ্যা—‘অত্র হি’—এখানে এই ব্রহ্মবিষয়ে ‘বিপ্রতিপন্নাঃ’ [বিবিধরূপে প্রতিপন্না]—বিভিন্ন প্রকারের জ্ঞানসম্পন্ন হয়ে থাকেন [ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ পোষণ করেন] ‘সদসদ্বাদিনস্তার্কিকাঃ’—সদসদ্বাদী তার্কিকেরা। অর্থাৎ কেউ সদ্বাদী [সাংখ্য, ন্যায়, বৈশেষিক], কেউ অসদ্বাদী [বৌদ্ধ, চার্বাক] এইরকম ‘সর্বে তার্কিকাঃ’—সকল তর্কপরায়ণ ব্যক্তি নানারকম বলে থাকেন ব্রহ্ম বিষয়ে। কারণ, এই তত্ত্বটি অতিশয় দুর্গম। ‘তস্মাদ্‌’—অতএব ‘বিদিতং ব্রহ্ম ইতি’—ব্রহ্মকে জেনেছি এইরূপে ‘সুনিশ্চিতোক্তম্‌ অপি’—সঠিকভাবে, নিশ্চিতরূপে উক্ত হলেও; ‘বিষমপ্রতিপত্তিত্বাৎ’—ঐরূপ উক্তির যথার্থ অর্থগ্রহণ বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা থাকার জন্য ‘বিষমপ্রতিপত্তি’ অর্থাৎ এর বিরুদ্ধ, বিপরীত জ্ঞানও সম্ভবপর...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in