‘বৃষকাঠ’—অধুনা বাঙালির কাছে প্রায় অচেনা, অশ্রুত একটি শব্দ; অথচ এককালে তা

বৃষকাঠঅশোককুমার কুণ্ডুপ্রকাশক :মালা ঘোষচার্বাকপিকনিক গার্ডেন রোডকলকাতা-৭০০০৩৯৭৫০.০০ ‘বৃষকাঠ’—অধুনা বাঙালির কাছে প্রায় অচেনা, অশ্রুত একটি শব্দ; অথচ এককালে তা ছিল বাংলার লৌকিক ঐতিহ্য, পরলোকগামীর স্মৃতিতর্পণের চিহ্ন এবং লোকশিল্পের অসামান্য নিদর্শন। বৃষকাঠ হলো বৃষোৎসর্গ শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে নিবেদিত প্রমাণ আকারের কাঠের তৈরি নকশা-খোদাই স্তম্ভ। বেল অথবা নিম গাছের গুঁড়িকে খোদাই করে আট-দশ স্তরে বিন্যস্ত হয় তার নানান শৈলী। অস্তাচলগামী এই সুচারু দারুশিল্পের প্রসঙ্গ প্রায় অনালোচিত থেকে গিয়েছে এতকাল। লোকগবেষক অশোককুমার কুণ্ডু বাংলার গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন প্রাচীন বাংলার এই অনন্য দারুভাস্কর্যের ইতিবৃত্ত। বাংলার লোকশিল্প ও সংস্কৃতিচর্চায় এই গ্রন্থ এক অভিনব সংযোজন। একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ না করে পারা গেল না। লেখক লিখেছেন : “শ্যামপুর গ্রামে আর একটি বৃষকাঠ, এটির গঠন শৈলী ভিন্ন। সরু কাঠের লগ। শিল্পীর খবর পাওয়া গেল। কিন্তু এই গ্রামেই পেঁাতা এমনই বৃষকাঠ দেখা গেল। যেটি সমস্ত বৃষকাঠের শৈলী থেকে পৃথক। এটির নির্মাতা শিল্পী দীনবন্ধু চন্দ্র। তিনি হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের কুড়চি গ্রামের বাসিন্দা। বৃষকাঠটি তৈরি হয় ৺শঙ্করীপ্রসাদ বসুর শ্রাদ্ধে। প্রয়াত মানুষটির নাম ও শিল্পীর নাম লাল রঙে লেখা। এখানে পুতুল, স্ত্রী মূর্তির ওপরে বাঘের মুখ। তার ওপরে বৃষ। তার ওপরে শিবলিঙ্গসহ যোনিপীঠ নেই। বসে আছেন স্বয়ং শিব বাগছাল পরে—আঁকা। শিবের মাথার ওপরে নিসর্গ চিত্র আঁকা। এটি ভিন্নতর।” বৃষকাঠ বিনির্মাণের কথা, সেকালের বৃষোৎসর্গ শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের বৃত্তান্ত এবং এই লোকশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষের জীবনযাপনের চিত্র আলোচ্য গ্রন্থে প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। রচনার সাহিত্যগুণে, বিশেষত আর্ট পেপারে বৃষোৎসর্গ অনুষ্ঠান ও বৃষকাঠের আলোকচিত্রগুলি পাঠককে নিয়ে যাবে প্রাচীন বাংলার এক বিস্মৃত লোকাচারের আঙিনায়। এই গ্রন্থ পাঠ যেন এক চা‌ক্ষুষ অভিজ্ঞতা! লেখককে অভিনন্দন। 

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹120/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in