‘তন্যতে বিস্তার্যতে জ্ঞানম্ অনেন ইতি তন্ত্রম্’ অর্থাৎ যে-শাস্ত্রের দ্বারা জ্ঞান বৃদ্ধি পায়, তাকে তন্ত্র বলে। কামিকাগম তন্ত্রকে বলা হয়েছে এক শ্রেণির টেক্সট (Text), যেখানে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে—

‘তন্যতে বিস্তার্যতে জ্ঞানম্ অনেন ইতি তন্ত্রম্’ অর্থাৎ যে-শাস্ত্রের দ্বারা জ্ঞান বৃদ্ধি পায়, তাকে তন্ত্র বলে। কামিকাগম তন্ত্রকে বলা হয়েছে এক শ্রেণির টেক্সট (Text), যেখানে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে—‘তনোতি বিপুলানর্থান্ তত্ত্বমন্ত্র-সমন্বিতান্’ অর্থাৎ যা তত্ত্ব ও মন্ত্রকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে। দুটি শব্দ ‘তত্ত্ব’ ও ‘মন্ত্র’র বিশেষ অর্থ আছে : তত্ত্বের অর্থ—মহাজাগতিক মূলতত্ত্বের বিজ্ঞান (Science of Cosmic Principles)। আর মন্ত্রের অর্থ—অতীন্দ্রিয় শব্দের বিজ্ঞান (The Science of the mystic sound)। সুতরাং ঐসকল বিজ্ঞানের মধ্যে প্রয়োগ-সম্বন্ধ আছে। উদ্দেশ্য—আধ্যাত্মিক অনুভূতি লাভ করা। সেজন্য তন্ত্রকে শ্রুতি বা আগম, অনুভূতি হিসাবে ধরা হয়—যা স্মৃতি বা নিগম বা ঐতিহ্যের বিপরীত। তন্ত্রকে বেদের সঙ্গে এক ধরা হয়, সেজন্য এর অপর নাম ‘শ্রুতিশাখাবিশেষঃ’—বেদের একটি শাখা। তন্ত্রের সবচেয়ে পুরানো পাণ্ডুলিপির মধ্যে নিঃশ্বাসতত্ত্ব সংহিতা-তে আছে—তন্ত্র হচ্ছে বেদান্ত ও সাংখ্যের অতীন্দ্রিয় বিজ্ঞানের সমন্বয়। প্রকৃতপ‌ক্ষে, ব্রহ্ম বা শিবের পরম সত্যের সঙ্গে তাঁর শক্তির প্রকাশস্বরূপ এই বিশ্বের বৈধতাকে সংযুক্ত করে তন্ত্র। শিবের অর্ধাঙ্গিনী তাই প্রথম বেদান্ত উপদেশ দেয়, তারপর সাংখ্যের পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব এবং শেষে শিবতন্ত্র। প্রাচীন তন্ত্রগ্রন্থের অন্যতম পিঙ্গলামাতাতে উল্লেখ আছে —তন্ত্র প্রথম বলেন শিব, তাঁর কাছ থেকে পরম্পরায় তা চলে আসছে। এটি আগম, তবে ছন্দোবদ্ধ (বেদ)।”১ পরবর্তিকালে সব তন্ত্রশাস্ত্র ঐ কথাই বলে থাকেন। কুলার্ণবতন্ত্র, প্রপঞ্চসার এবং অন্যান্য তন্ত্রগ্রন্থে আছে যে, কুলধর্মের ভিত্তি বেদান্তের সত্য, বৈদিক মহাবাক্য ও মন্ত্র। নিরুত্তরতন্ত্রকেও ‘পঞ্চমবেদ’ বলা হয়। এইটি সকলে অনুসরণ করেছেন।২ তন্ত্রক্রিয়া প্রাথমিকভাবে বেদের ক্রিয়াকাণ্ডের মতোই। এর উদ্দেশ্য—শিবশক্তির মিলন। তন্ত্র শুধুমাত্র নতুন নতুন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে না, বৈদিক ধর্মের কঠিন কঠিন ক্রিয়াকে আরো সরলীকরণ করে। উপনিষদ ও ব্রাহ্মণে এসব দেখা যায়। তন্ত্রসাধনার দার্শনিক ভিত্তি সাংখ্য ও যোগ। এককথায় বলা যায়, তন্ত্রের উৎস বেদ।৩ শাস্ত্রমূলক ভারতীয় শক্তিসাধনা পুস্তকের ভূমিকাতে উপেন্দ্রকুমার দাস তন্ত্রের গভীরতা ব্যাখ্যা করেছেন : “তন্ত্র অদ্বৈততত্ত্বের সাধনশাস্ত্র, পারমার্থিক শাস্ত্র, এ শাস্ত্র লৌকিকবুদ্ধিগম্য বিচারশাস্ত্র নয়। গুরুগম্য এই শাস্ত্রের গভীরতত্ত্ব সদ্গুরুর উপদেশ ভিন্ন হয় না। “তন্ত্রশাস্ত্র প্রত্যক্ষফলপ্রদ, বৈজ্ঞানিক যুগের উপযোগী শাস্ত্র। লোকে...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in