সাধারণ অর্থে ‘তপস্যা’ কোনো মহান কার্যসাধনের উদ্দেশ্যে কঠোরতা অবলম্বনকেই বোঝায়।

সাধারণ অর্থে ‘তপস্যা’ কোনো মহান কার্যসাধনের উদ্দেশ্যে কঠোরতা অবলম্বনকেই বোঝায়। কিন্তু দ্যোতনা অনুসারে ‘তপস্যা’ বিশেষভাবে আধ্যাত্মিক উপলব্ধি অথবা দৈবশক্তির কৃপালাভের প্রচেষ্টার সঙ্গেই সম্পৃক্ত। আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষের ঊষাকাল থেকে সময়ান্তরে তপস্যার প্রকৃতিগত ক্রমপরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করি। সদ্য অতীতে আমরা অবতারপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের দীর্ঘ বারো বছরের কঠিন সাধনার ইতিহাস জেনেছি। দেহবোধ তুচ্ছ করা তাঁর সেই তপস্যাও ছিল নির্মম। গীতাতে আমরা সাধকের যোগ্যতা অনুসারে পরমতত্ত্ব উপলব্ধির চারটি পৃথক পদ্ধতির উল্লেখ পাই।১ শ্রীরামকৃষ্ণও ত্যাগব্রতী ও গৃহিভক্তদের তাদের আধার অনুসারে পথনির্দেশ দান করতেন। কিন্তু সকলকেই মানবজীবনের উদ্দেশ্য ‘জো-সো করে’ ভগবানলাভের জন্য তপস্যার অপরিহার্যতার কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।২ শ্রীরামকৃষ্ণের অধ্যাত্ম ভাবের দিব্য উত্তরাধিকারী ছিলেন তাঁর ‘মানসপুত্র’ স্বামী ব্রহ্মানন্দজী। তাঁর মননালোকে প্রতিভাত ‘তপস্যা’ সম্পর্কে জানতে আমরা তাঁর বিভিন্ন উক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করব। যে একনিষ্ঠ তপস্যায় তিনি ‘আত্মারাম’, ‘স্থিতপ্রজ্ঞ’ হয়েছিলেন, প্রাণের দেবতার সাথে নিজেকে একসূত্রে গেঁথেছিলেন—তাঁর দিব্যজীবনের সেই অংশেও মনোনিবেশ করব। প্রত্যাশিত প্রারম্ভিক জিজ্ঞাসা এটাই—তপস্যা গুরুত্বপূর্ণ কেন? স্বামী ব্রহ্মানন্দজী ব্যক্ত করলেন: “তাঁকে জানবার জন্যই তপস্যা। তপস্যা ছাড়া কি কিছু হয়?… দেখছ না অবতারপুরুষদের পর্যন্ত কত খাটতে হয়েছে! কেউ কি না খেটে কিছু পেয়েছে?৩ এই ‘খাটা’ যদি অপরিহার্যই হয়, তবে আমাদের জানতে হবে তার অভিমুখ কী, করণীয় কী? এরই সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট মন্তব্যে স্বামী ব্রহ্মানন্দজী বোঝালেন : “দু-পয়সার ঘুঁটে কিনে জ্বালিয়ে আগুনের মধ্যে বসা তো খুব সোজা। কাম-ক্রোধাদি রিপুগুলি দমন করে রাখা, ওদের express (প্রকাশ) হতে না দেওয়াই তো তপস্যা।”৪ একটি কথোপকথনে তাঁর তপস্যা সম্পর্কিত আলোচনা থেকে যে মূল কয়েকটি ধারণা প্রতীত হয়, তা হলো—১) শারীরিক কৃচ্ছ্রতারূপ তপস্যা প্রধানত সকাম। ২) মনকে জয় করে আত্মোপলব্ধির জন্য তপস্যা বহুগুণ কঠিন। ৩) প্রকৃত তপস্যা হলো সত্যাশ্রয়ী, কামজয়ী ও বাসনাজয়ী হওয়া।৫ বস্তুত, শারীরিক কৃচ্ছ্রতারূপ বাহ্য তপস্যা গৌণ হিসাবেই বিবেচিত হয়েছে শাস্ত্রমতে।৬ ব্রহ্মজ্ঞানপ্রাপ্তি বা তত্ত্বোপলব্ধি বা ঈশ্বরলাভ করার জন্য তপস্যা যে-পদ্ধতিতেই অনুশীলিত হোক, সাধককে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু গুণ অর্জনের দ্বারা অধিকারী হয়ে উঠতে হয়।...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in