সেদিন ৩১ অক্টোবর ১৮৮৫। শ্রীরামকৃষ্ণ রয়েছেন শ্যামপুকুরবাটীতে। ডাক্তার মহেন্দ্রলাল

[পূর্বানুবৃত্তি : জ্যৈষ্ঠ সংখ্যার পর]।।১০।।ষোলোশ্রীরামকৃষ্ণ-পরিমণ্ডলে গায়ক, কবি, সাহিত্যিক সেদিন ৩১ অক্টোবর ১৮৮৫। শ্রীরামকৃষ্ণ রয়েছেন শ্যামপুকুরবাটীতে। ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার এসেছেন, নরেন্দ্রনাথ তাঁকে গান শোনাচ্ছেন; শুনতে শুনতে শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়ছেন। এদিকে গলায় ক্যান্সার—প্রচণ্ড যন্ত্রণা। তাঁর ভাবাবেশে ডাক্তার চিন্তিত হচ্ছেন দেখে তিনি ভাব উপশমের বিহিত করলেন : “ওই গানটি হলে আমি থামব;—হরিরস মদিরা।” নরেন্দ্রনাথ এসে তাঁকে গেয়ে শোনালেন—‘হরিরসমদিরা পিয়ে মম মানস মাতো রে’। যে-গানটি শুনে শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবদশা ছেড়ে নেমে এসেছিলেন, সেটির রচয়িতা পুণ্ডরীকাক্ষ মুখোপাধ্যায়—আচার্য বিজয়কৃষ্ণের সতীর্থ ও ব্রাহ্মসমাজের সদস্য, জন্মস্থান নদিয়ার শান্তিপুরে। ইনি ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের প্রসিদ্ধ গায়ক। তাঁর রচিত ‘এস মা এস মা, ও হৃদয় রমা’ গানটি স্বামীজীর অন্যতম প্রিয়; এছাড়াও তিনি একাধিকবার গেয়েছেন পুণ্ডরীকা‌ক্ষ রচিত এই গানগুলি—‘সুন্দর তোমার নাম’, ‘আমার প্রাণপিঞ্জরের পাখি’, ‘সত্যং শিব সুন্দর রূপ-ভাতি হৃদিমন্দিরে’, ‘কি সুখ জীবনে মম ওহে নাথ দয়াময় হে’ এবং ‘আনন্দ বদনে বল মধুর ব্রহ্মনাম’। এই গানগুলি শুনে শ্রীরামকৃষ্ণের ভাব উথলে উঠেছে। এছাড়া পুণ্ডরীকাক্ষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা একটি গান শ্রীরামকৃষ্ণও গাইতেন বলে জানা যায়—‘জীবন-বল্লভ তুমি (হরি) দীন-শরণ’।৩০০ ‘সত্যং শিব সুন্দর’ গানটি নরেন্দ্রনাথ দত্ত ও বৈষ্ণবচরণ বসাক সংকলিত সঙ্গীতকল্পতরুতেও পাওয়া যায়। পুণ্ডরীকাক্ষ মুখোপাধ্যায় রেলের কর্মচারী হলেও অবস্থা তেমন সচ্ছল ছিল না। আদি ও সাধারণ ব্রাহ্মসমাজে তিনি গান গাইতেন। ব্রাহ্মসমাজের গায়ক রাজকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এঁর কাছেই সংগীতশিক্ষা করেন। সংগীতে ব্রাহ্মসমাজের সদস্যদের মনোহরণ এবং একইসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণকে তৃপ্তিদান করেছেন আরেকজন নদিয়ার মানুষ—ত্রৈলোক্যনাথ সান্যাল। তাঁর জন্ম ১৮৪০ সালে নবদ্বীপের কাছে চক-পঞ্চানন গ্রামে এক কুলীন বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে। পিতা রামনিধি সুগায়ক ছিলেন। গ্রামের বিদ্যালয়ে তাঁর ছেলেবেলায় সামান্য লেখাপড়া হয়েছিল। সেসময় থেকেই তাঁর উদাস মনোভাব ও সংগীতের প্রতি অনুরাগ দেখা যেত।৩০১ এই সময়ে একটি ভ্রাম্যমাণ যাত্রাদলে তিনি যোগ দেন। কিছুদিন পরে যাত্রা-সংস্রব ছেড়ে তিনি কলকাতায় এসে একবছর বাস করেন। সেসময় তিনি আদি ব্রাহ্মসমাজে যাতায়াত করতেন। পরে স্কুলে শিক্ষকের চাকরি নিয়ে দিনাজপুরে যান এবং সেখান থেকে একবার শান্তিপুরে এলে আচার্য বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর প্রভাবে ১৮৬২ সালে ব্রাহ্মসমাজে যোগদান...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹120/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in