শ্রীরামকৃষ্ণের ভৈরব ভক্ত গিরিশচন্দ্র ঘোষ। তাঁর অন্তর্জীবনের কাহিনি কোনো নাটকের চেয়ে

[পূর্বানুবৃত্তি : চৈত্র সংখ্যার পর]।।৯।।চোদ্দোনদিয়ায় শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্তবৃন্দ শ্রীরামকৃষ্ণের ভৈরব ভক্ত গিরিশচন্দ্র ঘোষ। তাঁর অন্তর্জীবনের কাহিনি কোনো নাটকের চেয়ে কম নয়। প্রথম ধর্মজীবনের উন্মেষে কয়েকটি পৌরাণিক নাটক লিখলেও তাঁর বাস্তব ধর্মজীবন ও গুরুলাভের মূল কারণ তাঁর লেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক ‘চৈতন্য-লীলা’। এই সময়ে গিরিশচন্দ্রের প্রাণ কাতর হয়ে উঠেছে, নাটকে তার সৃজনশীল অভিব্যক্তি ঘটল। নাটক মঞ্চস্থ করার আগে মঞ্চের ‘সিন’ বা প্রেক্ষাপট আঁকার জন্য একজন চিত্রকরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সেই চিত্রকর ছিলেন গৌরাঙ্গ-ভক্ত। গৌরাঙ্গের মাহাত্ম্য তাঁকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেন : “কি শক্তি গোরার গুণ কহি মহাশয়।।বড়ই সুন্দর গোরা দয়ালপ্রকৃতি।ভক্তিভরে ঘরে রাখি গোরার মূরতি।।দীন হীন দুঃখী আমি দিন খেটে খাই।সঙ্গতি এমতি কিছু ঘরে মোর নাই।।খুদকুঁড়া যাহা পাই থালে সাজাইয়া।গোউরের কাছে রাখি গোউর বলিয়া।।কিছু পরে ভোজ্য-পাত্রে করি নিরীক্ষণ।দয়াময় গোউরের ভোজন-লক্ষণ।।”২৬০ চিত্রকরের কথা শুনে গিরিশচন্দ্র প্রাণের আবেগে কেঁদে আকুল হন। এই সময়েই তাঁর হাতে আসে চৈতন্যচরিতামৃত। নদিয়াবিহারী শ্রীগৌরাঙ্গ-নিত্যানন্দের চরিত্র আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে গিরিশচন্দ্র দাঁড় করালেন ‘চৈতন্য-লীলা’ নাটক। চারিদিকে সাড়া পড়ে গেল। নাটক দেখে নদিয়ার আরেক সুসন্তান বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী প্রেমোন্মত্ত হয়ে দর্শকের আসন থেকেই নৃত্য করতে থাকেন। শ্রীগৌরাঙ্গের লীলা-বিবৃতি ‘চৈতন্য-লীলা’ নাটকের ফল সমাজে ফলল। সকল শ্রেণির মানুষ যেন পাগল হয়ে উঠল এই নাটক দেখতে। এমনকী যারা নাটকের নাম শুনলে নাক সিটকাত, তারাও দেখতে এল। সেইসঙ্গে গৌরাঙ্গের ভূমিকায় বিনোদিনীর অভিনয়ও হৃদয়গ্রাহী হয়। গিরিশবাবু জানিয়েছেন, অভিনয় দর্শনে অনেক ভাবুক এমন বিভোর হয়েছিল যে, বিনোদিনীর পদধূলি নিতে উৎসুক হয়!২৬১ একটি ঘটনায় ‘চৈতন্য-লীলা’ নাটকের সঙ্গে নদিয়া-যোগ স্পষ্ট করে দিলেন ব্রজনাথ বিদ্যারত্ন ও তাঁর ছেলে মথুরানাথ পদরত্ন। এই ব্রজনাথ বিদ্যারত্নকেই শ্রীগৌরাঙ্গ দিব্য নৃত্যময় কিশোরমূর্তিতে দেখা দিয়েছিলেন; নবদ্বীপে ‘নাটুয়া গৌর’ মূর্তি এঁরই প্রতিষ্ঠিত। পুঁথিকার লিখেছেন : “ব্রজ বিদ্যারত্ন নামে ভক্ত একজন।নবদ্বীপে বাস জেতে গোস্বামী ব্রাহ্মণ।।গোরা-ধ্যান গোরা-জ্ঞান গোরা-পদে মতি।গোউর-চরণ সেবে ঘরে দিবারাতি।।মূরতি রাখিয়া ঘরে অতি ভক্তিভরে।”২৬২ মথুরানাথ পদরত্ন কলকাতায় এসে ‘চৈতন্য-লীলা’র ভক্তিমাখা গীত শুনে মুগ্ধ হন। তিনি অভিনয় দেখে মঞ্চে গিয়ে শ্রীচৈতন্যের ভূমিকায়...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in