নীলাচল পুরীর সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক বহুদিনের, এমনকী শ্রীচৈতন্যেরও পূর্বের। মহাপ্রভু-পূর্ববর্তী

নীলাচল পুরীর সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক বহুদিনের, এমনকী শ্রীচৈতন্যেরও পূর্বের। মহাপ্রভু-পূর্ববর্তী প্রজন্মের বাসুদেব সার্বভৌম নবদ্বীপ ছেড়ে পুরীতে এসে বাস করছিলেন। সন্ন্যাসের পর শ্রীচৈতন্য জগন্নাথধাম পুরীতে বাস করার ফলে পুরীর সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক নিবিড় হয়েছিল। প্রতি বছর বাংলা থেকে ভক্তেরা যেতেন, সেখানে কয়েক মাস বাস করতেন। সেখানকার ও পথের তীর্থগুলিও গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের নিজস্ব হয়ে গিয়েছিল। শ্রীচৈতন্যের তিরোধানের পর সম্পর্ক খানিকটা ক্ষীণ হলেও ততদিনে বাংলার আপামর জনতার মধ্যে পুরী-জগন্নাথ-শ্রীচৈতন্য—এই ত্রয়ী অচ্ছেদ্য বাঁধনে ধরা পড়েছেন। জগন্নাথ কৃষ্ণ-বিষ্ণুর প্রতিরূপ হিসাবেও অনেক জায়গায় স্থান করে নিয়েছেন। যে গৌড়ীয়-বৈষ্ণব পরিমণ্ডলে এই মর্যাদা লাভ করেছিলেন জগন্নাথ ও তাঁর শ্রীধাম, তার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল মল্লভূমের রাজধানী বিষ্ণুপুর। আচার্য শ্রীনিবাসের মাধ্যমে মল্লরাজা ও মল্লভূম-কৃষ্টির প্রভাব জনজীবনে, সংস্কৃতিতে ও ধর্মে বিস্তৃত হয়েছিল বাঁকুড়া, মেদিনীপুরের একাংশ, বাঁকুড়া-সংলগ্ন বর্ধমান ও হুগলি অঞ্চলে, বিশেষত দামোদরের অববাহিকা ধরে। এই মল্লভূমের ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক আবহের অন্তর্ভুক্ত কামারপুকুর-জয়রামবাটী শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীমা সারদাদেবীর জন্মস্থল। শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান কামারপুকুরের ভৌগোলিক অবস্থান বোঝাতে গিয়ে স্বামী সারদানন্দজী জানাচ্ছেন, বর্ধমান থেকে একটি পাকা রাস্তা কামারপুকুরকে প্রায় ‘অর্ধবেষ্টন’ করে দক্ষিণ-পশ্চিম অভিমুখে পুরী পর্যন্ত চলে গেছে।১ এই পথেই অগণিত তীর্থযাত্রী পুরীধাম দর্শনে যেতেন। আবার বহু তৈর্থিক সন্ন্যাসী গঙ্গাসাগর আসা-যাওয়ার পথে দক্ষিণেশ্বরে বিশ্রাম নিতেন। ফলে পুরীধাম ও জগন্নাথের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদাদেবীর আত্মিক পরিচয় ছিল। রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ বাণীতে পুরী ও জগন্নাথ শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশাবলির মধ্যে খুব সহজভাবেই পুরী ও জগন্নাথ প্রসঙ্গ এসেছে। তিনি ঈশ্বরের অচিন্ত্য ভাব প্রসঙ্গে বলেছেন : “একজন সন্ন্যাসী জগন্নাথদর্শন করতে গিছিল। জগন্নাথদর্শন করে সন্দেহ হল ঈশ্বর সাকার না নিরাকার। হাতে দণ্ড ছিল, সেই দণ্ড দিয়ে দেখতে লাগল, জগন্নাথের গায়ে ঠেকে কিনা। একবার এ-ধার থেকে ও-ধারে দণ্ডটি নিয়ে যাবার সময় দেখলে যে, জগন্নাথের গায়ে ঠেকল না—দেখে যে সেখানে ঠাকুরের মূর্তি নাই! আবার দণ্ড এ-ধার থেকে ও-ধারে লয়ে যাবার সময় বিগ্রহের গায়ে ঠেকল; তখন সন্ন্যাসী বুঝলেন যে ঈশ্বর নিরাকার, আবার সাকার।”২ যথার্থ ব্যাকুলতা থাকলে তার জোরেই ঈশ্বরলাভ করা যায়।...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in