নীল সমুদ্রের জলে আবির-গোলা মাখিয়ে দিয়ে পূর্ব দিগন্তে সূর্য সবে উঠল। আমরা খুব ভোরে
নীল সমুদ্রের জলে আবির-গোলা মাখিয়ে দিয়ে পূর্ব দিগন্তে সূর্য সবে উঠল। আমরা খুব ভোরে স্বর্গদ্বার থেকে হাঁটতে হাঁটতে চক্রতীর্থে এসে পৌঁছেছি। পিছনে আমাদের পুরী রামকৃষ্ণ মঠ। সামনে আছড়ে পড়ছে নীল সাগরের ঢেউ সাদা ফেনার মুকুট মাথায় দিয়ে। এখনো এদিকে দর্শনার্থীদের ভিড় শুরু হয়নি। সহযাত্রী ব্রহ্মচারীকে নিয়ে বালির ওপরই বসে পড়েছি। বাঁপাশে একটু দূরে বালির মধ্যে কালোপাথরের বেশ বড় একটি চক্র, তারও পিছনে রাস্তার ওপর চক্রনৃসিংহের প্রাচীন মন্দিরে ক্ষুদ্রাকৃতি চক্রনৃসিংহ বিগ্রহ। এই স্থানটি পুরীর প্রাচীন ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লিখিত আছে। এখানে বসে শ্রীজগন্নাথদেবকে স্মরণ করছিলাম। “নীলাদ্রৌ শঙ্খমধ্যে শতদলকমলে রত্নসিংহাসনস্থম্।/ সর্বালংকারযুক্তং নবঘনরুচিরং সংযুতং চাগ্রজেন।।/ ভদ্রায়া বামভাগে রথচরণযুতং ব্রহ্মারুদ্রেন্দ্রবন্দ্যম্।/ বেদানাং সারমীশং স্বজনপরিবৃতং ব্রহ্মদারুং স্মরামি।।” অর্থাৎ নীলপর্বতের শঙ্খক্ষেত্র-মধ্যে শতদলপদ্মে প্রতিষ্ঠিত রত্নসিংহাসনে বিরাজিত, নানা দিব্য অলংকারে সুসজ্জিত, নবীন মেঘবর্ণ দেহ, জ্যেষ্ঠভ্রাতা ও ভদ্রাদেবীর বামভাগে স্থিত, রথারূঢ়, ব্রহ্মা-রুদ্র-ইন্দ্রদেবের নিত্যপূজিত, সমগ্র বেদাদি শাস্ত্রের প্রকাশিত মূলতত্ত্ব যিনি—স্বজনপরিবৃত সেই দারুব্রহ্মকে আমি স্মরণ করি। এই মন্ত্র আবৃত্তি শুনে সহযাত্রী ব্রহ্মচারী বললেন : “এই তীর্থের উপযুক্ত মন্ত্রই আবৃত্তি করলেন।” বললাম : “হ্যাঁ, তাই তো। এই সেই স্থান, যেখানে জগন্নাথদেবের আদি বিগ্রহের ‘দারু’ ভেসে এসেছিল সেই কোন প্রাচীন যুগে।”… ব্রহ্মচারীকে বললাম : “এবার (১৯৯৬) তো শুনছি, ১৪ জুন ‘নবকলেবর’ হচ্ছে। এই সম্পর্কে তুমি কিছু বল—তুমি তো এখানে বেশ কিছুদিন আছ। এখানকার বিশিষ্ট পাণ্ডা, পুরোহিত, গবেষক ও লেখকরা এবিষয়ে কী বলেন তুমি কি জান?” লাজুক ব্রহ্মচারী অনেক ওজর-আপত্তি করে অবশেষে শোনাতে লাগল : মাদলাপঞ্জির অভিমত—১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুলাই থেকে জগন্নাথদেবের নবকলেবর উৎসব শুরু হয়। এরপর প্রায় তিনশো বছর নবকলেবর সংক্রান্ত কোনো সংবাদ পাওয়া যায় না। একেবারে ঊনবিংশ শতাব্দীতে নবকলেবরের খবর দেখা যায়—১৮৬৩ এবং ১৮৯৩ সালে দুবার। আর এই শতাব্দীতে এপর্যন্ত ১৯৩১, ১৯৫০, ১৯৬৯ ও ১৯৭৭-এ চারবার নবকলেবর হয়েছে। এবছর (১৯৯৬) এই শতাব্দীর শেষ নবকলেবর। নবকলেবর পুরীর জগন্নাথদেবের উৎসবাদির মধ্যে একটি অতি বিশিষ্ট অনুষ্ঠান। সাধারণত কোনো বছর আষাঢ় মাসে যদি দুটি অমাবস্যা পড়ে তবে সেই ‘মল’ আষাঢ় মাসকে ‘অধিমাস’...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
