মাতৃহৃদয়ের স্নেহ-ভালবাসা প্রত্যেকের জীবনেই গভীর রেখাপাত করে। শ্রীশ্রীমায়ের
মাতৃহৃদয়ের স্নেহ-ভালবাসা প্রত্যেকের জীবনেই গভীর রেখাপাত করে। শ্রীশ্রীমায়ের নিঃস্বার্থ ভালবাসার স্পর্শ পাষাণ-হৃদয়কেও দ্রবীভূত করেছিল। গৃহী হোন কিংবা সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী—মাকে ভুলে থাকা কারো পক্ষেই সম্ভব ছিল না, বরং তা জীবনকে এক নতুন দিগ্দর্শন করিয়েছিল। মাস্টার মহাশয় অর্থাৎ কথামৃতকার মহেন্দ্রনাথ গুপ্তের জীবনে শ্রীশ্রীমায়ের প্রভাব ছিল অমোঘ। শ্রীশ্রীমায়ের মধ্যেই তিনি পেয়েছিলেন জগন্মাতা ও গর্ভধারিণী জননীকে। এই অভেদমূর্তি দর্শনের অন্তরালে ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। তিনিই মাতৃহারা মহেন্দ্রনাথকে এক চিরন্তন মায়ের সন্ধান দিয়েছিলেন। মহেন্দ্রনাথ চারবছর বয়সে একবার গর্ভধারিণীর সঙ্গে নৌকায় করে মাহেশের রথ দেখে ফিরছিলেন। পথে পড়ল রানি রাসমণির ঠাকুরবাড়ি। নৌকার যাত্রীরা কালীদর্শনমানসে কালীবাড়ির চাঁদনির ঘাটে নামলেন। তারপর এদিক-সেদিক ঘুরে মহেন্দ্রনাথ যখন কালীমন্দিরের কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন, তখন তাঁর খেয়াল হলো—তাঁর গর্ভধারিণীর থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন। মাতৃসান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত বালক যখন কাঁদছেন, এমন সময় এক সৌম্যদর্শন ব্রাহ্মণ কালীঘর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁর মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন। তাঁর অভয়স্পর্শে বালক মহেন্দ্রনাথ কান্না থামিয়ে শান্ত হয়ে একদৃষ্টে সেই সৌম্যমূর্তিকে দেখতে লাগলেন। সেই যাত্রায় তিনি তাঁর গর্ভধারিণীকে খুঁজে পেয়েছিলেন, কিন্তু সেই সৌম্যদর্শন ব্রাহ্মণের পরিচয় তখন জানতে পারেননি। এর অনেক কাল পরে তিনি যখন দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণকে প্রত্যক্ষ করেন, তখন তাঁর মনে হয়েছিল—“হয়তো বা ঠাকুরই হবেন; কারণ তার কিছুদিন (চার বৎসর) আগে রানি রাসমণি দক্ষিণেশ্বরে কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং ঠাকুর তখন মা কালীর পূজকপদে রয়েছেন।”১ কৈশোরেই মহেন্দ্রনাথ গর্ভধারিণীকে হারান। একদিন তিনি মায়ের শোকে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে দেখেন, তাঁর গর্ভধারিণী সস্নেহে তাঁকে বলছেন : “আমি এযাবৎ তোকে লালনপালন করেছি, পরেও তা-ই করব; তবে তুই দেখতে পাবি না।”২ কৈশোরে দেখা সেই স্বপ্ন পরবর্তিকালে বর্ণে বর্ণে সত্য হয়েছিল। কর্মজীবনে মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ছিলেন একজন অসাধারণ শিক্ষক। রাখাল মহারাজ, বাবুরাম মহারাজ, খোকা মহারাজ, পূর্ণচন্দ্র ঘোষ, তেজচন্দ্র, ক্ষীরোদ প্রমুখ ঠাকুরের অন্তরঙ্গ যুবকগণ তাঁরই ছাত্র ছিলেন। মহেন্দ্রনাথের সংস্পর্শে এসে অনেকে শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্য লাভ করেন, এমনকী বেশ কয়েকজন সংসারত্যাগ করে সন্ন্যাস অবলম্বন করেন। তাই মহেন্দ্রনাথকে অনেকে বলত...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹120/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
