মল্লভূমের ইতিহাস ও স্থাপত্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, পাল-সেন যুগ থেকেই সাধারণের
মল্লভূমের ইতিহাস ও স্থাপত্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, পাল-সেন যুগ থেকেই সাধারণের মধ্যে লৌকিক বিশ্বাসের পাশাপাশি শৈবধর্মের প্রাবল্য অনুভূত হচ্ছিল। সপ্তদশ শতকে বহুচর্চিত বৈষ্ণবধারা মল্লভূমির রুক্ষ মাটিকে প্লাবিত করলেও শৈবসাধনা কখনো অবসন্ন হয়ে পড়েনি।১ মল্লভূমে (বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর-কেন্দ্রিক) মল্লরাজাদের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব নথিভুক্ত হয়ে আছে রাজা বীর হাম্বীরের সময়কাল থেকে। হাম্বীরের রাজত্বে বৈষ্ণব গুরু ও প্রচারক শ্রীনিবাস আচার্যের মল্লভূমে আগমনের ফলে বৈষ্ণব রসসিক্ত হয়ে ওঠে পশ্চিম রাঢ়ের এই অংশ।২ ফলত রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বৈষ্ণবধারা পুষ্ট হলেও ইতিমধ্যেই শিব গণদেবতায় পরিণত হয়েছেন। দক্ষিণ রাঢ়ে শৈব শশাঙ্কের শাসন প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে সেখানে শৈবসাধনা ছড়িয়ে পড়েছিল বলে অনেকের বিশ্বাস।৩ মল্লভূমের জয়পুর থানার সলদা-গোকুলনগরের প্রায়বিলুপ্ত শৈবপরিমণ্ডল শশাঙ্কের আনুকূল্যে গড়ে উঠেছিল। দক্ষিণ রাঢ়ের সবচেয়ে প্রাচীন শৈবপরিমণ্ডল হলো সলদা- গোকুলনগর। ভুবনেশ্বর শৈবপরিমণ্ডল যেমন শশাঙ্কের সময়কালে বৌদ্ধ প্রভাব-বলয় থেকে বেরিয়ে এসে শৈবধারায় পুষ্ট হয়েছিল, তেমনি সলদা-গোকুলনগরের পাথুরে প্রমাণ থেকে বোঝা যায়, এখানে বৌদ্ধ-জৈন প্রভাব অস্তমিত হয়ে শৈবধর্মের বিকাশ ঘটেছিল। ভুবনেশ্বর শৈবপীঠে যেমন একাদশ শতকে ‘জগন্নাথ কাল্ট’-এর পরশে বৈষ্ণব কাঠামো ও মূর্তির সংযোজন ঘটেছিল, একইভাবে সলদা-গোকুলনগরে সপ্তদশ শতক থেকে মল্লরাজবংশের আনুকূল্যে বৈষ্ণবসাধনার সূচনা ঘটেছিল। লিঙ্গপুরাণ ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর শ্রেষ্ঠত্বের বিতর্কের মধ্যেই সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের চরম প্রতীক হিসাবে জ্যোতির্ময় শিবলিঙ্গের উত্থানের ঘটনা ঘটে।৪ রাঢ়েও শিবের মূর্তিপূজা অপেক্ষা পরমেশ্বর শিবের নির্গুণ ব্রহ্ম সত্তার প্রতীক লিঙ্গপূজার প্রচলনই বেশি দেখা যায়। এটি উৎপাদনবাদ ও সৃষ্টিতত্ত্বের প্রতীক।৫ রুক্ষ মাটির রাঢ়ে এই ধারার অবিসংবাদিত উপস্থিতির আরেক কারণ জনজাতিদের মধ্যে প্রস্তর-সাধনার চল। অথর্ববেদ-এ ‘স্তম্ভ’ মন্ত্রের হদিশ পাওয়া যায়। বৈদিক যজ্ঞে ব্যবহৃত যূপস্তম্ভ থেকে শিবলিঙ্গের মান্যতা আসতে পারে। এই উৎসর্গ-স্তম্ভ ছিল পরম ব্রহ্মের প্রতীক। স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন এই মতের সমর্থক।৬ মল্লভূমের রাজধানী বিষ্ণুপুরের ১৭ কিমি পূর্বে অবস্থিত রাঢ়ের প্রাচীনতম শৈবতীর্থ সলদা-গোকুলনগর। প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের নিরিখে এখানে প্রাপ্ত ভুবনেশ্বর ও গন্ধেশ্বর শিবলিঙ্গ অতি প্রাচীন। এই শিবলিঙ্গ ও দুই মন্দিরের ভগ্নাবশেষের বিচারে এর নির্মাণকাল সপ্তম থেকে একাদশ শতকের কালসীমায়। এই স্থাপত্যগুলির ধ্বংসের কারণ সম্ভবত...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹120/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
