চিরায়ত কাল থেকে এই জগতে জীবনচর্যার দুটি ধারা বহমান, যার একটি ধর্মবিশ্বাসের এবং অপরটি ধর্মনিরপেক্ষতার।

চিরায়ত কাল থেকে এই জগতে জীবনচর্যার দুটি ধারা বহমান, যার একটি ধর্মবিশ্বাসের এবং অপরটি ধর্মনিরপেক্ষতার। ধর্মনিরপেক্ষতার যে-পথ, তার প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো—অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম। মানবেতর প্রাণীর ক্ষেত্রে এই সংগ্রাম দৈহিক কিন্তু মানবের ক্ষেত্রে এই সংগ্রাম দৈহিক সীমা অতিক্রম করে মানসিক স্তরে উন্নীত হয়েছে। এ-কারণে সংগ্রাম সেখানে প্রতিযোগিতার রূপ ধারণ করেছে। প্রকৃতিগতভাবে এই প্রতিযোগিতা নানারকম হতে পারে—পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা, আরো অধিক উপার্জনের জন্য প্রতিযোগিতা, আরো বেশি ক্ষমতা ও ভোগের জন্য প্রতিযোগিতা। কিন্তু অনশ্বর এই প্রতিযোগিতা পরিণামে জীবনে মানসিক চাপ ও দুঃখেরই কারণ হয়। এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য জীবনে অনেক ধরনেরই প্রয়াস নেওয়া হয়ে থাকে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ধর্ম। প্রতিটি ধর্মেরই মূল ভিত্তি হলো প্রবর্তকদের দেওয়া শিক্ষা। উদাহরণস্বরূপ, খ্রিস্টধর্মের মূল ভিত্তি হলো যিশুখ্রিস্টের দেওয়া শিক্ষা। ইসলামের মূল ভিত্তি হলো মহম্মদের দেওয়া শিক্ষা। ঠিক তেমনি হিন্দুধর্মের মূল ভিত্তি হলো ঋষিদের সনাতন জ্ঞানরাশি। সমষ্টিগতভাবে এই জ্ঞানরাশিই হলো বেদ। চারটি বেদের মধ্যে ঋগ্বেদ হলো আকরগ্রন্থ। এবং এটিই চারটি বেদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি বেদের চারটি অংশ—মন্ত্র, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। প্রথম দুটিকে কর্মকাণ্ড হিসাবে ধরা হয়। এবং শেষের দুটিকে জ্ঞানকাণ্ড নামে অভিহিত করা হয়েছে। পূর্বমীমাংসকদের মত অনুযায়ী, কর্মকাণ্ডই হলো সমস্ত ধর্ম ও দর্শনের শেষকথা। অপরপক্ষে অদ্বৈতবেদান্তবাদীদের মতে, জ্ঞানকাণ্ডই হলো এবিষয়ে সর্বোচ্চ প্রমাণ। বস্তুত, ধর্মের দুটি প্রকৃতি—প্রবৃত্তির ধর্ম এবং নিবৃত্তির ধর্ম। প্রবৃত্তির লক্ষণ হলো—সর্বদাই অর্থের উপার্জন ও ইন্দ্রিয়সুখের অন্বেষণ। এবং প্রবৃত্তি ধর্মের উদ্দেশ্য নিজের ও সমাজের সার্বিক অভ্যুদয়। অপরদিকে নিবৃত্তির প্রধান লক্ষণই হলো কাম-কাঞ্চন ত্যাগ। নিঃশ্রেয়স বা মুক্তিই এর প্রধান উদ্দেশ্য। এজগতের অধিকাংশ মানুষই আসলে প্রবৃত্তির দাস। শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা নিবৃত্তির অনুশীলন করে থাকেন। এ-কারণেই মীমাংসকেরা কর্মকাণ্ডকে এতখানি গুরুত্ব দিয়েছেন। এরকম এক পরিস্থিতিতেই ভারতবর্ষে ভগবান বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। বুদ্ধের আবির্ভাবের পর থেকে ভারতবর্ষে নিবৃত্তির ধর্ম প্রাধান্য পেয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে তিনি সন্ন্যাসের মহাব্রতে দীক্ষিত করে ভারতবর্ষে প্রথম সন্ন্যাসী সংঘ প্রতিষ্ঠা...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in