সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিবর্তন যেমন ঘটেছে, তেমনি বিলুপ্তও হয়েছে অনেক আবেগ, সংস্কার। নগর সভ্যতায় সেসব সংস্কারের মৃদু আলোটুকুও তেমন আর দেখা যায় না, গ্রাম-গঞ্জে এখনো তার কিছু কিছু লক্ষ্য করা যায়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিবর্তন যেমন ঘটেছে, তেমনি বিলুপ্তও হয়েছে অনেক আবেগ, সংস্কার। নগর সভ্যতায় সেসব সংস্কারের মৃদু আলোটুকুও তেমন আর দেখা যায় না, গ্রাম-গঞ্জে এখনো তার কিছু কিছু লক্ষ্য করা যায়। বাংলা নববর্ষের আবেগকে ধরতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ভূমিকাকে স্বীকার করতেই হয়। বলা চলে, উনিশ শতকে পয়লা বৈশাখকে আনুষ্ঠানিকতার রূপদানে তাঁর ভূমিকাই সর্বাগ্রে গণ্য। নববর্ষ উপলক্ষে তাঁর লেখা ‘নববর্ষে’, ‘এসো হে বৈশাখ’, ‘পুরাতন’, ‘নববর্ষ এল আজি’, ‘বৈশাখ’ ইত্যাদি কবিতার কথা মনে পড়ে। ১২৯০ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ মহর্ষিভবনে নববর্ষের উপাসনা দিয়ে বর্ষবরণের সূচনা হয়। রবীন্দ্রনাথের দুটি ব্রাহ্মসংগীত সেদিন গীত হয়—‘সখা তুমি আছ কোথা’ এবং ‘প্রভু এলেম কোথায়’। পরের বছরের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের জন্য লিখেছিলেন চারটি গান। ১২৯৩ বঙ্গাব্দের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয় সিটি কলেজে। উদ্যোক্তা সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ। রবীন্দ্রনাথ সেদিন ‘সত্য’ নামক ভাষণটি পাঠ করেন। আসলে এই বর্ষবরণের সূচনা উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। বাঙালি সংস্কৃতি বেশির ভাগই কৃষিকেন্দ্রিক। ফলে পুণ্যাহ উৎসব হিসাবে নববর্ষকে সূচিত করা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : “সেদিন ছিল যাকে বলে জমিদারি সেরেস্তার ‘পুণ্যাহ’, খাজনা-আদায়ের প্রথম দিন। কাজটা নিতান্তই বিষয়-কাজ। কিন্তু, জমিদারি মহলে সেটা হয়ে উঠেছে একটা পার্বণ। সবাই খুশি—যে খাজনা দেয় সেও, আর যে খাজনা বাক্সতে ভর্তি করে সেও। এর মধ্যে হিসেব মিলিয়ে দেখার গন্ধ ছিল না। যে যা দিতে পারে তাই দেয়, প্রাপ্য নিয়ে কোনো তক্‌রার করা হয় না। খুব ধুমধাম, পাড়াগেঁয়ে সানাই অত্যন্ত বেসুরে আকাশ মাতিয়ে তোলে। নতুন কাপড় পরে প্রজারা কাছারিতে সেলাম দিতে আসে।”১ তাঁর কাছে বাংলা নববর্ষ বিশেষ তাৎপর্যবাহী। তিনি লিখেছেন : “মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়;… আবরণের পর আবরণকে ছিন্ন বিদীর্ণ করে তবে তার অভ্যুদয় ঘটে।”২ ফলে নববর্ষকে আলাদা করে দেখার, আলাদা করে ভাবনার অবকাশ ছিল নগর কলকাতার শিক্ষিত সম্প্রদায়ের। রবীন্দ্রনাথও বিষয়টি ভেবেছিলেন নব আঙ্গিকে। পুণ্যাহ কেবল কৃষিতে নয়, যুক্ত মানুষের মননেও। তাই প্রভাতে ঘুম থেকে উঠে প্রার্থনা ও অঙ্গীকার করার মতোই তিনি সারা বছরের...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in