প্রাচীন ওড়িশা রাজ্যের চারটি ভাগ—কলিঙ্গ, উৎকল, কঙ্গোদা ও কোশল একক শাসনাধীনে আয়ত্ত হয়
প্রাচীন ওড়িশা রাজ্যের চারটি ভাগ—কলিঙ্গ, উৎকল, কঙ্গোদা ও কোশল একক শাসনাধীনে আয়ত্ত হয় সোমবংশীয় নৃপতিদের আমলে। পূর্ববর্তী বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ভৌমকর শাসনকে পরাস্ত করে সোমবংশীয় নৃপতি ‘কেশরী’ উপাধিধারী প্রথম যযাতি মহাশিবগুপ্ত ওড়িশায় ব্রাহ্মণ্যধর্মের পুনঃপ্রবর্তন করেন। এই বংশের নৃপতি মহাপরাক্রমশালী দ্বিতীয় যযাতি শ্রীক্ষেত্রে জগন্নাথ-মন্দির নির্মাণ করেন, যা কালে অবলুপ্ত হয়। পরবর্তিকালে সোমবংশীয়দের থেকে ওড়িশা রাজ্যের শাসনভার পূর্বগঙ্গবংশীয়দের হস্তগত হলে সেই বংশের নৃপতি অনন্তবর্মন চোড়গঙ্গদেব এক শক্তিশালী হিন্দুরাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। দ্বাদশ শতকের প্রথমার্ধে অনন্তবর্মন ওড়িশায় পুরুষোত্তমক্ষেত্রের শ্রীবৃদ্ধি ও জগন্নাথ মহাপ্রভুর শ্রীমন্দিরের পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারকার্যের সংকল্পগ্রহণ করেন—যার পূর্ণায়ত রূপদান করেন তাঁর উত্তরসূরি গঙ্গবংশীয় নৃপতি অনঙ্গভীমদেব।তবে শ্রীক্ষেত্রের মাহাত্ম্য বহু প্রাচীনকাল থেকেই সুবিদিত। বিশ্বের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ-এও সমুদ্রতীরে বিরাজমান দারুব্রহ্মের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া অথর্ববেদ ও পুরাণাদি শাস্ত্রগ্রন্থেও জগন্নাথদেব ও শ্রীক্ষেত্রের মাহাত্ম্য ও বিবরণ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের প্রসারকালে অন্যান্য আর্যতীর্থস্থানের মতোই শ্রীক্ষেত্রেও সনাতন বৈদিক ধর্মের অবলুপ্তি এবং বৌদ্ধধর্মের প্রভাব বিস্তৃত হতে থাকে। ফলে সুদীর্ঘকাল দারুব্রহ্ম-বিষ্ণুমাহাত্ম্য ধর্মজগতে অনালোচিত থেকে গিয়েছিল। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েন পুরুষোত্তমক্ষেত্র দর্শন করে তৎকালে বৌদ্ধধর্মের প্রতাপ ও প্রাচুর্যের কথা জানিয়েছেন। আবার এর দুশো বছরের ব্যবধানে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে অপর চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং পুরুষোত্তমক্ষেত্রে এসে সেখানে সনাতন ধর্মের পুনর্জাগরণের দৃষ্টান্ত পেয়েছেন। শ্রীক্ষেত্রের মাহাত্ম্য প্রধানত দারুব্রহ্ম ও জগন্নাথ মহাপ্রভুর লীলাবিলাসে কেন্দ্রীভূত হলেও এই পুণ্যভূমিতে সনাতন বৈদিক ধর্মের বিবিধ সম্প্রদায়ের সাধনপীঠ ও মঠ স্থাপন এর আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলকে পরিপুষ্ট করে এসেছে প্রাচীনকাল থেকেই। কত না সাধকের কত না সাধনার ধারা প্রবাহিত হয়ে সবশেষে এসে মিলেছে সেই চিরকালীন মহোদধির শাশ্বত ফেনিল তরঙ্গরাশির অন্তরালে। “সাগরস্যোত্তরে তীরে মহানদ্যাস্তু দক্ষিণে।/ স প্রদেশঃ পৃথিব্যাং হি সর্বতীর্থফলপ্রদ।।”১—সাগরের উত্তরতীরে মহানদীর দক্ষিণভাগে যে-প্রদেশ আছে তা সর্বতীর্থফলপ্রদ। শ্রীক্ষেত্র তাই মহামিলনের ক্ষেত্র হিসাবে পরিগণিত হয়ে এসেছে। গঙ্গবংশীয় নৃপতি অনঙ্গভীমদেব সমগ্র শ্রীক্ষেত্রকে শ্রীবিষ্ণু ও অপরাপর দেবগণের মন্দিরের দ্বারা বিভূষিত করে বহু ভূসম্পত্তি ও স্বর্ণালংকারাদি অর্পণ করেছিলেন। তিনি জগন্নাথ-মন্দিরের ঐশ্বর্যবৃদ্ধির পাশাপাশি শ্রীমন্দিরের চতুর্দিকে বহু...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
