জগন্নাথের লীলা স্কন্দপুরাণ-আশ্রিত। তিনি দারু-রূপ ধরে মানুষ-লীলা করেছেন।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান বলেছেন : আমি যুগে যুগে আবির্ভূত হই—‘সম্ভবামি যুগে যুগে।’১ শ্রীজগন্নাথের সারা বছরের বেশভূষার দিকে লক্ষ্য করলে মনে হয়, ভগবানের জন্য ‘সম্ভবামি রূপে রূপে’ কথাটিও যেন সমান সত্য। ভগবানের নানা ‘রূপ’ও তো সত্য। অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন : “পশ্য মে পার্থ রূপাণি শতশোঽথ সহস্রশঃ।/ নানাবিধানি দিব্যানি নানাবর্ণাকৃতীনি চ।।”২ পুরীর জগন্নাথেও নানা বর্ণের নানাবিধ রূপ দেখা যায়। তাঁর বত্রিশটি বেশ নিয়ে বর্ণনাত্মক তথ্য আজকের দিনে সহজলভ্য। বিভিন্ন বেশের নামের হিসাব করলে বত্রিশটির বেশি নাম পাওয়া যাবে। এই লেখায় বিশেষ কতকগুলি বেশের নাম উল্লেখ করে কিছু বিশ্লেষণে যেতে চাই। কেন জগন্নাথের এত বেশ হয়? এর কারণ, ভগবান বিষ্ণু হচ্ছেন অলংকারপ্রিয়—‘অলঙ্কার প্রিয় হরিঃ।’ একটি শ্লোকে বলা হয় : “গণেশ মোদকাকাঙ্ক্ষী/ অলঙ্কার প্রিয় হরিঃ।/ বারিধারা প্রিয় রুদ্রঃ/ নমস্কার প্রিয় রবিঃ।/ ঘৃতধারা প্রিয় বহ্নি…।”৩ এই দর্শনের ওপরে সনাতন ধর্মের অনেক আচার-কৃত্য নির্ভর করে। যেমন, গণেশ মোদকপ্রিয় বলে তাঁকে লাড্ডু দেওয়া হয়। ভগবান বিষ্ণু অলংকারপ্রিয়, তাই তাঁকে বস্ত্রালংকারে শোভিত করা হয়। দেবাদিদেব শিব জলধারা পছন্দ করেন, তাই শিবের মাথায় জল ঢালা হয়। সূর্য নমস্কারপ্রিয়, তাই সূর্য-নমস্কার করা হয়। অগ্নি দেবতা ঘৃত ভালবাসেন, তাই অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দেওয়া হয়। জগন্নাথের লীলা স্কন্দপুরাণ-আশ্রিত। তিনি দারু-রূপ ধরে মানুষ-লীলা করেছেন। জগন্নাথের বহু বেশভূষা প্রমাণ করে, সারা বছর তিনি ‘জগন্নাথ’ হয়েই থাকেন না—অন্যান্য রূপেও থাকেন। জগন্নাথ স্বরূপে বিষ্ণু, কৃষ্ণ। শ্রীমদ্ভাগবত মহাগ্রন্থে কৃষ্ণলীলা বর্ণিত হয়েছে। এই সূত্রেই জগন্নাথের ভাগবতীয় লীলাও লক্ষ্য করা যায়। কৃষ্ণ-জগন্নাথ একাকার হওয়ার কারণে স্কন্দপুরাণীয় লীলা এবং ভাগবতীয় লীলার সমাপতন ঘটেছে জগন্নাথ-সংস্কৃতিতে। বাংলার বিশ্বম্ভর দাসের জগন্নাথমঙ্গলকাব্য-এর লীলাখণ্ডে স্কন্দপুরাণ-আশ্রিত জগন্নাথকথা যেমন আছে, তেমন শ্রীমদ্ভাগবত-আশ্রিত কৃষ্ণকথাও আছে। তাই জগন্নাথলীলার সঙ্গে কৃষ্ণলীলাও মিশে গেছে। জগন্নাথের বনভোজি বেশ বা কালীয়দলন (কালীয়দমন) বেশ তার প্রমাণ। তাঁর বেশগুলি কেবলমাত্র বস্ত্রনির্ভর নয়—সেগুলি শাস্ত্রনির্ভর, লীলানির্ভর। তাঁর কিছু বেশভূষা নিত্য-প্রাত্যহিক (প্রায় প্রতিদিন হয়—যেমন বড়শৃঙ্গার বেশ), কিছু বেশ নৈমিত্তিক (বিশেষ তিথিতে হয়—যেমন বঁাকাচূড়া বেশ)। বিভিন্ন সময়ে জগন্নাথের যেসব বেশ হয়, তার মাসানুক্রমিক বর্ণনা...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
