গুণ্ডিচামার্জনের আরো একটি গূঢ় তাৎপর্য আছে। এটি নদিয়ালীলার বৈশিষ্ট্য। গৌরসুন্দর
[পূর্বানুবৃত্তি : শ্রাবণ সংখ্যার পর]।।২।। গুণ্ডিচামার্জনের আরো একটি গূঢ় তাৎপর্য আছে। এটি নদিয়ালীলার বৈশিষ্ট্য। গৌরসুন্দর হলেন রাধাভাবাবিষ্ট শ্রীকৃষ্ণ, স্বরূপ দামোদরের কথায়—‘রাধাভাবদ্যুতিসুবলিতং নৌমি কৃষ্ণস্বরূপম্।’৮ “শ্রীরাধার ভাবে আবিষ্ট হইয়াই তিনি গুণ্ডিচামার্জ্জন করিয়াছেন। রথযাত্রার ছলে শ্রীজগন্নাথদেব বৃন্দাবন-লীলারস আস্বাদন করিতেই বাহির হইয়া থাকেন। শ্রীরাধার ভাবে আবিষ্ট প্রভু মনে করিতেছেন—তাঁহার প্রাণবল্লভ বহুকাল পরে দ্বারকা বা কুরুক্ষেত্র হইতে ব্রজে আসিতেছেন। দীর্ঘ প্রবাসের পরে প্রাণবল্লভ শ্রীকৃষ্ণ ব্রজে আসিতেছেন শুনিয়া প্রিয়বিরহ-ক্ষিণ্ণা শ্রীরাধার আর আনন্দের সীমা নাই; সেই আনন্দের প্রেরণায় প্রাণবল্লভকে সাদরে অভ্যর্থনা করিবার জন্য সখীবৃন্দের সহিত তিনি বহুকাল-পরিত্যক্ত নিকুঞ্জ-মন্দিরের সংস্কারে ও সজ্জায় আত্মনিয়োগ করিয়া থাকেন। এই ভাবের আবেশেই প্রভু (শ্রীচৈতন্যদেব) গুণ্ডিচামার্জ্জন করিয়াছেন—তাঁহার মনে গুণ্ডিচাই নিকুঞ্জ-মন্দির এবং ভক্তবৃন্দই তাঁহার সখীবৃন্দ, আর তিনি শ্রীরাধা।”৯ রথাগ্রে নৃত্য : রথের দিন প্রাতে ‘পাণ্ডুবিজয়’ উৎসবে শ্রীচৈতন্য ভক্তগণ-সহ যোগদান করতেন। হাত বা কোমর ধরে ছোট শিশুকে যেভাবে হাঁটা শেখানো হয়, সেইভাবে হাঁটাকে ওড়িয়া ভাষায় ‘পহণ্ডি’ বলে। পহণ্ডির অপভ্রংশই ‘পাণ্ডু’। ধরাধরি করে শ্রীজগন্নাথকে শ্রীমন্দির থেকে রথের ওপরে নিয়ে যাওয়াকে বলে ‘পাণ্ডুবিজয়’। এই অনুষ্ঠানে শ্রীচৈতন্য মহানন্দে যোগদান করতেন। রথাগ্রে শুরু হতো সংকীর্তন-সহ তাঁর নৃত্য, যে-নৃত্য দেখে সকলে তো বিস্মিত হতোই, এমনকী শ্রীভগবান পর্যন্ত অভিভূত হতেন। শ্রীজগন্নাথ যেন রথ থামিয়ে দিয়ে শ্রীচৈতন্যের অপূর্ব রাগাত্মিকা প্রেমভক্তির নৃত্য দেখতেন— “কীর্তন দেখিয়া জগন্নাথ হরষিত।কীর্তন দেখেন রথ করিয়া স্থগিত।।”১০ রাজা প্রতাপরুদ্রের ইচ্ছাপূরণ : শ্রীচৈতন্য যখন কাশী মিশ্রের বাড়িতে রয়েছেন, সেসময় একদিন বাসুদেব সার্বভৌম সেখানে গিয়ে রাজা প্রতাপরুদ্রের সঙ্গে দেখা করানোর জন্য ব্যাকুল হন। শুনে শ্রীচৈতন্য তীব্র আপত্তি জানান। বলেন : “আমি সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী, আমার পক্ষে রাজদর্শন ও স্ত্রীদর্শন দুই-ই বিষতুল্য।”— “সন্ন্যাসী বিরক্ত আমার রাজ-দরশন।স্ত্রী-দরশনসম বিষের ভক্ষণ।।”১১ শ্রীচৈতন্য এতটাই রুষ্ট হন যে, সার্বভৌমকে বলেন—এমন অনুরোধ পুনরায় করলে তিনি নীলাচল ছেড়ে চলে যাবেন। একথা শুনে রাজা বিষাদে আচ্ছন্ন হন ও মন্তব্য করেন : “প্রভু জগৎ উদ্ধার করবেন; প্রতাপরুদ্র কি জগৎ-ছাড়া?” সার্বভৌম তাঁকে আশ্বস্ত করে পরামর্শ দেন—রাজবেশ পরিত্যাগ করে, দীন বৈষ্ণবের বেশ পরিধান করে রথাগ্রে নৃত্যরত প্রভুকে ভাগবতের শ্লোক...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹120/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
