প্রকৃত ভক্ত বা অধ্যাত্মসাধকের মহিমা বর্ণনা করতে গিয়ে দেবর্ষি নারদ তাঁর ভক্তিসূত্র গ্রন্থে
প্রকৃত ভক্ত বা অধ্যাত্মসাধকের মহিমা বর্ণনা করতে গিয়ে দেবর্ষি নারদ তাঁর ভক্তিসূত্র গ্রন্থে বলছেন—‘তীর্থীকুর্বন্তি তীর্থানি’।১ অর্থাৎ ভক্তগণের সংস্পর্শে তীর্থসমূহ তীর্থের মর্যাদা লাভ করে। সেখানে ধার্মিক ব্যক্তি ও অধ্যাত্মসাধকেরা বাস করেন, সাধনা করেন এবং ঈশ্বরদর্শন ও ঈশ্বরপ্রেমের কামনা করেন। ফলে তীর্থ লাভ করে পাবনীশক্তি। তীর্থ থেকে প্রত্যাগত বিদুরকে মহারাজ যুধিষ্ঠির বলছেন : “ভবদ্বিধা ভাগবতাস্তীর্থভূতাঃ স্বয়ং বিভো।তীর্থীকুর্বন্তি তীর্থানি স্বান্তঃস্থেন গদাভৃতা।।”২ —অসৎ লোকের সান্নিধ্যে তীর্থসমূহ মলিনতা প্রাপ্ত হয়। শ্রীহরিকে নিত্য হৃদয়ে ধারণ করেন বলে আপনাদের মতো ভগবদ্ভক্তগণ তীর্থসমূহে গমন করে পুনরায় তাদের তীর্থত্ব সম্পাদন করেন। এরূপ বহু ভক্ত ও সাধকের সাধনমুখর জীবনের সাক্ষী হলো ভারতবর্ষের প্রসিদ্ধ চারধামের অন্যতম তীর্থ পুরীধাম। শ্রীক্ষেত্রের অধিপতি পতিতপাবন শ্রীজগন্নাথ সাধক-হৃদয়ে নিত্য বিরাজিত ও বন্দিত। নীলাচলে তাঁর চরণতলে আনত কয়েকজন বিশিষ্ট অধ্যাত্মব্যক্তিত্বের অতিবাহিত সাধনজীবনের প্রতি একটু দৃষ্টি দেওয়া যাক। শঙ্করাচার্য আচার্যদেব কর্তৃক পুরীধামে জগন্নাথদেবের পুনঃপ্রতিষ্ঠা একটি চিরস্মরণীয় ঘটনা। আচার্য অন্ধ্রদেশের নানা স্থানে ভ্রমণ করতে করতে কয়েকজন কলিঙ্গবাসীর অনুরোধে পুরীধামে এসে উপস্থিত হন। অদ্বৈতব্রহ্মাত্ম-বিজ্ঞান প্রচারক আচার্য শঙ্কর তাঁদের আর্তিতেই সেখানকার কুপথগামীদের সংস্কারসাধনে প্রবৃত্ত হন। সব স্থানেই বহু মানুষ আচার্যের ব্যক্তিত্ব ও উদার শাস্ত্রব্যাখ্যায় সবিশেষ প্রভাবিত হয়। এসময় কিছুদিন ধরে কেশরী বংশীয় রাজগণ পুরীধামে রাজত্ব করছিলেন। শ্রীমন্দিরে প্রবেশ করে আচার্য যথাবিধি পূজাকার্য সম্পন্ন করলেন। তিনি তাঁর প্রধান শিষ্যগণ-সহ মন্দির-প্রাঙ্গণে অবস্থান করলেন আর তাঁর অনুগামীদের থাকার ব্যবস্থা হলো সমুদ্রতীরে। কিন্তু আচার্য শ্রীমন্দিরে প্রভুর দারুবিগ্রহের পরিবর্তে শালগ্রাম শিলায় পুজো হতে দেখে অত্যন্ত চিন্তিত হলেন। তাঁর এই অকস্মাৎ ভাবান্তরে শিষ্যরাও উদ্বিগ্ন। তিনি অর্চকগণকে মন্দিরে শ্রীবিগ্রহ না থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা অতি দুঃখের সঙ্গে জানালেন, আগে কোনো এক সময়ে বিধর্মীদের লুণ্ঠনভয়ে দারুবিগ্রহ চিল্কা হ্রদের তীরে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল রত্নপেটিকায়। কিন্তু অনেকদিন কেটে যাওয়ার পর অনেক চেষ্টাতেও জায়গাটি ঠিক কোথায় তা কেউই মনে করতে পারেনি। অগত্যা বিগ্রহ খুঁজে না পেয়ে শালগ্রাম শিলাতেই পূজা শুরু হয়। রত্নপেটিকার পুনরুদ্ধার সম্ভব হলে জগন্নাথদেবের বিগ্রহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যাবে...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
