এদিকে বিদর্ভরাজ ভীম বহু অর্থ দিয়ে দিকে দিকে শত শত ব্রাহ্মণ প্রেরণ করলেন, ঘোষণা করলেন— নল-দময়ন্তীকে সশরীরে আনতে পারলে পুরস্কারস্বরূপ এক হাজার গাভী ও একখানি গ্রাম দান করা হবে।

“হে ভারত, ভুলিও না—তোমার নারীজাতির আদর্শ সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী...।”১—স্বামী বিবেকানন্দ এ এক বহুশ্রুত প্রাচীন কাহিনি। বহু লেখক এর সাথে নিজ মনের মাধুরী মিশিয়ে এক অপূর্ব কাহিনি রচনা করে গিয়েছেন, যা আমাদের কাছে অবিস্মরণীয়। বৈদিক সাহিত্যের ‘শতপথ ব্রাহ্মণ’-এ নিষধরাজ নলের উল্লেখ আছে। নিষধ একটি ছোট রাজ্য। এছাড়া মৎস্যপুরাণ, লিঙ্গপুরাণ, পদ্মপুরাণ ও ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে এই নল-দময়ন্তীর ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবন নিয়ে অপূর্ব কাহিনির সৃষ্টি রয়েছে। মহাভারতের বনপর্বে বিশেষভাবে এটি উল্লিখিত। পাশাখেলায় পরাজিত পাণ্ডবগণ যখন দ্বৈতবনে বাস করছিলেন, তখন পাশাখেলার বিষময় পরিণতির কথা বোঝাতে গিয়ে বৃহদশ্ব মুনি এই কাহিনি শুনিয়েছিলেন। এই কাহিনি উত্তরকালের কবিদের উপজীব্য হয়ে উঠেছে। কালিদাসের রচনায় ‘নলোদয়’ কাব্যের উল্লেখ আছে। দ্বাদশ শতকের কবি শ্রীহর্ষ রচনা করেন নৈষধচরিত। সংস্কৃতে রচিত অগস্ত ভট্টের নলকীর্তি কৌমুদী, বামন ভট্টের নলাভ্যুদয়, কৃষ্ণকবির নৈষধপারিজাত, চক্রকবির দময়ন্তী পরিণয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাণ্ডবগণ যখন দ্বৈতবনে বসবাস করছেন, তখন অর্জুন অস্ত্রলাভের জন্য দেবলোকে যান। বহুদিন গত হলেও অর্জুন ফিরে না আসায় ভীম ও বৃহদশ্ব মুনির কাছে মনের দুঃখ প্রকাশ করে যুধিষ্ঠির বলেন : “আমার মতো হতভাগ্য ব্যক্তি আর কেউ নেই।” তখন বৃহদশ্ব মুনি যুধিষ্ঠিরকে বলেন : “আপনার চেয়েও হতভাগ্য আরেক মহারাজের কথা বলি শুনুন।”২ যুধিষ্ঠির উক্ত রাজকাহিনি শোনার জন্য ব্যস্ত হয়ে অন্য ভাইদেরও ডাকলেন, কাহিনি আরম্ভ করলেন বৃহদশ্ব মুনি। নিষধ রাজ্যে চন্দ্রবংশ-জাত বীরসেন নামে এক রাজা ছিলেন, নল হলেন এঁর পুত্র। রূপবান, গুণবান, মহাপরাক্রমশালী, যুদ্ধবিশারদ, রথচালনায় নিপুণ বলে নলের খ্যাতি ছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন দ্যূতক্রীড়াসক্ত। ঐ সময় বিদর্ভ দেশে এক রাজা ছিলেন, তাঁর নাম ভীম। ভীম নিঃসন্তান ছিলেন। একদিন দমন নামে এক ব্রহ্মর্ষি এসে ভীমের রাজ্যে উপস্থিত হন। রাজা ও রাজমহিষী ব্রহ্মর্ষির সেবায় মনোনিবেশ করেন। সন্তানলাভের আকুতি দেখে ব্রহ্মর্ষি দমন খুশি হয়ে তাঁদের তিন পুত্র ও এক কন্যা লাভের বরদান করেন। যথাসময়ে দম, দান্ত ও দমন নামে তিন পুত্র ও দময়ন্তী নামে এক কন্যা জন্মগ্রহণ করে। রাজকন্যা অসামান্যা রূপবতী, তেজস্বিনী, যশস্বিনী ও সৌভাগ্যশালিনী হয়ে ওঠে।...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in