বাংলায় বেদান্তচর্চা এযাবৎ যা হয়েছে তার মধ্যে রাঢ়বঙ্গে বিশেষত ভট্টপল্লি ও নবদ্বীপের

বাংলায় বেদান্তচর্চা এযাবৎ যা হয়েছে তার মধ্যে রাঢ়বঙ্গে বিশেষত ভট্টপল্লি ও নবদ্বীপের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এর মধ্যে ভট্টপল্লি যেরকম বাদরায়ণ-কৃত ব্রহ্মসূত্র গ্রন্থের শক্তিভাষ্যের উদ্ভবস্থল, ঠিক সেইরকম নবদ্বীপও অচিন্ত্যভেদাভেদবাদের সূতিকাগার। এই নবদ্বীপ ছিল প্রাচ্যবিদ্যাশি‌ক্ষার পীঠস্থান, যেখানে প্রাচ্যবিদ্যার প্রায় সকল শাখারই চর্চা হতো। তবে এর মধ্যে ন্যায় ও স্মৃতি শাস্ত্রেরই প্রাবল্য দেখা যায়। এছাড়াও বঙ্গদেশে তখন ব্যাকরণচর্চার প্রচলন ছিল। কারণ, মুগ্ধবোধ, কলাপ, সুপদ্ম, হরিনামামৃত প্রভৃতি ব্যাকরণের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের চর্চা তখন হতো। আর মহাপ্রভুও ন্যায়, ব্যাকরণ প্রভৃতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন; তবে ভাগবতপুরাণকেই তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের ব্রহ্মসূত্র-এর ভাষ্য বলে মনে করতেন। পরবর্তিকালে অবশ্য এই সম্প্রদায়ের ধারা আচার্য বলদেব বিদ্যাভূষণের গোবিন্দভাষ্যের দ্বারা সমৃদ্ধি লাভ করে। তাই আমরা দেখতে পাই, প্রাচীন বঙ্গের মূল বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র এই নবদ্বীপে বেদ-বেদান্ত, ব্যাকরণ, ন্যায় ও স্মৃতি শাস্ত্র প্রভৃতির চর্চা হতো। কিন্তু রঘুনাথ শিরোমণির সময়ের কিছুটা আগে থেকেই নবদ্বীপের ন্যায়শাস্ত্রের চর্চার প্রবল প্রবণতাকে ঘিরে এমন একটি পরিমণ্ডলের সৃষ্টি হয়, যাতে বেদান্তচর্চা কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে। বেদান্তশাস্ত্রে তখন গ্রন্থপ্রণয়ন কম হয়ে পড়ায় এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, তখন নবদ্বীপে বেদান্তের চর্চা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, নব্যন্যায়ের তথা প্রাচীন ন্যায়গ্রন্থগুলির পূর্বপ‌ক্ষ হিসাবে প্রায়শই বৌদ্ধ ও বেদান্তিগণের প্রবেশাধিকার ছিল। তাই চৈতন্যযুগেই ন্যায়ের পাশাপাশি বেদান্তও বিস্তারলাভ করেছিল। আর চৈতন্য-পূর্ববর্তী সময়ে বেদান্তচর্চায় রত ছিলেন পণ্ডিতাগ্রগণ্য বাসুদেব সার্বভৌম। তাঁর সময়কাল হলো খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয় পাদ অর্থাৎ ১৪৪৫ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি। বাসুদেব সার্বভৌম: এই বাসুদেব সার্বভৌম ছিলেন নরহরি বা মহেশ্বর বিশারদের বিশিষ্ট সন্তান। মিথিলার ন্যায়শাস্ত্রসমূহ অর্থাৎ গঙ্গেশ উপাধ্যায়ের চার খণ্ডের চিন্তামণি গ্রন্থ সম্পূর্ণ কণ্ঠস্থ করে বাসুদেব সার্বভৌম নিজের গুরু প‌ক্ষধর মিশ্রের কাছে ‘লৌহশলাকা’ পরী‌ক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং মিথিলার পণ্ডিতগণ ন্যায়শাস্ত্রে তাঁর এই অসামান্য প্রবেশ দেখে নিতান্তই ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। পরে তিনি কাশীতে বেদান্ত অধ্যয়ন করে নবদ্বীপে ফিরে আসেন খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের তৃতীয় পাদের মধ্যে। সার্বভৌম অদ্বৈতমকরন্দ-এর টীকায় ‘শ্রীবন্দ্যান্বয়’ বলে নিজের কুলপরিচয়...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in