দূরিতবারিণী যে-জননী দুর্গমে অভয় প্রদান করেন—তিনিই দেবী দুর্গা। শরণাগতের আর্তিহরা
দূরিতবারিণী যে-জননী দুর্গমে অভয় প্রদান করেন—তিনিই দেবী দুর্গা। শরণাগতের আর্তিহরা সেই সুকল্যাণীর স্নেহাঙ্কে লালিত হয় সকল সন্তান। অন্তঃপুরের মোহগর্ত ও বহির্লোকের বিঘ্নত্রয় থেকে মুক্তির আশায় তারা দেবীর আরাধনা করে। কুণ্ডলিনী শক্তিকে দুর্গামূর্তিতে জাগরিতা করে হৃদয়পদ্মে এনে তাঁর পূজা হয়; নিবেদিত হয় মনোলোকের নানা উপচার। সুবচনী মাতা তখন চতুর্বর্গে পূরণ করেন ভক্তবাঞ্ছা। জ্যোতির্ময়ী দেবী জটাজূটধারিণী। পূর্ণশশিনিভাননার শেখরভূষণে শিশু-শশীর শোভা। তিনটি স্নেহনয়নের প্রেমদৃষ্টি ত্রিলোককে আবিষ্ট করেছে। অতসীকুসুমের মতো সমুজ্জ্বল তাঁর তনুবর্ণ—কেউ বা বলেন বিগলিত কনকধারা যেন। প্রসন্নবদনা দেবীর সুস্মিত অধরমধ্যে সুচারু দন্তপঙ্ক্তি। সর্বাভরণভূষিতা নবযৌবনশোভিতা মাতা ভক্তমানসে সুপ্রতিষ্ঠিতা। আবার জননীমানসেও ভক্তপালনের উদ্বেলিত সুধারাশি। তাই তিনি পীনোন্নতপয়োধরা। দশ বাহু যেন দশদিশায় উন্মুক্ত পদ্মের পুষ্পিত মৃণাল। সকলের আধারভূতা মা দুর্গা ভূতবর্গকে সকল করকমল দিয়ে আগলে ধরেন মমতায়। তাঁর এই কৃপা-কান্তিতে বিধৃত রয়েছে শুভ সংস্কারের জাগরণ ও পরিপোষণ। সেই কোমলা মাতাই আবার অশুভের শাসনে ধরেন ভয়ংকর রুদ্ররূপ। তখন দক্ষিণপদে সিংহস্থা হয়ে ত্রিভঙ্গা দেবী বামপদের অঙ্গুষ্ঠমাত্রে দলিত ভীষণ মহিষকে বশীভূত রাখেন। দক্ষিণের পঞ্চবাহু ক্রমান্বয়ে ত্রিশূল, খড়্গ, চক্র, তীক্ষ্ণবাণ, শক্তি ইত্যাদি আয়ুধে ভূষিত। আর বামে তিনি ধারণ করেন খেটক, পূর্ণচাপ, পাশ, অঙ্কুশ এবং ঘণ্টা অথবা পরশু। পদতলে ছিন্নশির মহিষের সমস্ত আস্ফালন স্তব্ধ হয়েছে। তার শরীর ভেদ করে বেরিয়ে এসেছে খড়্গহস্ত উগ্র এক দানব। দেবীর হস্তধৃত ত্রিশূলে ছিন্ন হয়েছে অসুরের বক্ষস্থল। নির্গতপ্রায় রক্তলোচনে সে-অসুরের বিষম ক্রোধ লকলক করছে। নাগবেষ্টিত ও রুধিরাক্ত দেহের ছিন্নাংশ সর্বত্র পরিদৃশ্যমান। দেবী যে-হাতে পাশ ধরেছেন সেই হাতেই মুষ্টিবদ্ধ মহিষাসুরের বীভৎস কেশজাল। সিংহবাহনের মুখবিবর রুধিরলিপ্ত। দেবী এই মূর্তিতে সকল রিপু-বিনাশকারিণী। অমরবৃন্দ সসম্ভ্রমে মাতৃপ্রতিমার স্তুতি গেয়ে চলেছেন। উগ্রচণ্ডা, প্রচণ্ডা, চণ্ডোগ্রা, চণ্ডনায়িকা, চণ্ডা, চণ্ডাবতী, চণ্ডরূপা ও অতিচণ্ডিকা—মায়ের এই অষ্টশক্তি তাঁকে পরিবেষ্টন করে থাকেন, সেবা করেন। জয়া ও বিজয়া তাঁর পরিচর্যায় সদা নিরতা। দুর্গতিহারিণী এই দুর্গা জন্মদাত্রী, তিনি ধাত্রী, তিনি সংহারকর্ত্রী। বরদা দেবীর অর্চনায় অনর্গল হয় সাধকের সিদ্ধিদ্বার।
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹120/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
