৪ জুন ১৯৮৪, সোমবার সকালে স্নানান্তে ১২টার সময় শান্তিনিকেতনে অধ্যাপক

৪ জুন ১৯৮৪, সোমবার সকালে স্নানান্তে ১২টার সময় শান্তিনিকেতনে অধ্যাপক রামবহাল তেওয়ারির বাড়ি থেকে স্বামী অব্জজানন্দ মহারাজকে নিয়ে সোজা নন্দলাল বসুর পুত্র বিশ্বরূপ বসুর বাড়িতে গেলাম। সঙ্গে ছিলেন কলাভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ধীরেনকৃষ্ণ দেববর্মা। বিশ্বরূপ বসুর স্ত্রী নিেবদিতাদেবীকে দেখলাম সত্তর পেরিয়েও যথেষ্ট সপ্রতিভ ও সচল। বললেন, ত্রিশের দশকে রবীন্দ্রনাথের সহযাত্রী হয়ে ‘চণ্ডালিকা’ নৃত্যনাট্য দলের সঙ্গে তাঁদের উত্তরপ্রদেশ পরিক্রমার কথা—লখনৌয়ে অসিতকুমার হালদারের বাংলোয় থাকা ইত্যাদির কথা। বিশ্বরূপ বসু স্বল্পবাক। তাঁদের বসার ঘরটি শুনলাম নন্দলালের জীবনকালে তিনদিক খোলা ছিল—দ‌ক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমের বিস্তীর্ণ ফাঁকা প্রান্তর শিল্পীর খুব প্রিয় ছিল। নিবেদিতাদেবীর পরিপাটি ব্যবস্থাপনায় আহারে পেলাম মাছ, কিমার বড়া, ডাল, আমের চাটনি, মিষ্টি। অব্জজানন্দ মহারাজ বললেন : “কত বড় বড় মানুষ— রবীন্দ্রনাথ থেকে নেহেরু—এঁদের অতিথি হয়ে আহার করেছেন এই ঘরে!” খাওয়া শেষে মহারাজ সুচতুর মিষ্টি হাসিতে বিশ্বরূপবাবুকে অবনীন্দ্রনাথের আঁকা ‘উমা’ ছবিটি দেখাতে বললেন। বিশ্বরূপবাবু ইতস্তত করছিলেন, শেষে নিবেদিতাদেবী তাঁদের সযত্নে রাখা ঐ অমূল্য ছবিটি নিয়ে এলেন। সে-চিত্র দর্শনে মহারাজের ভাববিহ্বল অবস্থা! নিজে দেখলেন, দেখালেন সবাইকে। কী সুন্দর ভাব উমার অর্ধনিমীলিত অন্তর্দৃষ্টিপূত চোখ দুখানির। সাধিকার দৃষ্টি—যা ধ্যানে দেখেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। সাধকস্রষ্টা তিনিও। মহারাজ বললেন : “এ ধ্যানদৃষ্টি অবনীন্দ্রনাথ নিবেদিতাকে দেখে উপলব্ধি করেছিলেন।” মহারাজের কথার সঙ্গে নন্দলালের দেখার মিল আছে—বললেন বিশ্বরূপ বসু। অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসু লিখেছেন : “অবনীন্দ্রনাথ কি নিবেদিতার কোনো ছবি এঁকেছিলেন? জানিনা। তবে এইটুকু জানতে পেরেছি—অবনীন্দ্রনাথের ধ্যান-রূপ-লোকে অপরূপ ছবি হয়ে বিরাজিতা ছিলেন নিবেদিতা। নন্দলাল লিখেছেন, ‘অবনবাবু উহাকে দেখে আমাদের বলেছিলেন, যেন তপস্বিনী উমাকে দেখলাম।’ [বরেন্দ্রনাথ নিয়োগী, শিল্প দীপঙ্কর নন্দলাল, পৃঃ ২৭, নন্দলালের ২৫-৮-৫৪ তারিখে পত্রে লিখিত। একই ধরনের কথা নন্দলালের সা‌ক্ষ্য মারফতও জানতে পারি, ‘অবনীবাবু বলেছিলেন—‘সিস্টার দেখতে ঠিক পার্বতীর মতো।’ (ভারতশিল্পী নন্দলাল, ১ম, পৃঃ ১০৫)]… “আমেরিকান কনসালের বাড়িতে ওকাকুরার রিসেপশনের দিন নিবেদিতাকে দেখার কথা অবনীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘…নিবেদিতা এসেছিলেন। গলা থেকে পা পর্যন্ত নেমে গেছে শাদা ঘাগরা, গলায় ছোট্ট-ছোট্ট রুদ্রা‌ক্ষের একছড়া মালা; ঠিক যেন শাদা পাথরে গড়া তপস্বিনীর মূর্তি একটি।’”...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in