বিশিষ্ট নাট্যকার উৎপল দত্ত শ্রীরামকৃষ্ণ সম্পর্কে বলেছেন : “ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার

বিশিষ্ট নাট্যকার উৎপল দত্ত শ্রীরামকৃষ্ণ সম্পর্কে বলেছেন : “ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার পরম সৌভাগ্য যে, একজন বিশুদ্ধ মৌলিক চিন্তানায়ক হিন্দুধর্মের সম্মান পুনরুদ্ধারে দাঁড়ালেন, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের সর্বাত্মক আক্রমণের মুখে ভারতীয় আত্মমর্যাদাবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ব্রতী হলেন।”১ অথচ শ্রীরামকৃষ্ণ আপাতদৃষ্টিতে একজন অশিক্ষিত গ্রাম্য মানুষ, দ‌ক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়ির পূজারি ব্রাহ্মণ, তথাকথিত সভ্যতা-ভব্যতার ধার ধারেন না। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত, ব্রিটিশ-রাজের চাকরিজীবী, বর্ধিষ্ণু পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ ঈশানচন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে তিনি অক্লেশে বলেছিলেন : “ওরে বামুন, ডুবে যা, ডুবে যা।”২ বলেছিলেন : “কোশাকুশি ছুঁড়ে ফেলে দাও, ঈশান নাম সার্থক কর।”৩ ঈশানচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নাম রামকৃষ্ণলীলা-রসিকগণের সুপরিচিত। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর এক পত্রে উল্লেখ করেছিলেন তাঁর মহানুভবতার কথা। ২৪ জানুয়ারি ১৮৯০ গাজীপুর থেকে প্রমদাদাস মিত্রকে লিখেছিলেন : “আমার বন্ধুর [সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়] পিতা শ্রীযুক্ত ঈশানচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয়—যে মহানুভবের কথা আমি আপনাকে বলিয়াছিলাম—এস্থানে আছেন।”৪ স্বামী সারদানন্দজী লিখেছেন : “ঈশানবাবুর দয়ার বিষয় উল্লেখ করিয়া স্বামী বিবেকানন্দ আমাদিগকে একদিন বলেন যে, উহা পণ্ডিত বিদ্যাসাগরের অপেক্ষা কিছুতেই কম ছিল না। স্বামীজি স্বচক্ষে দেখিয়াছেন, ঈশানবাবু নিজের অন্নব্যঞ্জনাদি কতদিন (বাটীতে তখন কিছু আহার্য প্রস্তুত না থাকায়) অভুক্ত ভিখারিকে সমস্ত অর্পণ করিয়া যাহা-তাহা খাইয়া দিন কাটাইয়া দিলেন। আর অপরের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনিয়া উহা দূর করা নিজের সাধ্যাতীত দেখিয়া কতদিন যে তিনি (স্বামীজী) অশ্রুজল বিসর্জন করিতে তাঁহাকে (ঈশানবাবুকে) দেখিয়াছেন, তাহাও বলিতেন। শ্রীযুত ঈশান যেমন দয়ালু, তেমনি জপ-পরায়ণও ছিলেন। তাঁহার দক্ষিণেশ্বরে নিয়মপূর্বক উদয়াস্ত জপ করার কথাও আমরা অনেকে জানিতাম।” ঈশানচন্দ্রকেই ঠাকুর দিয়েছিলেন সেই বিখ্যাত উপদেশ—“জলে-দুধে একসঙ্গে রয়েছে। চিদানন্দরস আর বিষয়রস। হংসের মতো দুধটুকু নিয়ে জলটি ত্যাগ করবে।”৫ শ্রীরামকৃষ্ণের অনুরাগী গৃহিভক্ত ঈশানচন্দ্র একদিকে সংসারজীবন ও অন্যদিকে ধর্মকর্মের দ্বিমাত্রিকতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেননি। জলে দুধে মিশে থেকেও সংসারে নির্লিপ্ত ছিলেন। “শ্রীরামকৃষ্ণের ডায়ালেকটিক্‌সে তিনি প্রায়শ অন্য পক্ষ, এবং সবসময় শ্রোতার ভূমিকায় নয়—প্রায়শ বক্তার বা কথকের ভূমিকায়। কথামৃতর পঞ্চম ভাগের অষ্টম খণ্ডে গোটা প্রথম পরিচ্ছেদ জুড়ে শ্রীরামকৃষ্ণের অনুরোধে ঈশান একের পর এক গল্প শুনিয়ে গিয়েছেন ভক্তদের জন্য।… বস্তুত, কথামৃত বেশ কিছুটাই ঠাকুর-ঈশানডায়ালেকটিক্‌স।”৬ উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in