লোনা জলের সাগর নয়, শ্রীরামকৃষ্ণ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বলেছিলেন—‘ক্ষীরসমুদ্র’; সেই সমুদ্র থেকে এক আঁজলা পান করতে পারলে আমরা যেমন বলশালী হব,

লোনা জলের সাগর নয়, শ্রীরামকৃষ্ণ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বলেছিলেন—‘ক্ষীরসমুদ্র’; সেই সমুদ্র থেকে এক আঁজলা পান করতে পারলে আমরা যেমন বলশালী হব, তেমনি সমস্ত ক্ষুদ্রতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারব। তবে আমাদের সামনে ক্ষীরসমুদ্রের ক্ষীর যতই দেওয়া হোক না কেন, বিদ্যাসাগরের মতো সর্বস্বত্যাগী দধীচির অগ্নিতাপে দগ্ধ হওয়ার ভয়ে তাঁর কাছে যেতে আমরা সাহস পাই না। বিদ্যাসাগরে নিমগ্ন হয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করা সহজ কিন্তু সেই ত্যাগ, ভালবাসা, পরিশ্রম, দৃঢ়তা—এগুলি আয়ত্ত করা সাধনসাপে‌ক্ষ। খাঁটি বাঙালি পোশাক, অথচ চরিত্রে খাঁটি ইউরোপিয়ান! খাঁটি বাঙালি—মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধবৎ, অথচ সময়ের নিরিখে তিনি ইংরেজির সমর্থক। সম্প্রতি অসিত বরণ গিরির সম্পাদনায় ঈশ্বরচন্দ্রের দ্বিশতজন্মবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত অমিয়া সায়রে গ্রন্থখানি পড়ে বিস্মিত হলাম। সম্পাদককে অসংখ্য ধন্যবাদ এই অমূল্য গ্রন্থখানি পাঠককুলকে উপহার দেওয়ার জন্য। বিদ্যাসাগরের জীবন ও চরিত্রের নানা দিক এখানে আলোচিত হয়েছে, কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্র ও মধুসূদনকে নিয়ে কোনো আলোচনা চোখে পড়ল না। গোপাল, রাখাল, ভুবন চরিত্রগুলি আমরা সকলেই ছেলেবেলায় পড়েছি; কিন্তু চরিত্রগুলি চিত্রণের পশ্চাতে বিদ্যাসাগরের যে দূরদৃষ্টি তা কিন্তু ভাবিনি। আর বিদ্যাসাগরের পাণ্ডিত্য? অবাক হতে হয়, কত বিষয়ে তাঁর বিচরণ! সাহিত্যক্ষেত্রে সংস্কৃত, ইংরেজি, এমনকী হিন্দি—সব বিষয়ে তিনি পারঙ্গম ছিলেন। এইসব ভাষা থেকে তিনি ট্রান্সক্রিয়েশন করেছেন—প্রধানত বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরীদের জন্য। আশ্চর্য, তিনি বিজ্ঞানের পরিভাষা রচনাতেও অগ্রণী ছিলেন! শিক্ষা, নারীশিক্ষা, বিধবাদের অশ্রুপাত তাঁর মধ্যে শুধু রোদন-প্রবণতা আনেনি, তাঁকে বজ্রকঠোরও করেছিল এবং সমাজব্যবস্থা ও সমাজপ্রধানদের সাথে লড়াই করার রসদও জুগিয়েছিল। পরিশেষে একটি কথা। একাধিক লেখক বিদ্যাসাগরের সাঁতরে দামোদর পার হওয়ার কথা লিখেছেন। এটি কিন্তু মিথ, সেই যুগে তৈরি হয়েছিল তাঁকে মহানতর করার জন্য। কিন্তু এখন এই মিথের প্রয়োজন নেই, তিনি এমনিতেই আমাদের কাছে মহত্তম চরিত্র। সম্পাদক মহাশয়কে ও এই গ্রন্থের লেখকদের আন্তরিক ধন্যবাদ এমন অমূল্য গ্রন্থখানি উপহার দেওয়ার জন্য। সব কয়টি প্রবন্ধ ও কবিতাই অসাধারণ। বিশেষভাবে স্বামী সুপর্ণানন্দ, স্বামী শিবপ্রদানন্দ, তীর্থঙ্কর দাশ পুরকায়স্থ, রাইকমল দাশগুপ্ত, অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য, ডঃ গোবিন্দ সরকারের নাম উল্লেখ করতেই হয়।  অমিয়া সায়রেসম্পাদনা : অসিত বরণ গিরিসুদেষ্ণা...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in