ওড়িশায় পুরী আসেননি—এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। শ্রীজগন্নাথ দর্শন, সমুদ্রে স্নান

ওড়িশায় পুরী আসেননি—এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। শ্রীজগন্নাথ দর্শন, সমুদ্রে স্নান ও বিশ্ব-ঐতিহ্যের স্মারক কোণারকের সূর্যমন্দির যেন বাঙালির একান্ত আপন। এই কোণারকের অনতিদূরেই রয়েছে সেই সময়কার ওড়িশার একান্ত নিজস্ব কাখর মন্দিরশৈলীর গঙ্গেশ্বরী-মন্দির, যা অনেকেরই অজানা। এখানকার মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ-সপ্তম থেকে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতক পর্যন্ত এই ধরনের মন্দির নির্মিত হতো। মহারাজ শশাঙ্কের পর কলিঙ্গে শৈলোদধ্বদের রাজত্ব শুরু হয়। এই সময় থেকে মন্দিরনির্মাণে প্রথম ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ ঘটে। পরবর্তিকালে তা সমৃদ্ধিলাভ করে ভৌমকর ও সোমবংশী রাজত্বকালে এবং চরম উৎকর্ষ লাভ করে গঙ্গা বংশের রাজত্বকালে। মন্দির-স্থাপত্যের নিরিখে কলিঙ্গের দেবদেউল প্রধানত তিন প্রকার—রেখ দেউল, পীড়া দেউল ও কাখর দেউল। গঙ্গা রাজবংশ (একাদশ—পঞ্চদশ শতক) ওড়িশায় নানাবিধ কলা, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। এঁদের সময়েই তৈরি হয় পুরীর জগন্নাথ-মন্দির, কোণারকের সূর্যমন্দির, ভুবনেশ্বরে অনন্তবাসুদেব এবং গঙ্গেশ্বরীর মন্দির। গঙ্গা বংশের রাজা নৃসিংহদেবের (১২৩৮—১২৬৪) পৃষ্ঠপোষকতায় গঙ্গেশ্বরীর মন্দির নির্মিত হয়। বংশের অধিষ্ঠাত্রী কুলদেবী বিরাজমান এই মন্দিরে, তাই এঁর নামকরণও হয় গঙ্গেশ্বরী মাতৃকা-রূপে। জানা যায়, ওড়িশায় নবম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রচুর শাক্ত কাখর শিল্পশৈলীর মন্দির তৈরি হয়—যেমন ভুবনেশ্বরের বৈতল দেউল ও গৌরী-মন্দির, পুরীর চৌরাশি গ্রামে বারাহী ও গঙ্গেশ্বরীর মন্দির। গঙ্গা বংশের রাজত্বকালের শেষদিকে কাখর শিল্পশৈলীর মন্দিরনির্মাণ তার চরম পরাকাষ্ঠায় পৌঁছায়, যার নিদর্শন এই গঙ্গেশ্বরী-মন্দির। এই মন্দিরটিকে ইউনেস্কার ঐতিহ্যবাহী কোণারকের সূর্যমন্দিরের আদিরূপ (Prototype) বলা যেতে পারে। জানা যায়, দুটি মন্দির প্রায় একই সময়ে নির্মিত হয়েছিল। কলিঙ্গের ভক্তকুলের আগ্রহে এতদিন শুধু শৈবমন্দির নির্মাণই প্রাধান্য পেত, কিন্তু শক্তিপূজার সূচনা ঘটায় শাক্তমন্দির নির্মাণের প্রসার পরিল‌ক্ষিত হয়। কালক্রমে তান্ত্রিক শক্তি-উপাসনার স্থানগুলির মধ্যে একাম্র‌ক্ষেত্র ভুবনেশ্বর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় একাধিক শাক্তমন্দির গড়ে ওঠে। রেখ ও পীড়া দেউলের বাস্তুনকশায় পরিবর্তনসাধন করে গড়ে ওঠে শক্তি-উপাসনার দেবদেউল—যা ‘কাখর দেউল’ নােম পরিচিত। ভুবনেশ্বরে পঁাচটি এবং পুরীর চৌরাশি গ্রামের বারাহী-মন্দির ও বিয়াল্লিশবাটি গ্রামের গঙ্গেশ্বরী-মন্দির এই ধারায় নির্মিত। পুরী জেলার বিয়াল্লিশবাটি গ্রামের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত গঙ্গেশ্বরী-মন্দির কোণারকের...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in