“এলেম নতুন দেশে—
তলায় গেল ভগ্ন তরী, কূলে এলেম ভেসে।।”

রবীন্দ্রনাথের কল্প-ছোঁয়ার ‘তাসের দেশ’ আবিষ্কারের মতো, ময়ূরপঙ্খি নাও নিয়ে উদ্দাম সাগরের উজানে পাড়ি দিয়ে নতুন দেশ খুঁজে পাওয়ার কত না রোমহর্ষক কাহিনি পড়েছি রূপকথার গল্পে! জেনেছি কলম্বাসের আমেরিকা ও ভাস্কো-দা-গামার সুদূর ইউরোপ থেকে পাড়ি দিয়ে আফ্রিকার ‘কেপ অব গুড হোপ’ পেরিয়ে ভারত আবিষ্কারের কথা।

“এলেম নতুন দেশে—তলায় গেল ভগ্ন তরী, কূলে এলেম ভেসে।।”১ রবীন্দ্রনাথের কল্প-ছোঁয়ার ‘তাসের দেশ’ আবিষ্কারের মতো, ময়ূরপঙ্খি নাও নিয়ে উদ্দাম সাগরের উজানে পাড়ি দিয়ে নতুন দেশ খুঁজে পাওয়ার কত না রোমহর্ষক কাহিনি পড়েছি রূপকথার গল্পে! জেনেছি কলম্বাসের আমেরিকা ও ভাস্কো-দা-গামার সুদূর ইউরোপ থেকে পাড়ি দিয়ে আফ্রিকার ‘কেপ অব গুড হোপ’ পেরিয়ে ভারত আবিষ্কারের কথা। কিন্তু এরিথ্রিয়ান সাগরের ‘পেরিপ্লাস’-এর কথা কানে আসেনি কোনোদিনও। এমনকী বড় বড় ইতিহাসবিদদের গ্রন্থেও তার কোনো উল্লেখ মেলেনি। যেমন নামজাদা ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার তাঁর The Penguin History of Early India, from the origins to AD 1300 গ্রন্থে তার কোনো উল্লেখ করেননি। অথচ সেখানে ফা-হিয়েন (যাত্রাকাল ৪০৫—৪১১), হিউয়েন সাঙ (যাত্রাকাল ৬৩০—৬৪৩), অলবেরুনির (যাত্রাকাল ১০৩০) মতো ভারত-অভিযাত্রীদের কথা উল্লেখিত হয়েছে।২ স্থান পেয়েছেন তাঁরা ইতিহাসের পাতায়। বিস্ময়কর হলেও একথা সত্যি যে, প্রায় দুহাজার বছরের পুরানো পেরিপ্লাসে ভারত-অভিযাত্রীদের এই অমূল্য দলিল ও তার অসামান্য বয়ানের কথা নথিভুক্ত হয়নি কোনোখানে। জায়গা পায়নি সে ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের কালানুক্রমের তালিকায়। আরো আশ্চর্যের বিষয়, মূল গ্রিক-রোমান ভাষায় লিখিত এই পেরিপ্লাসের যে ইংরেজি অনুবাদ হয়, সেটিও প্রকাশিত হয়েছে প্রায় একশো দশ বছর আগে—১৯১২ সালে।৩ ‘পেরিপ্লাস’ আসলে একটি গ্রিক শব্দ, যার অর্থ হলো ‘জলপথে ভ্রমণ’। পেরিপ্লাস নামের সেই ডায়েরিটিতে অজ্ঞাত লেখক তাঁর জলপথে অভিযানকালের খুঁটিনাটি বর্ণনা ও আমদানি-রপ্তানির নিখুঁত হিসাব লিখে রেখেছিলেন। ছেষট্টিটি ছত্রে বর্ণিত সেই অদ্ভুত এবং প্রথম ভ্রমণ-বয়ান প্রায় দুহাজার বছর পূর্বের জলপথে বাণিজ্যের এক অভিনব ছবিকে তুলে ধরে। লেখকের বিস্তারিত বর্ণনায় উঠে আসে যাত্রাপথের প্রতিটি বাঁক ও অবস্থার কথা, প্রতিটি বন্দরের ভালমন্দের খবর, মানুষজনের ব্যবহারের খুঁটিনাটি ও ব্যবসায়িক আমদানি-রপ্তানির হিসাবপত্র একাধারে।৪ লেখকের নিজস্ব দেখা বাণিজ্যযাত্রায় ধরা পড়েছিল বিশ্ব-মানচিত্রের এক বড় অংশের রূপরেখা—সেই সময়ে, যখন মানচিত্রের প্রচলন হয়নি পৃথিবীর বুকে অথচ মানুষ সাহসে বুক বেঁধে দেশান্তরের উদ্দেশে সাগরে পাড়ি দিতে আরম্ভ করে দিয়েছে। অথৈ জলের অকুল পাথারের সেইসব দুঃসাহসিক অভিযানে পেরিপ্লাসের এই পুঁথি তাদের পরবর্তী পত্তন...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in