আলোর দিশা

উদ্বোধন-এর গত বৈশাখ ১৪৩২ সংখ্যায় উপস্থাপিত ‘তপস্যা’ প্রসঙ্গ আমাদের জীবনে যে আত্মজ্ঞানলাভে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্য সম্পাদক মহারাজকে অসংখ্য সাধুবাদ জানাই। শ্রীশ্রীঠাকুর ও শ্রীশ্রীমায়ের আধ্যাত্মিক ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা যারা ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি, এই সংখ্যাটি তাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান ও কার্যকরী। অবশ্য এই পত্রিকার অন্য সংখ্যার রচনাগুলিও যথেষ্ট ভাবসম্পদে সমৃদ্ধ। বর্তমানে মানুষের অন্তরে যে-অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে, সেই বাধাবিপত্তির বৈতরণী থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য ঠাকুর, মা ও স্বামীজীর দেখানো পথই যে সর্বোত্তম—সেটা আজ অন্তরে অন্তরে অনুভূত হচ্ছে। সেই পরিপ্রে‌ক্ষিতে উদ্বোধন পত্রিকার এই ‘তপস্যা’ সংখ্যা খুব সহজ-সরলভাবে আমাদের পথনির্দেশ দান করেছে। মনোযোগ সহকারে অনুশীলন করে গেলে এজীবনে এক প্রেরণার উৎসাহ খুঁজে পাওয়া যাবে। তপস্যার ধ্যানমগ্ন গভীর নীরবতাকে জীবনে অঙ্গীভূত করে নিলে এই জীবন নিঃসন্দেহে আনন্দময় হয়ে উঠবে। এই সংখ্যায় শ্রীরামকৃষ্ণের পার্ষদবৃন্দের তপস্যাপূত জীবন যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তাতে বোঝা যায়, শ্রীরামকৃষ্ণ-জীবনে যেসব ভিন্ন ভিন্ন সাধনমার্গ আচরিত হয়েছিল, তাঁর পার্ষদগণ আপন আপন প্রকৃতি অনুসারে সেগুলির এক বা একাধিক মার্গ অবলম্বন করে চরম অবস্থায় উপনীত হয়েছিলেন। তাঁরা নিজ জীবনের সেই মূল্যবান অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিগুলি বিতরণ করে গেছেন আমাদের কল্যাণের জন্য। তাই শ্রীরামকৃষ্ণের অনন্ত ভাবধারা জানার পাশাপাশি যদি পার্ষদবৃন্দের জীবনী পাঠ করি, তাহলে তা শ্রীরামকৃষ্ণ-প্রদর্শিত পথে চলতে আমাদের সাহায্য করবে। স্বামী বিবেকানন্দের অশেষ কৃপায় ১২৭ বছর ধরে উদ্বোধন পত্রিকা যে নিরলসভাবে মানুষের আধ্যাত্মিক কল্যাণের প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে তার ফলস্বরূপ আমরা সকলেই সমৃদ্ধ হচ্ছি। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ নিজমুখে কথামৃত-এ ভক্তদের উদ্দেশে বলেছেন—মলয়ের বাতাস বইছে, পাল তুলে দিলেই হলো। এর জন্য আমাদের অবশ্যই সযত্ন প্রয়াস করে যেতে হবে। আজকের পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সেজন্য নিজেদের চলার পথটিকে নিজেদেরই তৈরি করে নিতে হবে। তাহলেই স্বামী বিবেকানন্দের প্রবর্তিত উদ্বোধন পত্রিকার এমনতর অপূর্ব প্রয়াস সার্থক হবে; এই সমাজ সুন্দর হয়ে উঠবে। দেবাশীষ দাস বর্মননিউ ব্যারাকপুর, কলকাতা-৭০০১৩১