ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ১৮৬৪ সালের ৫ অক্টোবর (১৯ আশ্বিন ১২৭১ বঙ্গাব্দ) এক ভয়ংকর সংকট উপস্থিত হয়েছিল ভারতবাসীর জীবনে—‘আশ্বিনের ঝড়’রূপে। কলকাতা ও উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই ঝড়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে পঞ্চমীর দিন, ঝড় থেমেছিল পরদিন সন্ধ্যায়।
ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ১৮৬৪ সালের ৫ অক্টোবর (১৯ আশ্বিন ১২৭১ বঙ্গাব্দ) এক ভয়ংকর সংকট উপস্থিত হয়েছিল ভারতবাসীর জীবনে—‘আশ্বিনের ঝড়’রূপে। কলকাতা ও উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই ঝড়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে পঞ্চমীর দিন, ঝড় থেমেছিল পরদিন সন্ধ্যায়। তৎকালীন কিছু পুস্তিকার সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল রাশিয়া, রেঙ্গুন, মুলতান (পাকিস্তান), নেপাল, দেপাল (ভুটান), সৌরাষ্ট্র (গুজরাট), মথুরা, শিখ (পাঞ্জাব), কাশী, কাঞ্চি (তামিলনাড়ু), অবন্তী, অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ (বিহার-বাংলা-ওড়িশা), মানভূম, বরা (পুরুলিয়া), ডায়মন্ডহারবার, গঙ্গামণ্ডল, মুড়াগাছা, কাশীপুর, মাহেশ, চাঁদপাল বন্দর প্রভৃতি বহু স্থান। এই আশ্বিনের ঝড়ের প্রসঙ্গ আমরা পাই শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত-এ। শ্রীরামকৃষ্ণ একদা শ্রীমকে জিজ্ঞেস করেছিলেন : “তোমার আশ্বিনের ঝড় মনে আছে?” উত্তরে শ্রীম বলেন : “আজ্ঞা, হাঁ। তখন খুব কম বয়স—নয়-দশ বছর বয়স—একঘরে একলা ঠাকুরদের ডাকছিলাম।” সেদিনটার কথা স্মরণ করে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন : “দক্ষিণেশ্বরে অনেক বেলায়—তবে কি কি রান্না হল। গাছ সব উলটে পড়েছিল!”১ আশ্বিেনর এই ঝড়ের কারণে বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়। বহু গবাদি পশু মারা যায়। জলে ভেসে যায় বহু জীব, ‘কোন কালে এমন না হয় অত্যাচার’। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কলকাতা ও উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। আসন্ন দুর্গাপুজো উপলক্ষে সরকারি ছুটি চলছিল। চারদিকে ছিল খুশির পরিবেশ। ঝড়ের পূর্বেই যারা প্রতিমা এনেছিল, তারাই কেবলমাত্র বিষণ্ণমনে পূজা করেছিল এবং সংক্ষেপে। বহু জায়গায় প্রবল বৃষ্টিতে, বন্যায় দুর্গামূর্তি ভেসে গিয়েছিল। এই আশ্বিনের ঝড়ের কোনো পূর্বাভাস ছিল না। সমকালীন ইংলিশম্যান, হরকরা, বেঙ্গলি প্রভৃতি ইংরেজি পত্র-পত্রিকাগুলি ইংরেজ সরকারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে কথা বললেও সাধারণ ভারতবাসীর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে নীরব ছিল। ইংল্যান্ডের বহু ইংরেজি পত্রিকায় এই ঝড়ের খবর প্রকাশিত হয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৬৪ সালের ১৬ নভেম্বর ফ্রান্সের ভার্সাই শহর থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে একটি চিঠিতে লিখেছেন : “গত ৫ই অক্টোবর যে-ভয়াবহ ঝড় আপনাদের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে তার বিবরণ জেনে আতঙ্কে আমার মনপ্রাণ ভরে গিয়েছে।”২ ঝড়ের পরেই উদ্ধারকাজ শুরু হয়। স্থানীয় ইংরেজ প্রশাসন ও দেশীয় জমিদারেরা সাহায্যে তৎপর হয়ে ওঠে। তিন মাস পরে বন্যার জল কমে। সমকালে ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in