কিশোরটির নাম রামতনু মিশ্র। বর্ণাশ্রম প্রথা অনেকখানি ফিকে হয়ে এসেছে এখন।
কিশোরটির নাম রামতনু মিশ্র। বর্ণাশ্রম প্রথা অনেকখানি ফিকে হয়ে এসেছে এখন। ব্রাহ্মণ-সন্তান হয়েও কোনো এক ব্রজবাসীর গৃহে গোচারণে দিন কাটে। ব্রজভূমি সেই কোন্ কাল থেকে কৈশোর, গোপালন আর সংগীতের সুর নিয়ে ইতিহাস বুনে চলেছে। ছেলেটিকে নিয়ে এবার গাঁথা হবে নতুন এক রূপকথা। সেই শুভক্ষণের প্রাক-মুহূর্তে আমরা এসে পৌঁছেছি এখন বৃন্দাবনে। এক সাধু ভজন গাইতে গাইতে চলেছেন যমুনার জলে। সারাদিনে কত না রাগ-রাগিণীর আলাপনে তিনি তাঁর প্রাণবল্লভকে প্রেমনিবেদন করেন! সর্বদা সংগীতেই ভাসছেন যেন। জল দিয়ে তাঁর প্রাণবল্লভ বিহারীজীর সেবা হবে হয়তো। তা-ই নিতে এখন যমুনায় আসা। এমন সময়ে বাঘের ভীষণ গর্জন! গোরুগুলি সব কাতর আর্তনাদে এদিক-সেদিক ধাবমান। প্রশান্ত সাধু ক্ষণিক বিস্মিত হলেন মাত্র। কারণ, বৃন্দাবনে তো বাঘের উপদ্রব কখনো নেই। তবে কী হলো? চারপাশে তাকিয়ে দেখতেই সাধুর বুঝতে বাকি রইল না, এই কাজ গাছের আড়ালে ঐ ছেলেটিরই। এ যে অবিকল বাঘের আওয়াজ! অদ্ভুত প্রতিভা তো তার! সস্নেহে কাছে ডাকলেন ছেলেটিকে। কিশোরসুলভ চপল হাসিতে ভরিয়ে দিয়ে নম্রভাবে সে এসে দাঁড়াল চুপটি করে। এমন যার স্বরের ওপর দখল তাকে তো স্বরসিদ্ধ সাধু ভালবাসবেনই। কিশোরটিকে তাঁর শিষ্য করে নিলেন। সেদিনের সেই কিশোর রামতনুই উত্তরকালের মিঞা তানসেন, যাঁর সুরের জাদুতে মানুষ তো অতি তুচ্ছ—পঞ্চভূত পর্যন্ত সম্মোহিত হয়ে থাকত অদ্ভুত নেশায়। আর যে মহাপুরুষের নিখুঁত নির্ণয়ে রামতনুর সামান্য শিশুক্রীড়াও সংগীতের অজাত প্রকাশ বলে নির্ভুল ধরা দিয়েছিল, তিনি আর কেউ নন—কৃষ্ণ-সাধক হরিদাস স্বামী। শ্রীমতীর সখী ললিতার ভাবে হরিদাসজী ব্রজধামে সাধনা করতেন প্রায় পাঁচশো বছর আগে। আজ যে বাঁকেবিহারীজীকে একবারটি না দেখলে ব্রজবাস ভরে ওঠে না, তাঁর সেই প্রেম-ঢলঢল মূর্তিটিকে ঘিরেই ছিল হরিদাসজীর দিবানিশি কৃষ্ণযাপন। এক কৃষ্ণ ছাড়া সবেতেই তিনি উদাসীন। তা হবে না-ই বা কেন! নিধিবনে তিনি গাইতে বসলেই ভাবনেত্রে যুগলমূর্তি স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠতেন যে। তাঁর সুরের টানেই একদিন বাঁকেবিহারীজী নিজে এসে প্রকট হলেন। বড় মনোলোভা সে মূর্তি! আজ যেখানে বাঁকেবিহারীজীর মন্দির, হরিদাসজীর সময়ে এমনটি ছিল...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in