কলেজ জীবন থেকে পেশাদার থিয়েটার দেখার প্রচুর সুযোগ হয়েছে। বারবার একটা জিনিস খেয়াল করেছি যে, প্রতিটি পেশাদার মঞ্চে শ্রীরামকৃষ্ণের সমাধিস্থ ছবিটির উজ্জ্বল উপস্থিতি।

কলেজ জীবন থেকে পেশাদার থিয়েটার দেখার প্রচুর সুযোগ হয়েছে। বারবার একটা জিনিস খেয়াল করেছি যে, প্রতিটি পেশাদার মঞ্চে শ্রীরামকৃষ্ণের সমাধিস্থ ছবিটির উজ্জ্বল উপস্থিতি। পরে জেনেছি, বাংলা পেশাদার থিয়েটারের ইতিহাসে শ্রীরামকৃষ্ণের কী বিশাল অবদান আর গুরুত্ব। সেই উনিশ শতকের কলকাতায় ‘বঙ্গের শেক্সপীয়র’ গিরিশচন্দ্র ঘোষের হাত ধরে সর্বসাধারণের জন্য বাংলা পেশাদার রঙ্গালয়ের প্রকৃতপক্ষে বেড়ে ওঠা—যার সূচনা হয়েছিল ১৮৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটক অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। সেসময় সামাজিকভাবে থিয়েটার করার বাধা ছিল প্রচুর। থিয়েটারে স্ত্রী-চরিত্রে অভিনয় করত পুরুষেরা। গিরিশবাবু সেই ‘থ্যাটার’ করাতে রঙ্গালয়ে নারীচরিত্রের অভিনয়ের জন্য বারবনিতাদের নিয়ে এসেছিলেন। ফলত সেসময়ের রক্ষণশীল নীতিবাগীশ হিন্দু সমাজ, বিদ্বজ্জনেরা তার বিরুদ্ধে রে রে করে উঠেছিল। চারিদিকে নিন্দে-মন্দের শোরগোল উঠেছিল। বস্তুতপক্ষে, ব্রিটিশ-শাসিত বঙ্গসমাজ সেদিন রাজনৈতিক পরাধীনতার গ্লানি ভুলতে তমসাচ্ছন্ন সংস্কার, মানবিক ধর্মবিবর্জিত আচার-বিচারকেই আত্মগরিমার বিষয় ঠাউরে শ্লাঘা বোধ করত। সেসময় ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্ত-মিত্র সমভিব্যাহারে ৬৮ নং বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটারে ১৮৮৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আসেন গিরিশচন্দ্রের ‘চৈতন্যলীলা’ দেখতে। এসে সবার সঙ্গে বসে অভিনয় দেখে করতালি দিলেন, আনন্দাশ্রু বিসর্জন করলেন, অভিনয় শেষে শ্রীচৈতন্যরূপী বিনোদিনীর মাথায় হাত রেখে বললেন—‘চৈতন্য হোক’। সেইদিনই বঙ্গসমাজের নাট্যবিরোধিতার বিষদাঁতটির গোড়া নড়ে গিয়েছিল। সূচিত হয়েছিল থিয়েটারের কৌলিন্যের নতুন অধ্যায়। সেদিন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ থিয়েটারের বুকে সত্য-শিব-সুন্দরের যে-সিলমোহরটি এঁকে দিয়েছিলেন, আজও তার গৌরব বাংলা নাট্যের অক্ষয় পুঁজি। বাংলা নাট্যের দৈনন্দিন চর্চায় ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ঐদিন থেকে হলেন আমাদের সঙ্গী। বলতে দ্বিধা নেই, বাংলা থিয়েটারের সেদিন বিশেষ দরকার ছিল ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের। আর আজ ঠাকুরের পদাশ্রিত সেই সাধারণ রঙ্গালয় বাংলায় নেই, তবুও বাঙালির অবলুপ্ত সাধারণ রঙ্গালয়ের সার্ধশতবর্ষে আমার দেখা সেই উজ্জ্বল অভিজ্ঞতা আর স্মৃতির কথা কিছু বলব। দুই আমরা যখন কলেজে পড়ছি তখন কলকাতায় স্টার, রঙমহল, রঙ্গনা, নাট্যনিকেতন প্রভৃতি হল জমিয়ে চলছে। স্টার বলতে আমরা তখন জানতাম ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের আশীর্বাদধন্যা বিনোদিনী দাসীর কথা—যিনি নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন এই থিয়েটার-গৃহটির জন্য। এর জন্য তাঁকে আশ্রিত হতে হয়েছিল গূর্মুখ...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in