বিশ শতকের নয়ের দশকের শেষ দিক থেকে মাঝে-মধ্যেই মণিপুরে যেতে হতো। একবার দু-তিনটি জরুরি সভার কারণে ইম্ফলে গেছি।

রঘুমণির গীতাঞ্জলি বিশ শতকের নয়ের দশকের শেষ দিক থেকে মাঝে-মধ্যেই মণিপুরে যেতে হতো। একবার দু-তিনটি জরুরি সভার কারণে ইম্ফলে গেছি। মণিপুরী ভাষার লেখক ও অনুবাদক রঘুমণি শর্মা (জন্ম ১৯৪০) এসে দেখা করলেন। পরের দিন সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। রঘুমণি ছোটখাটো চেহারার মানুষ আর গায়ের রং কালো। ধুতি-পাঞ্জাবি পরতেন, গলায় তুলসীর মালা, কপালে আর নাকে চন্দনের রসকলি। ঐ প্রজন্মের অনেকের মতো তিনিও পড়াশোনা করেছিলেন ‘বাংলা স্কুল’-এ। ১৮৯১ সালে মণিপুরে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় আর তারপর বেশ কিছু বাঙালি রাজকর্মচারীকে সেখানে পাঠানো হয়। সেই কর্মচারীদের থাকার জন্য ‘বাবুপাড়া’ তৈরি হয় এবং ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। তার পাঁচ দশক পরে রঘুমণি শর্মা সেই বাংলা স্কুলে পড়াশোনা করেন। স্কুলশিক্ষা শেষ করে উঠতে পারেননি কিন্তু বাংলা ভাষায় লিখতে ও পড়তে ভালই শিখেছিলেন। রঘুমণির বাড়ি যে-অঞ্চলে, তার নাম ‘ব্রহ্মপুর নহবম্ লেইকাই’। জায়গাটা ইম্ফল শহর থেকে কিছুটা ছেড়ে, বলা যায় বৃহত্তর ইম্ফলে। শহরের দোকানপাট পিছনে ফেলে বাঁশের বন, পুকুরডোবা, ঘরবাড়ি, গাছপালার গা দিয়ে রাস্তা এঁকেবেঁকে চলেছে। ক্রমশ পুরোপুরি গ্রামীণ চেহারা ফুটে উঠছে। যেতে যেতে একসময় রঘুমণির মাটির বাড়ির সামনে পৌঁছে যাই। তিনি এগিয়ে এসে মাটির উঁচু দাওয়ার কাছে নিয়ে যান। তাঁর স্ত্রী বসার মোড়া দেন। দাওয়াতে বসে দেখি উঠানটা বেশ বড়সড়। বাঁদিকে গোরু রাখার ছোট গোয়াল আর ডানদিকে মাঝারি মাপের একটা খড়ের পালু‌ই। গোয়াল আর পালুইয়ের মাঝে বাদামি রঙের একটা গোরু দাঁড়িয়ে আছে আর সামান্য দূরে তার বাছুরটি বাঁধা। শীতের সকালে নরম রোদ পড়েছে তাদের গায়ে। বাছুরটি একটু চঞ্চল হয়ে উঠেছে রাতের উপবাস কাটেনি বলে। দুধ দোওয়া শুরু হলে পেটে দুধ ঢুকবে আর গোঁজের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে শীতের সকালে খানিক ঘুরতে পারবে। রঘুমণি শর্মার বাড়ির উঠানের মাঝখানে একটি তুলসীমঞ্চ। ইট দিয়ে তৈরি সে-মঞ্চের মাঝখানে গোটা চারেক তুলসীগাছ। তুলসীমঞ্চটি ঘিরে কয়েকটা চড়াই মহানন্দে খেলা করছে। রঘুমণি শর্মার স্ত্রী আমাকে কাঁসার রেকাবিতে...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in