জগদ্ধাত্রীপূজার উল্লেখ মহামহোপাধ্যায় শূলপানির ব্রতকাল বিবেক (কালবিবেক) গ্রন্থে পাওয়া যায়।
[পূর্বানুবৃত্তি : অগ্রহায়ণ সংখ্যার পর]।।৬।। জগদ্ধাত্রীপূজার উল্লেখ মহামহোপাধ্যায় শূলপানির ব্রতকাল বিবেক (কালবিবেক) গ্রন্থে পাওয়া যায়। গ্রন্থটি শ্রীচৈতন্য-পূর্ববর্তী বলে মনে করা হয়। রঘুনন্দন ভট্টাচার্যের স্মৃতিতেও এই পূজার আভাস রয়েছে। পূর্ববর্তী কাত্যায়নীতন্ত্র অবলম্বনে এই পূজার মন্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পূজার বিধান পূর্বতন শাস্ত্রে থাকলেও এই পূজাকে জনপ্রিয় করা নিঃসন্দেহে নদিয়া রাজবংশের কৃতিত্ব। নদিয়ারাজের বন্ধু ফরাসডাঙার দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি থেকেই জগদ্ধাত্রীপূজার প্রেরণালাভ করে চন্দননগরে তার প্রচলন করেন। জগদ্ধাত্রী-পূজার প্রসারে তাই নদিয়ার দান অনস্বীকার্য। এই পূজা নবমীর সন্ধ্যাত্রয়ব্যাপী একদিনের পূজা হলেও শ্রীমায়ের আরব্ধ পূজাটি তিনদিন ধরে চলে—নবমী, দশমী ও একাদশী। এই পূজার সঙ্গে শ্রীমায়ের বহু লীলা জড়িয়ে আছে। ব্রহ্মচারী অক্ষয়চৈতন্য স্বামী সারদানন্দজীর মত উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন—শ্রীমায়ের ইষ্টদেবতা ছিলেন সম্ভবত জগদ্ধাত্রী। সেজন্যই জয়রামবাটীতে তাঁর জন্মস্থানে মন্দিরপ্রতিষ্ঠার দিন রাত্রে দেবী জগদ্ধাত্রীর বিশেষ পূজা হয়।১৮০ কালী ও জগদ্ধাত্রী—এই দুই দেবীর পূজাই তন্ত্রোক্ত পদ্ধতিতে হয় এবং বাংলাতে বিশেষ জনপ্রিয়। এঁরা শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীমায়ের ইষ্টদেবী। আরেক দেবীরও নদিয়ার সঙ্গে যোগ রয়েছে। তিনি দেবী অন্নদা বা অন্নপূর্ণা। লোকবিশ্বাস, ইনি শ্রীচৈতন্যের ইষ্টদেবী। বারাণসীতে অন্নপূর্ণা-ভবানী বিরাজিতা থাকলেও তার বাইরে স্বতন্ত্রভাবে অন্নপূর্ণাপূজার ব্যবস্থা বিশেষ করে বাংলাতেই দেখা যায় এবং তারও উদ্ভব নদিয়ায়। কাশীর দেবী অন্নপূর্ণার যে-ধ্যানমন্ত্র, তাতে তিনি চতুর্ভুজারূপে কল্পিত। দ্বিভুজা, অন্নদানরতা অন্নপূর্ণা বাংলাতেই বেশি পরিচিত এবং এর সূত্র নদিয়ার রাজপরিবার। রাজপরিবারে প্রচলিত আছে যে, এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদারের আরাধিতা ছয় ফুট উঁচু বেলেপাথরের স্বর্ণাভ অন্নপূর্ণা-প্রতিমা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। বর্তমানে সেই ভগ্ন দেবীমূর্তির চরণ, কষ্টিপাথরের জয়া-বিজয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত শিবলিঙ্গ রাজবাড়ির অভ্যন্তরে পূজিত হন। তবে মৃন্ময়ী প্রতিমায় অন্নপূর্ণাপূজার জনপ্রিয়তা যে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমল থেকে, তা প্রায় সকলেই স্বীকার করে নিয়েছেন।১৮১ অন্নদাকল্প-উক্ত পূজাপদ্ধতি অনুসারে অন্নপূর্ণার মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে বাসন্তী নবরাত্রির অষ্টমীতে পূজা নদিয়ার রাজবংশেই শুরু হয়। লোকবিশ্বাস, ভট্টনারায়ণ বংশীয় ভবানন্দ রায় (‘মজুন্দার’) অন্নদার বরপুত্ররূপে আবির্ভূত হন এবং নিজের নিম্নবিত্ত অবস্থাকে দেবীর কৃপায় উন্নত করে কৃষ্ণনগর বা নদিয়ার রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। ভবানন্দের উত্তরপুরুষ মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in