কিন্তু এখন কথা হলো—এই যে অদ্বৈতজ্ঞান বা চৈতন্যের কথা এতক্ষণ ধরে আমরা আলোচনা করলাম,
[পূর্বানুবৃত্তি : জ্যৈষ্ঠ সংখ্যার পর]।। ২।। কিন্তু এখন কথা হলো—এই যে অদ্বৈতজ্ঞান বা চৈতন্যের কথা এতক্ষণ ধরে আমরা আলোচনা করলাম, এর সাথে শুদ্ধাভক্তির যোগ কোথায়? এটি বোঝার জন্য একবার ফিরে যেতে হবে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার অষ্টাদশ অধ্যায়ের শেষ দিকে, যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন : “ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি…।”৫ এই কথাটি ভারী অদ্ভুত! শ্রীভগবান বলছেন—যার এমন অনুভূতি হয়েছে যে, তার প্রকৃত স্বরূপ যে-চৈতন্য সেই চৈতন্যই সর্বভূতে উপস্থিত, তার না থাকে কোনো দুঃখ, না থাকে কোনো আকাঙ্ক্ষা, না থাকে সুখ। সর্বতোভাবে সে বুঝতে পারে—কোনো অনুভূতি সুখ বা দুঃখের নয়, সমস্ত অনুভূতির মধ্যেই নিহিত আছে সেই পরম ও এক চৈতন্য। তাই জীবনে ভাল কিছু ঘটলে সে অতিমাত্রায় হৃষ্ট হয় না, খারাপ কিছু ঘটলেও অতিমাত্রায় অনুশোচনা করে না। অন্তরের বোধে সে তখন আলোকোজ্জ্বল। শ্রীশ্রীঠাকুরের ক্যান্সারের সময়ে হরি মহারাজ যখন তাঁকে বলছেন : “…আমি দেখছি আপনি অসীম আনন্দের সমুদ্র”, ঠাকুর তখন হেসে বলছেন : “শালা ধরে ফেলেছে রে!”৬ অর্থাৎ, শরীরের দুঃখ-কষ্টে তাঁর অন্তরাত্মা ব্যাকুল নয়—স্থিতধী। পরবর্তিকালে স্বয়ং হরি মহারাজের ক্ষেত্রেও এই একই ভাব লক্ষ্য করা গেছে। কাশী সেবাশ্রমে মহারাজ তখন খুব রোগভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর অস্ত্রোপচার করা হলো। একজন তাঁকে জিজ্ঞেস করছেন : “অস্ত্রোপচারের সময় আপনি কি কোনপ্রকার বেদনা অনুভব করেননি?” উত্তরে তিনি বলেন : “দেখ, মনটা ছেলেমানুষের মত। তাকে ধরে রাখলে সে ক্রমাগত বলে, ‘ছাড়, ছাড়।’ একবার তাকে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু তখনও অস্ত্রোপচার শেষ হয়নি; তাই আবার ধরে ফেললাম।”৭ অন্যত্র বলেছেন : “ইন্দ্রিয়বশ করাই আত্মজ্ঞান লাভের একমাত্র উপায়। যখন সকল ইন্দ্রিয় বশীকৃত, তখনই ‘নৈবকুর্বন্ ন কারয়ন্’ ইতি বোধ—তখনই ‘ন কর্তৃত্বং’ ইত্যাদি উপলব্ধির বিষয় হয়।… এসকল কথা বোঝানো যায় না—‘বোঝে প্রাণ বোঝে যার।’ ভিতর ঠাণ্ডা হয়ে যায়! বাহিরের পুড়ুনি জ্বলুনি দেখ কেন? ভিতর যে বরফ হইয়া রহিয়াছে!”৮ অর্থাৎ, বাইরের তাপ-উত্তাপ, কষ্টে অন্তর উত্যক্তবোধ করে না। সমস্ত সুখ-দুঃখের পিছনে থাকা চৈতন্যকে জেনে সে চিরশান্ত। পঞ্চদশীর শেষে এই প্রশ্ন তুলে আনা হচ্ছে যে, কোনো দুঃখ...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in