মার্কণ্ডেয়পুরাণ-এর ৮১ থেকে ৯৩—এই ১৩টি অধ্যায় পৃথগ্ভাবে ‘শ্রীশ্রীচণ্ডী’,
মার্কণ্ডেয়পুরাণ-এর ৮১ থেকে ৯৩—এই ১৩টি অধ্যায় পৃথগ্ভাবে ‘শ্রীশ্রীচণ্ডী’, ‘শ্রীশ্রীদেবীমাহাত্ম্য’ বা ‘দুর্গাসপ্তশতী’ নামে পরিচিত। দেবী চণ্ডী বেদমূলা। তিনি ব্রহ্ম-অভিন্না, জ্ঞান-ইচ্ছা-ক্রিয়াময়ী, সৃষ্টি-স্থিতি-সংহারকারিণী শক্তিময়ী। দেবীশক্তি তিন ভিন্নভাবে প্রকাশিতা—মহাকালী, মহালক্ষ্মী এবং মহাসরস্বতী। এই তিন শক্তি সমন্বিতা হয়ে উক্ত গ্রন্থে ‘চণ্ডিকা’ নামে আখ্যায়িতা হয়েছেন। তিনি পরমাত্মময়ী। শক্তিপূজার অঙ্গ হিসাবে বিধিবৎ চণ্ডীপাঠের নিয়মানুযায়ী মূল পাঠের আগে ‘অর্গলাস্তোত্র’ পাঠ করা বিধেয়। ‘অর্গল’ শব্দটির অর্থ দরজার খিল, যার সাহায্যে বাইরে অবাঞ্ছিত সবকিছুকেই অন্দরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। সাধকের সিদ্ধিপ্রাপ্তির পথে প্রধান বাধা হয় পূর্বকৃত কর্ম ও প্রাত্যহিক কর্মসৃষ্ট অশুভ ফল, যা প্রতিরোধ করতে এবং তার অশুভদায়ক কারণগুলিকে প্রতিরোধ করতেই এই স্তোত্রপাঠ করা প্রয়োজন। অর্গলাস্তোত্র তাই দেবীর নিকট প্রার্থনা। স্তোত্রের দ্বিতীয় মন্ত্রটি দুর্গাপূজার প্রসিদ্ধ প্রণামমন্ত্র, এখানে দেবী একাদশটি নামে আখ্যায়িতা হয়েছেন। এই নামগুলি দেবীর বিবিধ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গুণশক্তির মাহাত্ম্য-জ্ঞাপক। বর্তমান প্রবন্ধে আলোচিত এই বৈশিষ্ট্যগুলির বিশ্লেষণ আমাদের মননে এক শুদ্ধালোক প্রজ্বলন করবে, যার দ্যুতিতে আমরা বোঝার চেষ্টা করব ‘প্রকৃতিং পরমাং’ শ্রীমা সারদাদেবীকে। মন্ত্রটি হলো—“জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।/ দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে।”১ এই নামগুলির উল্লেখ দ্বারা দেবী দুর্গাকে একদিকে যেমন সৃষ্টি-স্থিতি-লয়কারিণী মূলা প্রকৃতি, আদ্যাশক্তি বা মহামায়া-রূপে বর্ণনা করা হয়েছে, তেমনই দেবীর করুণাময়ী, ক্ষমাপূর্ণা, মঙ্গলবিধায়িনী মাতৃরূপটিকেও প্রকাশ করা হয়েছে। ‘চিত্তে কৃপা সমরনিষ্ঠুরতা’র কঠিন-কোমলে মিশ্র ভাবসমন্বিতা দেবী দুর্গাকে ভক্ত-মন পরম আবেগে সমাদরে হৃদয়ে ধারণ করতে চায়। উক্ত একাদশটি নাম দেবীর যে-গুণশক্তির পরিচায়ক, সেবিষয়ে প্রথমে দৃষ্টিপাত করা যাক। রাসমোহন চক্রবর্তী সম্পাদিত পুস্তকে বিভিন্ন পণ্ডিেতর মতানুসারে নামগুলির অর্থ উল্লিখিত হয়েেছ।২ ১) জয়ন্তী—সৃষ্টির মূল কারণ হওয়ায় এর অন্তর্গত সূক্ষ্ম থেকে স্থূল প্রত্যেক ক্রিয়া তাঁরই শক্তির প্রকাশ। তাই তিনি সর্বোৎকৃষ্টা। দেবীপুরাণ-মতে ইনিই সর্বত্র জয়ী হন, তাই তিনি ‘জয়ন্তী’। ২) মঙ্গলা—শাস্ত্রমতে ‘মঙ্গ’ হলো জন্ম-মৃত্যুর চক্র। এই বিকার যিনি নাশ করেন, তিনিই মঙ্গলা। ৩) কালী—কালের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ মহাকালকেও আত্মভূত করে সৃষ্টির পূর্বেও তিনি অব্যক্তরূপে বিদ্যমানা। ৪) ভদ্রকালী—এই দেবীর কৃপায় ভক্তের ভুক্তি-মুক্তি, ইহলৌকিক-পারলৌকিক মঙ্গল সাধিত হয়।...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in