অবিভক্ত বাংলায় ত্রিপুরা জেলার চাঁদপুর শহরের কাছে বাজাপ্তি গ্রামে জন্ম হয়েছিল এই ক্ষণজন্মা পুরুষটির। ১৮৮২ (মতান্তরে ১৮৮৪) সালে তাঁর জন্ম। গরিব ঘরে জন্ম, দারিদ্র ছিল চিরসঙ্গী, স্বাস্থ্যও ছিল খারাপ।
মানুষটি কেমন ছিলেন তা চারটি ক্ষুদ্র পঙ্ক্তিতে বেঁধে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের বড়দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর— “কালীমোহনের অশেষ গুণ!যে তারে জানে—সে-ই জানেদীনদুখে হৃদয়ে জ্বলে আগুনঅবিচার সহে না প্রাণে॥”১ অবিভক্ত বাংলায় ত্রিপুরা জেলার চাঁদপুর শহরের কাছে বাজাপ্তি গ্রামে জন্ম হয়েছিল এই ক্ষণজন্মা পুরুষটির। ১৮৮২ (মতান্তরে ১৮৮৪) সালে তাঁর জন্ম। গরিব ঘরে জন্ম, দারিদ্র ছিল চিরসঙ্গী, স্বাস্থ্যও ছিল খারাপ। কিন্তু অদম্য মনোবল ও মেধা ছিল কালীমোহনের। ছিল দেশকে জানার ও সেবাব্রতের অদম্য নেশা। ১৯০৩—০৫-এর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। তখন তিনি কলেজের ছাত্র, পড়াশোনা ছেড়ে অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্যরূপে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন ও বিদেশি পণ্যবর্জন আন্দোলনে মেতে উঠলেন কালীমোহন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন আর দেখলেন পল্লিবাসীদের দুরবস্থা। ঘুরতে ঘুরতে চলে এলেন বিক্রমপুরের সোনারং গ্রামে। পরিচিত হলেন সেখানকার আরেক মেধাবী যুবক ক্ষিতিমোহন সেনের সঙ্গে। স্বল্প পরিচয় থেকে নিবিড় বন্ধুতায় পৌঁছাতে বিশেষ সময় লাগেনি। দুজনেই দেশের কথা ভাবেন, সাহিত্যরসিক। বিশেষ করে রবীন্দ্রসাহিত্যে উৎসাহী। ১৯০৪ সালে কলকাতায় রবীন্দ্রনাথ স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দু-জায়গায় দুবার পাঠ করে শুনিয়েছিলেন তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘স্বদেশী সমাজ’। কালীমোহনের পক্ষে তখন কলকাতায় আসা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এই প্রবন্ধটি তিনি তন্ন-তন্ন করে পড়েছিলেন ‘প্রবাসী’ পত্রিকার পৃষ্ঠায়। রাজনীতি-সচেতন কালীমোহন যেন কাজের দিশা খুঁজে পেলেন। রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধের মূল আহ্বান ছিল—দেশের কাজ করা মানে দেশকে গঠন করা, আত্মশক্তির মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হওয়া। আমাদের রাজনীতি কেবলই বিরোধাত্মক, ‘অ্যাজিটেশন’মুখী; স্বদেশকে গঠন করতে হবে সদর্থক গঠনের কাজ করে। গ্রামগঠন, পল্লিসংস্কার, সমবায় আন্দোলন গড়ে তোলা—এইসব হলো মূল কাজ। সর্বপ্রথম কাজ হলো দেশকে চেনা—দেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব থেকে শুরু করে স্বদেশের দারিদ্র-পীড়িত অর্থনীতি ও গ্রামীণ জীবনযাপনের খুঁটিনাটিকে জানা। ঐ জানা না হলে কাজের দিশা পাওয়া যাবে না। এইসব কথাবার্তা কালীমোহনকে আকৃষ্ট করল। এর বছর দুয়েক বাদেই ১৯০৬ সালে বরিশালে প্রাদেশিক সম্মিলন উপলক্ষে যে-সাহিত্য সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কালীমোহন ঘোষ কবির সঙ্গে দেখা করেন, জানালেন তাঁর কাজ করার অভীপ্সার কথা। এর বছর...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in