উদ্বোধন পত্রিকার গত আষাঢ় ১৪৩১ সংখ্যাতে শ্রদ্ধেয় শান্তনু ভট্টাচার্য ‘শ্রীচৈতন্যের

উদ্বোধন পত্রিকার গত আষাঢ় ১৪৩১ সংখ্যাতে শ্রদ্ধেয় শান্তনু ভট্টাচার্য ‘শ্রীচৈতন্যের সমকালে নবদ্বীপে বিদ্যাচর্চা’ প্রবন্ধে তন্ত্রাচার্য কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে শ্রীচৈতন্যদেবের সমকালীন ও গঙ্গাদাস পণ্ডিতের টোলের সহপাঠী বলে উল্লেখ করেছেন। এটি হয়তো শ্রদ্ধেয় লেখকের অনিচ্ছাকৃত প্রমাদ বা তিনি যেমনটি জেনেছেন তাই লিখেছেন। সেই প্রসঙ্গে এই পত্রের অবতারণা। এটি নতুন কোনো ভুল নয়, প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এই ভ্রান্ত ধারণাটি ঐতিহাসিক মহলে রয়েছে। বৃহৎ তন্ত্রসার-এর রচয়িতা কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, যিনি রামপ্রসাদ সেনের গুরু, তিনি জন্মগ্রহণ করেন আনুমানিক ১৬০১ খ্রিস্টাব্দে। শ্রীচৈতন্য অন্তর্ধান করেছেন ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে। সুতরাং, আমাদের পরিচিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ মহাপ্রভুর সহপাঠী ছিলেন না। মহাপ্রভুর সহপাঠী কৃষ্ণানন্দ সম্পূর্ণ আলাদা ব্যক্তি এবং তিনিও পরবর্তী জীবনে সম্ভবত তন্ত্রসাধনা করতেন। তৎকালীন শাসক আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং নবাবকে মন্ত্রণা প্রদান করতেন। আবার কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের সমাধিস্থল বীরভূমের মল্লারপুরে, যেখানে তিনি ‘সন্ন্যাসী বাবা’ নামে পরিচিত; সেখানে তাঁর সমাধিফলকে ‘হিমালয় থেকে আগত’ শব্দটি রয়েছে। এই লেখাটিও আবার তৃতীয় আরেক আগমবাগীশের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিতর্কের জন্ম দেয়। তবে ‘সাধক শ্রী রামপ্রসাদ সেনের গুরু’ বাক্যটি থাকায় ঐতিহাসিকরা নিশ্চিন্ত হয়েছেন। এই দুই আগমবাগীশ নিয়ে তৈরি দ্বন্দ্বটি বহুল প্রচারিত হয়ে পড়ে শৈবাল মিত্রের ‘গোরা’ উপন্যাস থেকে। ওখানেও দুই কৃষ্ণানন্দকে একই ব্যক্তি দেখানো হয়েছে। পুরানো কৃষ্ণানন্দ ও মহাপ্রভুর মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল না বরং শ্রীচৈতন্যের হরিকীর্তনের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা তিনি করেছিলেন। আরেকটি ব্যাপার, দুজনেই নবদ্বীপের মানুষ ছিলেন। এই কৃষ্ণানন্দ আমাদের পরিচিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ নন এবং শ্রীশ্রীআগমেশ্বরী কালীমাতার প্রতিষ্ঠাতাও নন। অনেক ঐতিহাসিক তাঁকে চৈতন্যদেবের সমসাময়িক বলে মনে করেন। বৃন্দাবনদাস বিরচিত চৈতন্যভাগবত-এর একটি উদ্ধৃতি লেখক দিয়েছেন—‘যত পঢ়ে গঙ্গাদাস- পণ্ডিতের স্থানে।’ আসলে চৈতন্যভাগবত-এ উল্লিখিত কৃষ্ণানন্দের পরিচয় শীর্ষক উদ্ধৃতিটি গবেষকদের নজর এড়িয়ে যাওয়ায় এই বিভ্রান্তি ঘটেছে। সেখানে বলা রয়েছে—“‘রত্নগর্ভ-আচার্য্য’ বিখ্যাত তাঁর নাম।/ প্রভুর বাপের সঙ্গী, জন্ম এক গ্রাম।।/ তিন পুত্র তাঁর কৃষ্ণপদ-মকরন্দ।/ কৃষ্ণানন্দ, জীব, যদুনাথ-কবিচন্দ্র।।” অর্থাৎ, চৈতন্যভাগবত-এ উল্লিখিত কৃষ্ণানন্দ প্রথম থেকেই ছিলেন কৃষ্ণভক্ত, শাক্ত নন। তাঁরা তিন ভাই—কৃষ্ণানন্দ, জীব ও যদুনাথ।...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in