শ্রীচৈতন্যের সমকালে নবদ্বীপ ছিল সমগ্র বঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাচর্চাকেন্দ্র। বৃন্দাবনদাসের
বর্ণনায় :
শ্রীচৈতন্যের সমকালে নবদ্বীপ ছিল সমগ্র বঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাচর্চাকেন্দ্র। বৃন্দাবনদাসের বর্ণনায় : “নবদ্বীপ-হেন গ্রাম ত্রিভুবনে নাঞি। যহিঁ অবতীর্ণ হৈলা চৈতন্য গোসাঞি।।... ত্রিবিধ বয়সে একো জাতি লক্ষ লক্ষ। সরস্বতী-দৃষ্টিপাতে সভে মহাদক্ষ।। সভে ‘মহা-অধ্যাপক’ করি গর্ব্ব ধরে। বালকে-হো ভট্টাচার্য্য-সনে কক্ষা করে।। নানা দেশ হৈতে লোক নবদ্বীপে যায়। নবদ্বীপে পঢ়িলে সে বিদ্যারস পায়।। অতএব পঢ়ুয়ার নাহি সমুচ্চয়। লক্ষকোটি অধ্যাপক নাহিক নির্ণয়।।”১ এই বর্ণনার মধ্যে কিছু আবেগজনিত অতিশয়োক্তি থাকতে পারে কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, শ্রীচৈতন্য-সমকালে বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে নবদ্বীপের খুব নামডাক ছিল। বঙ্গ এবং বহির্বঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা বিদ্যাচর্চার উদ্দেশে নবদ্বীপে আসত। বহু বিশিষ্ট স্বনামধন্য অধ্যাপকের বাসস্থান ছিল নবদ্বীপে। সেকালে নবদ্বীপ হয়ে উঠেছিল সারস্বত সাধনার পীঠস্থান। শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের পূর্বেও এক সমৃদ্ধ বিদ্যাচর্চার ঐতিহ্য ও ইতিহাস আছে নবদ্বীপের। পাল রাজাদের সময় ‘সুবর্ণবিহার’ নামে একটি বৌদ্ধ মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নবদ্বীপে। এখানে বহু শ্রমণ ও ভিক্ষুক বসবাস করতেন ও বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শন চর্চা করতেন। নবদ্বীপ সেই সময় বৌদ্ধতীর্থে পরিণত হয়েছিল। “বৌদ্ধবিহার মানেই সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মানের একটি শিক্ষাকেন্দ্র থাকে। নবদ্বীপেও ছিল। বৌদ্ধবিহারগুলিতে সাধারণত ন্যায়, জ্যোতিষ, তন্ত্র, ব্যাকরণ, চিকিৎসা ও ধর্মশাস্ত্রের অধ্যয়ন-অধ্যাপনা হত।”২ বৌদ্ধপীঠের অবসানের পর এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র গড়ে ওঠে। সেন যুগে সেন রাজারা গঙ্গাতীরবর্তী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত নবদ্বীপে তীর্থবাস তৈরি করেন। বল্লালসেনের সময় নবদ্বীপ উপরাজধানীর মর্যাদা পায়। তাঁর পুত্র লক্ষ্মণসেন জীবনের শেষ কয়েক বছর নবদ্বীপে বসবাস করেন। লক্ষ্মণসেনের রাজত্বকালে সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র ছিল নবদ্বীপ। তাঁর রাজসভা আলোকিত করতেন বহু গুণিজন। যেমন—গোবর্ধন আচার্য, শরণ, জয়দেব, উমাপতি ধর, ধোয়ী, শ্রুতিধর, হলায়ুধ, পুরুষোত্তম দেব, শ্রীধরদাস প্রমুখ। শান্তিরঞ্জন দেবের মতে : “কবি জয়দেবের একটি চারণ দল ছিল। তিনি ওই চারণ দল নিয়ে নবদ্বীপ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ‘গীতগোবিন্দম্’ গান করতেন। সেই থেকে নবদ্বীপে একটি বৈষ্ণব গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল, যা চৈতন্যদেবের সময়ে মহীরূহে পরিণত হয়।”৩ লক্ষ্মণসেনের রাজত্বকালে নবদ্বীপে তুরকি আক্রমণ হয়। লক্ষ্মণসেন পূর্ববঙ্গে পালিয়ে যান। বখতিয়ার খলজি নবদ্বীপ জয় করার পর তা মুসলিম শাসকদের অধীনে...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in