শিবধাম কাশী বহুকাল হইতে সনাতন হিন্দু-সভ্যতার প্রাণকেন্দ্রস্বরূপ হইয়া অবস্থান করিতেছে। ভারতের সকল তীর্থের আধ্যাত্মিক যোগ

শিবধাম কাশী বহুকাল হইতে সনাতন হিন্দু-সভ্যতার প্রাণকেন্দ্রস্বরূপ হইয়া অবস্থান করিতেছে। ভারতের সকল তীর্থের আধ্যাত্মিক যোগ রহিয়াছে এই মহাতীর্থের সহিত। যুগে যুগে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের নরনারী এই পুণ্যক্ষেত্রে আসিয়া ধন্যবোধ করিয়াছেন। ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ—এই চতুর্বর্গ ফল লাভের আশায় কাশীবাস করিবার জন্য এই ক্ষেত্রে নিত্য বহু মানুষের আনাগোনা চলিতে থাকে। মাতা অন্নপূর্ণা তাহাদের কাহাকেও অভুক্ত রাখেন না। জগতে এমন সৰ্বজনসেব্য ও সৰ্বজনকাম্য প্রাচীন তীর্থ আর দ্বিতীয়টি নাই। ভগিনী নিবেদিতা একবার কাশী গিয়া সমস্ত স্থান মনোযোগ সহকারে দেখিয়াছিলেন। গঙ্গাবক্ষে নৌকাযোগে বিভিন্ন মন্দির ও ঘাট দেখিয়া, তাহাদের ইতিহাস শুনিয়া বিস্মিত হইয়াছিলেন। সৌন্দর্যের এমন নির্মাণ তাঁহাকে মুগ্ধ করিয়াছিল। বলিয়াছিলেন : “All roads in India must always have led to Benaras.” রবীন্দ্রনাথ কাশীতে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের ভাষণে বলিয়াছিলেন : “কাশী বস্তুতঃ ভারতবর্ষের কোনো বিশেষ প্রদেশভুক্ত নয়, কাশী ভারতবর্ষের সকল প্রদেশের।… অন্যান্য তীর্থের চেয়ে কাশীর বিশেষত্ব এই যে এখানে যে কেবল ভক্তিধারার সঙ্গমস্থান তা নয়, এখানে ভারতীয় সমস্ত বিদ্যার মিলন হয়েছে।” কাশী, বারাণসী, আনন্দকানন, অবিমুক্তক্ষেত্র, রুদ্রাবাস, মহাশ্মশান—বিবিধ নামে এই ক্ষেত্র পরিচিত। তবে এটি শুধুমাত্র কোনো এক ক্ষেত্র নহে, এক জমাট-বাঁধা ভাব। কাশী ভাবরাজ্যের রাজপ্রাসাদ—প্রাণে অনুভব করিবার বিষয়। শ্রীরামকৃষ্ণ নৌকায় বারাণসীতে প্রবেশ করিয়া ভাবদৃষ্টিতে দেখিয়াছিলেন, কাশী বাস্তবিকই সুবর্ণময়। মৃত্তিকা-প্রস্তরাদি নহে, যুগ-যুগান্তর ধরিয়া সাধু-ভক্তগণের হৃদয়ের ভাবরাশি ঘনীভূত হইয়া বর্তমানের এই কাশী-রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে। এই ‘জ্যোতির্ময় ভাবঘন মূর্তিই ইহার নিত্য সত্য রূপ’। আমরা বাহিরে যাহা দেখিতে পাই তাহা ইহার ছায়া মাত্র। শ্রীরামকৃষ্ণের কাশী-দর্শন প্রকৃতপক্ষে আমাদিগের জন্য এক নূতন কাশীদর্শন হইয়া উঠিয়াছে। কাশীর প্রধান স্থান—বিশ্বনাথ, অন্নপূর্ণা, দুর্গাবাড়ি, কেদারনাথ, মণিকর্ণিকা, পঞ্চতীর্থ ইত্যাদি ঠাকুর দর্শন করিয়াছেন। তঁাহার সাক্ষাৎ হইয়াছে ত্রৈলঙ্গ স্বামীর সহিত। মহেশচন্দ্র সরকারের বাড়িতে গিয়া বীণাবাদন শুনিয়াছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ তঁাহার তন্ত্রসাধনার গুরু ভৈরবী ব্রাহ্মণী যোগেশ্বরী দেবীর আবাসে কয়েকবার শুভাগমন করিয়াছিলেন। কাশীতে অবস্থানকালে তিনি প্রায়ই পানসিতে চাপিয়া বিশ্বনাথ-দর্শনে যাইতেন। বিশ্বেশ্বর-লিঙ্গমধ্যে বিশ্বনাথ-ভবানীর চিন্ময় রূপ দর্শন করিয়া ঠাকুর ভাবে বাহ্যহারা হইয়াছিলেন। উপস্থিত সকলের তাহাতে ধারণা হইয়াছিল যে,...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in