“যেখানে শিব, সেখানেই শক্তি—শিব শক্তি একত্তরে, বার বার সেই শিব, সেই শক্তি। নিস্তার নেই।”১ কথাগুলি শ্রীমা সারদাদেবীর। এক পরম

“যেখানে শিব, সেখানেই শক্তি—শিব শক্তি একত্তরে, বার বার সেই শিব, সেই শক্তি। নিস্তার নেই।”১ কথাগুলি শ্রীমা সারদাদেবীর। এক পরম ‌ক্ষণে শিষ্যসন্তানের সামনে এ তাঁর এক অপার্থিব আত্মপ্রকাশ। যুগ যুগ ধরে ভারতবর্ষের ঋষি-মহর্ষিগণ যা উপলব্ধি করেছেন, প্রচার করেছেন—শাস্ত্রনিবদ্ধ সেই কথাগুলি যে যথার্থ তা এযুগের সংশয়ী মানবকে অনুধাবন করাতেই জগজ্জননীর এই আত্ম-উন্মোচন। ভারতবর্ষের সমস্ত শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব তীর্থে যত মন্দির রয়েছে—সর্বত্র এই তত্ত্ব বহুবিধরূপে প্রকাশমান। জগদীশ্বর শিবের প্রিয় ভূমি, তাঁর ‘আনন্দকানন’ বারাণসীতে তিনি রাজাধিরাজ হলে মহারানি অবশ্যই ভবগেহিনী ভবানী—অন্নপূর্ণা। বিশ্বনাথ ও অন্নপূর্ণা সমমর্যাদায়, সমান কর্তৃত্বে ও শ্রদ্ধায় এখানে অধিষ্ঠিত। উপরন্তু অন্নপূর্ণার দরবারে ভি‌ক্ষাপাত্র-হাতে দাঁড়িয়ে বারাণসীপুরপতি মহাদেব। নিখিল মানবের প্রতিনিধি হয়ে তিনি তাঁর অভিন্ন সত্তা অন্নপূর্ণার কাছে শুধু অন্ন প্রার্থনা করছেন না, প্রার্থনা করছেন চৈতন্যও। ‘ই’-কার শক্তিবোধক, সেটি না থাকলে শিব হয়ে যান শব—নিষ্ক্রিয়। তাই কাশীতে বিশ্বেশ্বরী অন্নপূর্ণার সমধিক মাহাত্ম্য। তৈত্তিরীয়োপনিদ্‌-এ বলা হয়েছে—অন্নই ব্রহ্ম এবং সমগ্র জগৎ অন্নে প্রতিষ্ঠিত। তাই অন্নপূর্ণা ব্রহ্মস্বরূপিণী। কাশীখণ্ডম্-এ শ্রীবিষ্ণু বলছেন, যে-ব্যক্তি কাশীতে শ্রদ্ধা সহকারে ভবানী ও শঙ্করের পূজা করে, তার দ্বারা এই বিশ্বভুবন পূজিত হয়ে থাকে। দেবী অন্নপূর্ণার অনুগ্রহে কোনো কিছুই দুষ্প্রাপ্য নয়। “মাতর্ভবানি তব পাদরজোভবানি মাতর্ভবানি তব দাসতরো ভবানি।/ মাতর্ভবানি ন ভবানি যথা ভবেঽস্মিংস্ত্বদ্ভাগ্ ভবান্যনুদিনং ন পুনর্ভবানি।”২ শঙ্করাচার্য তাঁকে ‘কাশীপুরাধীশ্বরী’ বলে করুণাভি‌ক্ষা করেছেন। প্রাচীন পুরাণে তিনি অবশ্য ভব বা শিবের শক্তি হিসাবে ‘ভবানী’ নামে আখ্যাত। তাঁর নামে আচার্য সৃষ্টি করেছেন ‘ভবান্যষ্টকম্’ স্তোত্র। পুরাণ-মতে দেবাদিদেব জগতের অধিপতি হলেও তিনি শ্মশানচারী বৈরাগী, ঐশ্বর্যবিহীন, ভি‌ক্ষা করে খান। একবার তাঁর ভি‌ক্ষা অমিল হলো—সারা জগতে একমুঠো অন্নও তিনি পেলেন না। শেষে তাঁর গৃহিণী তথা ‘শক্তি’ অন্নপূর্ণার কাছে এসে পেলেন পরমান্ন। আনন্দে তিনি নৃত্য করতে লাগলেন এবং জগৎকল্যাণে আদ্যাশক্তির এই করুণাময়ী মাতৃমূর্তিকে প্রতিষ্ঠা করলেন বারাণসীতে। তাই অন্নপূর্ণার পাশে ভি‌ক্ষাপাত্র-হাতে শিব দাঁড়িয়ে থাকেন নৃত্যের ভঙ্গিমায়। ‘শক্তি’র এই মাহাত্ম্য শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনীপাঠকগণের অজানা নয়, শ্রীমাকে কোন সমুচ্চ শ্রদ্ধায় অধিষ্ঠিত রেখেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ ও তাঁর পার্ষদগণ তা কারো...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in