স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ কয়েকজন ভক্ত দৈনন্দিন জীবনের কলকোলাহল থেকে দূরে নিভৃতে নিয়মিত কিছু সময় জপধ্যান, প্রার্থনা ও শাস্ত্রালোচনার উদ্দেশ্যে একটি উপযুক্ত স্থানের সন্ধান করতে করতে আলসুর শহর থেকে কয়েক ফার্লং দূরে এক আদর্শ পরিবেশে একটি বাড়ির সন্ধান লাভ করেন এবং ১৯০৬ সালের ১৩ এপ্রিল লিজ চুক্তিতে তাঁরা সেটি অধিগ্রহণ করেন। এইভাবেই হয়েছিল আলসুর (হালাসুরু) বিবেকানন্দ আশ্রমের সূচনা। ঐ বছরই ৫ মে স্বামী বিবেকানন্দের অন্যতম শিষ্য স্বামী বিমলানন্দ আশ্রমে ঠাকুর, মা এবং স্বামীজীর প্রতিকৃতি স্থাপন করেন। প্রতি সন্ধ্যায় সমবেত ভক্তগণ সংকীর্তন, প্রার্থনা, শাস্ত্রপাঠ ইত্যাদি করতেন। প্রথমে প্রতি বছর লিজ নবীকরণ করা হতো। বেশ কিছু সংস্কার করার পর স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্য স্বামী আত্মানন্দ সেই বাড়ির উদ্বোধন করেন ১৯০৭ সালের ১৭ নভেম্বর। কয়েকদিন পর ২৫ ডিসেম্বর স্বামী বিবেকানন্দের তিনজন শিষ্য যথাক্রমে—স্বামী আত্মানন্দ, স্বামী সোমানন্দ এবং জি. জি. নরসিংহচারিয়ারের উপস্থিতিতে আশ্রমে অনুষ্ঠিত এক সভায় গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯০৮ সালের ২৯ জুলাই আশ্রমের জন্য ২৫ বছরের একটি লিজ চুক্তি সম্পাদিত হয়, যে-চুক্তি কার্যকরী হয় ১৯০৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে। এই চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই ১৯২৬ সালের ২৫ মার্চ এই জমি রামকৃষ্ণ সংঘের তৎকালীন অধ্যক্ষ স্বামী শিবানন্দজীর নামে ক্রয় করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তখন থেকেই এই আশ্রম বেলুড় মঠের অঙ্গীভূত হয়ে বেঙ্গালুরু আশ্রমের একটি উপকেন্দ্ররূপে কাজ করতে থাকে।

বেঙ্গালুরু শহরের উত্তরোত্তর বিস্তারকালে সুষ্ঠুভাবে কর্ম পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই আশ্রম বেলুড় মঠের একটি স্বতন্ত্র শাখারূপে স্বীকৃতিলাভ করে এবং ২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ‘বিবেকানন্দ আশ্রম’-এর পরিবর্তে তার নামকরণ করা হলো ‘রামকৃষ্ণ মঠ (আলসুর), হালাসুরু’।

প্রার্থনাক‌ক্ষে প্রতিদিন ভক্তসমাগম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানাভাব হেতু ১৯৮৬ সালের ৪ জুলাই অন্য একটি বাড়ির দোতলায় ঠাকুরঘর ও প্রার্থনাক‌ক্ষ স্থানান্তরিত করা হয় এবং পুরানো বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়। পরের বছর ১২ এপ্রিল এই কেন্দ্রের শ্রীরামকৃষ্ণ-মন্দিরের ভিত্তিস্থাপন এবং ১৯৯০ সালের ৮ জুন সেই নবনির্মিত মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করা হয়।

বর্তমানে এখানে আছে একটি গ্রন্থাগার, একটি দাতব্য চিকিৎসালয়, আশ্রমের ভিতরে একটি এবং বাইরে গ্রামে একটি কোচিং সেন্টার। এখানে নিয়মিত চ‌ক্ষুশিবির অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নিত্যপূজা, ভজন, সাপ্তাহিক শাস্ত্রালোচনা ছাড়াও উদ্‌যাপিত হয় ঠাকুর, মা, স্বামীজী এবং অন্য মনীষীদের জন্মোৎসব; তার সাথে চলছে নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প।

স্বামীজীর ভাবাদর্শে সমৃদ্ধ এবং স্বামী ব্রহ্মানন্দজী, স্বামী শিবানন্দজী, স্বামী অভেদানন্দজী এবং স্বামী রামকৃষ্ণানন্দজীর পদধূলিধন্য এই আশ্রম সেই সূচনালগ্ন থেকে ‘বহুজনহিতায়’ নিরবচ্ছিন্নভাবে স্বামীজী-প্রবর্তিত সেবাভাবকে বাস্তবায়িত করার ব্রত পালন করে চলেছে।