উৎসব-অনুষ্ঠান

রামকৃষ্ণ মঠ, বেলুড় : গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার বিশেষ পূজা, ভক্তিগীতি প্রভৃতির মাধ্যমে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের আবির্ভাবতিথি পালিত হয়। এই উপল‌ক্ষে আয়োজিত বৈকালিক জনসভায় সভাপতিত্ব করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দজী মহারাজ। এদিন প্রায় ১৮,০০০ ভক্ত খিচুড়ি প্রসাদ গ্রহণ করেন। এই উৎসবের অঙ্গ হিসাবে গত ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে যাত্রাভিনয় ও লোকনাট্য পরিবেশিত হয়।
২৬ ফেব্রুয়ারি, রবিবার মহা সমারোহে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের আবির্ভাব মহোৎসব উদ্‌যাপিত হয়। সারাদিনে প্রায় এক ল‌ক্ষের মতো দর্শনার্থী এই উৎসবে যোগদান করেন এবং প্রায় ৩৬,০০০ ভক্ত খিচুড়ি প্রসাদ গ্রহণ করেন।

রামকৃষ্ণ মিশন, নরোত্তমনগর : গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ শ্রীমৎ স্বামী ব্রহ্মানন্দজী মহারাজের শুভ আবির্ভাবতিথিতে বর্ষব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের অংশ হিসাবে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দজী মহারাজ, অরুণাচল প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী মাননীয় চোওনা মেইন, জনস্বাস্থ্য, কারিগরি ও জলসরবরাহ মন্ত্রী মাননীয় ওয়াংকি লোয়াং, কয়েকজন বিধায়ক, রাজ্যের মুখ্যসচিব-সহ কয়েকজন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী এবং ২০০০ ভক্ত ও অনুরাগী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এই উপল‌ক্ষে আশ্রম-প্রাঙ্গণে ১২ ফুট উচ্চ ভগবান বুদ্ধের একটি মূর্তির আবরণ উন্মোচন করা হয়।

সেবাব্রত

গত ১০—১৬ জানুয়ারি ২০২৩ গঙ্গাসাগর মেলা উপল‌ক্ষে সেবাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্র মেলা-প্রাঙ্গণে দিবারাত্র চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করে। ২৩৩ জনের অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা-সহ মোট ৮২৬৮ জন রোগীর চিকিৎসা করা হয়।

মনসাদ্বীপ কেন্দ্র ৫৪৮ জন তীর্থযাত্রীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে; এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।

দেহত্যাগ

স্বামী অনঘানন্দ (নিখিল মহারাজ) গত ৪ ডিসেম্বর ২০২২ সন্ধ্যা ৭টা ৪ মিনিটে বৃন্দাবন কেন্দ্রে দেহত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও পার্কিনসন রোগে ভুগছিলেন। দুই বছরের অধিককাল বেলুড় মঠে অবস্থান করে কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি বৃন্দাবনে ফেরেন। তারপর অকস্মাৎ যন্ত্রণাহীনভাবে তাঁর দেহত্যাগ হয়।

মহারাজ ছিলেন শ্রীমৎ স্বামী বীরেশ্বরানন্দজী মহারাজের মন্ত্রশিষ্য। ১৯৭৫ সালে সারগাছি কেন্দ্রে তিনি যোগদান করেন এবং ১৯৮৫ সালে নিজগুরুর কাছ থেকে সন্ন্যাসলাভ করেন। তিনি বেলুড় মঠ ছাড়াও সারগাছি, মনসাদ্বীপ, রহড়া, কানপুর, মুম্বাই, কালাডি এবং সরিষা কেন্দ্রে সেবাকাজ করেছেন। এছাড়া ১৯৯১ সালে ভুবনেশ্বর ও উত্তরকাশী এবং ১৯৯৪ সালে জলপাইগুড়ি-সহ অন্য কয়েকটি জায়গায় তিনি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন স্নেহশীল ও মিশুকে স্বভাবের।

স্বামী পূর্ণকামানন্দ (সুরেশ মহারাজ)  গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ শ্রীমা সারদাদেবীর শুভ আবির্ভাবতিথিতে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ম্যাঙ্গালুরুর এস.সি.এস. হাসপাতালে দেহত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগে ভুগছিলেন।

মহারাজ ছিলেন শ্রীমৎ স্বামী বীরেশ্বরানন্দজী মহারাজের মন্ত্রশিষ্য। ১৯৬৮ সালে মুম্বাই কেন্দ্রে তিনি যোগদান করেন এবং ১৯৭৮ সালে নিজগুরুর কাছ থেকে সন্ন্যাসলাভ করেন। তিনি মুম্বাই, মরিশাস, নরোত্তমনগর ও ম্যাঙ্গালুরু কেন্দ্রে সেবাকাজ করেন ও পরে ম্যাঙ্গালুরু কেন্দ্রের অধ্যক্ষ হন। ২০১০ সালে অধ্য‌‌ক্ষ পদ থেকে অবসরগ্রহণের পর তিনি ওখানেই অবসরজীবন যাপন করছিলেন। মৃদুভাষী ও নম্র স্বভাবের জন্য তিনি সকলের প্রিয় ছিলেন।
স্বামী বরদানন্দ (চার্লস/গণেশ মহারাজ) গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ১৬ মিনিটে (ভারতীয় সময় ৩১ ডিসেম্বর ভোর ৩টা ৪৬ মিনিটে) আমেরিকার লেক উড নার্সিং অ্যান্ড রিহ্যাব সেন্টারে দেহত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।

মহারাজ ছিলেন শ্রীমৎ স্বামী বীরেশ্বরানন্দজী মহারাজের মন্ত্রশিষ্য। ১৯৭৩ সালে শিকাগো কেন্দ্রে যোগদান করার পর ১৯৮২ সালে নিজগুরুর কাছ থেকে তিনি সন্ন্যাস লাভ করেন। সমগ্র সন্ন্যাসজীবনটি তিনি শিকাগো কেন্দ্রে নিষ্ঠার সঙ্গে বিভিন্ন সেবাকাজে ব্যয়িত করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি আমেরিকায় ধর্মমহাসম্মেলনের আয়োজনকার্যে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন। শেষদিন পর্যন্ত তিনি শিকাগো মহানগরের ধর্মীয় নেতৃ পরিষদের সদস্য ছিলেন। আত্মপ্রচারবিমুখ মহারাজজী তাঁর মধুর ও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহােরর জন্য সকলের প্রশংসা অর্জন করেছিলেন।

স্বামী আত্মজয়ানন্দ (হ্যারল্ড/শান্তি মহারাজ) গত ৩ জানুয়ারি ২০২৩ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে (ভারতীয় সময় ৪ জানুয়ারি সকাল ৮টায়) আমেরিকার সিয়াটল কেন্দ্রে দেহত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। গত কয়েক বছর যাবৎ তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

মহারাজ ছিলেন শ্রীমৎ স্বামী অশেষানন্দজী মহারাজের মন্ত্রশিষ্য। ১৯৬৮ সালে আমেরিকার পোর্টল্যান্ড কেন্দ্রে তিনি যোগদান করেন। ২০০০ সালে শ্রীমৎ স্বামী রঙ্গনাথানন্দজী মহারাজের কাছে তাঁর সন্ন্যাসদী‌ক্ষা হয়। তিনি পোর্টল্যান্ড ও সিয়াটল কেন্দ্রে সেবাকাজ করেন, এছাড়াও তদানীন্তন সিয়াটল কেন্দ্রের অধ্যক্ষ স্বামী বিবিদিষানন্দজীকে কিছুদিন সেবা করার সৌভাগ্যলাভ করেছিলেন। তিনি জীবনের শেষ কয়েক বছর সিয়াটল কেন্দ্রের তপোবন উপকেন্দ্রে অবসরজীবন যাপন করছিলেন। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানোয় ও ফটোগ্রাফিতে তিনি পারদর্শী ছিলেন। মহারাজ একজন প্রতিভাবান স্থপতিরূপে পোর্টল্যান্ড কেন্দ্রের স্ক্যাপুজ উপকেন্দ্রে আটটি প্রার্থনাগৃহের নকশা তৈরি ও নির্মাণকার্য সম্পন্ন করেন। বন্ধুভাবাপন্ন মহারাজ সকলকে আন্তরিকতার সঙ্গে অভ্যর্থনা করতেন।