উৎসব-অনুষ্ঠান
রামকৃষ্ণ মঠ, বেলুড় : গত ২—৫ অক্টোবর ২০২২ ভাবগম্ভীর ও আনন্দময় পরিবেশে প্রতিমায় শ্রীশ্রীদুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও হাজার হাজার ভক্ত জগন্মাতার দর্শন ও আশীর্বাদলাভের উদ্দেশ্যে এই চারদিনের পূজানুষ্ঠানে যোগদান করেন। মহাষ্টমীতে প্রায় ৫৫ হাজার এবং চারদিনে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার ভক্ত প্রসাদ পান।
রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের নিম্নলিখিত কেন্দ্রে (ভারতে) প্রতিমায় শ্রীশ্রীদুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে : আঁটপুর, আসানসোল, বারাসত, বিলাসপুর, কাঁথি, কোচবিহার, ধলেশ্বর, ডিগবয়, ঘাটশিলা, গুয়াহাটি, গোয়ালিয়র, জলপাইগুড়ি, জামসেদপুর, জয়রামবাটী, কৈলাশহর, কামারপুকুর, করিমগঞ্জ, কাসুন্দিয়া, লখনৌ, মালদা, মেদিনীপুর, মুম্বাই, পাটনা, পোর্ট ব্লেয়ার, রহড়া, শেলা (সোহরার অধীন), শ্যামসায়র, শিলচর ও বারাণসী অদ্বৈত আশ্রম।
রামকৃষ্ণ মিশন, নিউ দিল্লি : প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (১ম থেকে ৫ম শ্রেণি) ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘Awakening’ নামে একটি পাঁচবছরের পর্যায়ক্রমিক মূল্যবোধ শিক্ষা পাঠক্রম প্রস্তুত করা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ এই পাঠক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোগ মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাননীয় ধর্মেন্দ্র প্রধান। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে আশ্রমের ৬ষ্ঠ—৯ম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যসূচিতে ‘Awakened Citizen Programme’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ, দেওঘর : গত ২২—২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ বিদ্যাপীঠের শতবার্ষিকী উৎসবের সূচনাপর্ব উদ্যাপিত হয়। উৎসবের উদ্বোধন করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দজী মহারাজ। এই তিনদিনের অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে ছিল জনসভা, ‘Empowering the Youth—the Vivekananda Way’ বিষয়ক আলোচনাসভা, শিক্ষামূলক প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফুটবল ও কুইজ প্রতিযোগিতা এবং ড্রিল প্রদর্শনী। এই সমস্ত অনুষ্ঠানে বহু বিশিষ্ট মানুষ, সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী, ছাত্র, অভিভাবক ও প্রাক্তন ছাত্র উপস্থিত ছিলেন।
নতুন কেন্দ্র স্থাপন
শ্রীরামকৃষ্ণ ট্রাস্ট, চেনগাম অধিগ্রহণ করে রামকৃষ্ণ মঠের একটি শাখাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এই কেন্দ্রের ঠিকানা : Ramakrishna Math, No. 1, Ramakrishna School Road, Chengam, Dist. Tiruvannamalai, Tamil Nadu 606701. Phone no. (04188) 222464, email : chengam@rkmm.org। এই আশ্রমটি ১৯৭৮ সালে স্থাপিত হয়েছিল।
গত ২ নভেম্বর ২০২২ শ্রীশ্রীজগদ্ধাত্রীপূজার পুণ্যদিনে হরিয়ানায় রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অব ভ্যালুস, গুরুগ্রাম-এর শুভ সূচনা করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সহাধ্যক্ষ পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী গৌতমানন্দজী মহারাজ। এই উপলক্ষে ১—৩ নভেম্বর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথম দিন ভজন, জনসভা, ‘রামচরিতমানস’ বিষয়ে আলোচনা প্রভৃতি অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী গৌতমানন্দজী মহারাজ এবং প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বামী সুবীরানন্দজী মহারাজ। দ্বিতীয় দিন প্রভাতফেরি, ভজন, বিশেষ পূজা, জনসভা, ‘রামচরিতমানস’ বিষয়ে আলোচনা, ধ্রুপদ সংগীত প্রভৃতি অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনের সভায় সভাপতির ভাষণ প্রদান করেন পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী গৌতমানন্দজী মহারাজ। ভাষণ দেন স্বামী সুবীরানন্দজী মহারাজ ও অন্য সন্ন্যাসিবৃন্দ। এদিন সভাগৃহের দ্বারোদ্ঘাটন করেন ও জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় মনোহরলাল খট্টর। তৃতীয় দিন আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বামী বলভদ্রানন্দ। এদিন ৪৭ জন দীক্ষার্থীকে মন্ত্রদীক্ষা এবং জনসভায় আশীর্বাণী প্রদান করেন পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী গৌতমানন্দজী মহারাজ। এই তিনদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১৫০ সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারী এবং ১৫০০ ভক্ত।
আজাদি কা অমৃত মহোৎসব পালন
গত অগস্ট ও সেপ্টেম্বর ২০২২-এর বিভিন্ন দিনে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নিম্নলিখিত শাখাকেন্দ্রগুলি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আজাদি কা অমৃত মহোৎসব পালন করেছে : আলমোড়া, ভোপাল, চণ্ডীগড়, চণ্ডীপুর, কোয়েম্বাতুর মিশন, গুড়াপ, ঝাড়গ্রাম, রাজকোট, রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ডিম্ড বিশ্ববিদ্যালয়), শ্রীনগর, স্বামীজীর পৈতৃক আবাস, ত্রিচুর, বারাণসী হোম অব সার্ভিস, বিবেকনগর, গোয়ালিয়র ও ইন্দোর।
সার্বজনীন বিশ্বভ্রাতৃত্ব দিবস (১১ সেপ্টেম্বর) উদ্যাপন
নিম্নলিখিত কেন্দ্রগুলি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সার্বজনীন বিশ্বভ্রাতৃত্ব দিবস পালন করেছে : চণ্ডীগড়, চেন্নাই মঠ, হায়দরাবাদ, জম্মু, কোচি, লখনৌ, মুজফ্ফরপুর, নবদ্বীপ, নাওরা, নরোত্তমনগর, পুরুলিয়া, রাজকোট ও থাঞ্জাভুর।
সেবাব্রত
শীতকালীন ত্রাণ
বেলাগভি কেন্দ্র গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ অক্টোবর ৫০০ কম্বল, ডিব্রুগড় কেন্দ্র ১৩—২৮ সেপ্টেম্বর ৭০০ কম্বল, ইম্ফল কেন্দ্র ১৭ অক্টোবর ২৫টি শাল, ইন্দোর কেন্দ্র ১৫ অক্টোবর ৪২০টি করে সোয়েটার ও টুপি এবং করিমগঞ্জ কেন্দ্র ২৫ সেপ্টেম্বর ১০০টি কম্বল দুঃস্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছে।
চক্ষু ও অন্যান্য চিকিৎসাশিবির: বাঁকুড়া কেন্দ্র গত সেপ্টেম্বর মাসে ৪৭৬ জনের চক্ষুপরীক্ষা, ৯৬ জনের অস্ত্রোপচার ও ৫৮ জনকে চশমা প্রদান; বরানগর মিশন ১৮ ও ২৫ সেপ্টেম্বর ১৪৩ জনের চক্ষুপরীক্ষা ও ৬৪ জনকে চশমা প্রদান; কোয়েম্বাতুর মিশন ২১ অগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর নয়টি চিকিৎসাশিবিরে (চক্ষু, ক্যানসার, দন্ত ইত্যাদি) ৫১১ জন রোগীর চিকিৎসা; দিল্লি কেন্দ্র অগস্ট মাসে ১৫ জনের অস্ত্রোপচার ও তিনজনকে চশমা প্রদান; গুড়াপ কেন্দ্র ২২ অগস্ট ৪৩ জনের চক্ষুপরীক্ষা এবং ২৭ অগস্ট ৫ জনের অস্ত্রোপচার; জলপাইগুড়ি কেন্দ্র ১৮ সেপ্টেম্বর ১৬৮ জনের চক্ষুচিকিৎসা ও চশমা প্রদান; কামারপুকুর কেন্দ্র ৩০ জুলাই থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ১২৬১ জনের চক্ষুপরীক্ষা, ২৩৯ জনের অস্ত্রোপচার ও ১৬২ জনকে চশমা প্রদান; কানপুর কেন্দ্র ১১ সেপ্টেম্বর ২২৫ জন রোগীর চিকিৎসা; লখনৌ কেন্দ্র অগস্ট মাসে ৯২৫২ জনের চক্ষুপরীক্ষা ও ২১৮ জনের অস্ত্রোপচার ও চশমা প্রদান; মাদুরাই কেন্দ্র ১৮ সেপ্টেম্বর ২১৮ জনের চক্ষুপরীক্ষা, ৫৮ জনের অস্ত্রোপচার ও ১৮ জনকে চশমা প্রদান; মনসাদ্বীপ কেন্দ্র ১৮ ও ২৪ সেপ্টেম্বর ২১১ জনের চক্ষুপরীক্ষা ও ২৩ সেপ্টেম্বর ৩৮ জনের অস্ত্রোপচার; নাগপুর কেন্দ্র ১১ সেপ্টেম্বর ১৯১ জনের চক্ষুপরীক্ষা, ৭৪ জনের অস্ত্রোপচার ও ১৪০ জনকে চশমা প্রদান; নাওরা কেন্দ্র ৮ সেপ্টেম্বর ২৩৩ জনের চক্ষুচিকিৎসা ও ১১ সেপ্টেম্বর ৬০ জনকে চশমা প্রদান; পোরবন্দর কেন্দ্র ৯ সেপ্টেম্বর ৫৪ জনকে চক্ষুচিকিৎসা ও ২১ জনের অস্ত্রোপচার; সালেম কেন্দ্র ২৮ অগস্ট ও ৪ সেপ্টেম্বর ৩৭৮ জনের চক্ষুপরীক্ষা, ১০৮ জনের অস্ত্রোপচার ও ৭২ জনকে চশমা প্রদান, ১৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যশিবিরে ৩২৪ জনের চিকিৎসা; সোমসার কেন্দ্র ২৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যশিবিরে ২০৫ জনের চিকিৎসা এবং ভদোদরা কেন্দ্র ১ অগস্ট থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ১২৪৭ জনের চক্ষুপরীক্ষা ও ১৮০ জনের অস্ত্রোপচার করেছে।
বহির্ভারত
ডারবান (দক্ষিণ আফ্রিকা), লুসাকা (জাম্বিয়া), মরিশাস এবং বাংলাদেশের বাগেরহাট, বালিয়াটি, বরিশাল, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, দিনাজপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, যশোর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, সিলেট কেন্দ্র এবং যশোর কেন্দ্রের উপকেন্দ্র নড়াইলে প্রতিমায় শ্রীশ্রীদুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই উপলক্ষে বাংলাদেশের ফরিদপুর কেন্দ্র ১০০ দুঃস্থ মানুষের মধ্যে শাড়ি ও ধুতি এবং রংপুর কেন্দ্র ১৫০ জন দুঃস্থ মহিলার মধ্যে শাড়ি বিতরণ করেছে।
দেহত্যাগ
স্বামী নিশ্চলানন্দ (রণেন্দ্র মহারাজ) গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ বেলা ১০টা ৫০ মিনিটে কলকাতার এস.এস.কে.এম. হাসপাতালে দেহত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি অ্যালজাইমার ও বার্ধক্যজনিত নানা উপসর্গে ভুগছিলেন।
মহারাজ ছিলেন শ্রীমৎ স্বামী বীরেশ্বরানন্দজী মহারাজের মন্ত্রশিষ্য। ১৯৭৩ সালে নরেন্দ্রপুর কেন্দ্রে তিনি যোগদান করেন এবং ১৯৮৪ সালে নিজ গুরুর কাছ থেকে সন্ন্যাসলাভ করেন। তিনি বেলুড় মঠ ছাড়াও নরেন্দ্রপুর, অদ্বৈত আশ্রম (কলকাতা ও মায়াবতী), শিলং এবং বাগবাজার কেন্দ্রে সেবাকাজ করেন। ব্রহ্মচারী প্রশিক্ষণকেন্দ্রের আচার্য এবং কমপ্লিট ওয়ার্কস অব স্বামী বিবেকানন্দ-এর পরিমার্জনকার্যে তিনি যুক্ত ছিলেন। দয়ালু হৃদয়, সুপাঠক মহারাজ ধ্রুপদ সংগীত ও বিভিন্ন ভাষা শিক্ষায় বিশেষ অনুরাগী ছিলেন।
স্বামী প্রেমপূর্ণানন্দ (ভজন মহারাজ) গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় পুরী মঠে অপ্রত্যাশিতভাবে দেহত্যাগ করেন। একদিন আগেই তিনি এখানে এসেছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।
মহারাজ ছিলেন শ্রীমৎ স্বামী বীরেশ্বরানন্দজী মহারাজের মন্ত্রশিষ্য। ১৯৮২ সালে বেলুড় মঠে তিনি যোগদান করেন এবং ১৯৯১ সালে শ্রীমৎ স্বামী ভূতেশানন্দজী মহারাজের কাছ থেকে সন্ন্যাসলাভ করেন। তিনি বেলুড় মঠ (স্বামীজীর মন্দির ও মূল কেন্দ্রের গৃহনির্মাণ বিভাগ) এবং মুম্বাই, বৃন্দাবন, গুয়াহাটি, সারদাপীঠ, হায়দরাবাদ, জয়রামবাটী, প্রয়াগরাজ, লখনৌ, কোয়েম্বাতুর মিশন, জামতাড়া, বরানগর মিশন, সারগাছি, বড়িশা, সেবাপ্রতিষ্ঠান, চণ্ডীপুর, রাঁচি, মোরাবাদি ও কামারপুকুর কেন্দ্রে সেবাকাজ করেন। তিনি ছিলেন মিশুকে ও প্রাণবন্ত স্বভাবের।