আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে প্রধান বাধাগুলোর অন্যতম হলো আমাদের দেহ-মনের চেতনাকে রামকৃষ্ণ-চেতনাতে রূপান্তরিত করার বাধা। যাঁদের পরিবার নেই, কোনো সাংসারিক কর্তব্যকর্মও করতে হয় না—সেই সন্ন্যাসীদেরও দেহচেতনা আত্মচেতনার পথে প্রবল বাধা হতে পারে।

।।৪।। দেহ-চেতনাকে রামকৃষ্ণ-চেতনায় রূপান্তর আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে প্রধান বাধাগুলোর অন্যতম হলো আমাদের দেহ-মনের চেতনাকে রামকৃষ্ণ-চেতনাতে রূপান্তরিত করার বাধা। যাঁদের পরিবার নেই, কোনো সাংসারিক কর্তব্যকর্মও করতে হয় না—সেই সন্ন্যাসীদেরও দেহচেতনা আত্মচেতনার পথে প্রবল বাধা হতে পারে। স্বামীজীর ‘কর্মযোগ’-এর একটি মন্তব্য এপ্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে—“যে-মানুষ গৃহে থাকে না, ভাল পোশাক পরে না, ভাল খাবার খায় না, সাধনার জন্য মরুভূমির মতো নির্জন অঞ্চলে চলে যায়—তার একমাত্র সম্পদ হলো তার নিজের শরীর এবং সেই শরীরেও তার প্রবল আসক্তি থাকতে পারে, শরীর রক্ষা ও প্রতিপালনের জন্য সে সবসময় নিযুক্ত থাকতে পারে।”৬৮ অর্থাৎ নিজের শরীরের প্রতি তীব্র আসক্তিই তার আত্মচেতনার প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। নিজের দেহ-মনের প্রতি এই যে তীব্র আত্মবোধ বা আসক্তি, একে কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়—এই প্রশ্ন সকল সাধকেরই। এই প্রশ্নের একটি ফলপ্রসূ সমাধান হলো দেহতে ‘আত্মবোধ’ না করে ‘রামকৃষ্ণবোধ’ করা। এপ্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাবস্থায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশে যা বলেছিলেন তা স্মরণযোগ্য—“(হে কৃষ্ণ!) তুমিই অখণ্ড, তুমিই আবার চরাচর ব্যাপ্ত করে রয়েছ! তুমিই আধার। তুমিই আধেয়! প্রাণকৃষ্ণ! মনকৃষ্ণ! বুদ্ধিকৃষ্ণ! আত্মাকৃষ্ণ! প্রাণ হে গোবিন্দ মম জীবন!”৬৯ তদনুযায়ী আমরাও পুনঃপুন ভাবব, পুনঃপুন ধারণা করার চেষ্টা করব যে, আমাদের দেহের প্রত্যেকটি কোষের মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণ অনুস্যূত হয়ে আছেন; আমাদের প্রাণশক্তি হলেন শ্রীরামকৃষ্ণ; চক্ষু, কর্ণ প্রভৃতি ইন্দ্রিয়গুলিও শ্রীরামকৃষ্ণ। শুধু তাই নয়, আমরা ভাবতে পারি—আমাদের ইন্দ্রিয়ের বিষয়গুলিও শ্রীরামকৃষ্ণ। আমরা চোখ দিয়ে যা দেখি, কান দিয়ে যা শুনি, জিভ দিয়ে যা আস্বাদন করি—সেগুলিও শ্রীরামকৃষ্ণ। মূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর প্রভৃতি দেহস্থ সূক্ষ্ম সাতটি চক্রে শ্রীরামকৃষ্ণ অবস্থান করছেন। আমাদের চেতন, অবচেতন ও অতিচেতন মন শ্রীরামকৃষ্ণ; বুদ্ধি, চিত্ত, অহংকারও শ্রীরামকৃষ্ণ, সর্বোপরি আমাদের আত্মাও শ্রীরামকৃষ্ণ—যাকে লক্ষ্য করে স্বামীজী ‘আত্মারাম’ শব্দটি চয়ন করেছিলেন। এই পদ্ধতিতে আমরা আমাদের সত্তার প্রত্যেক স্তরকে রামকৃষ্ণায়িত করে তুলতে পারি। দীর্ঘদিন আন্তরিকতার সঙ্গে এজাতীয় অনুশীলন জন্ম-জন্মান্তর ধরে আমাদের মনের গভীরে দেহবোধের যে দৃঢ় সংস্কার বর্তমান, তাকে রামকৃষ্ণ-বোধে রূপান্তরিত করবে। সর্বভূতে শ্রীরামকৃষ্ণকে দর্শন শ্রীরামকৃষ্ণ সকল জীবের...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in